বাণিজ্য
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের প্রথম বাজেটের ১০ উল্লেখযোগ্য বিষয়
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ-করা দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি তুলে ধরছে বুম।
দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের পক্ষে অর্থ মন্ত্রীনির্মলা সীতারামন তাঁর প্রথম বাজেট পেশ করেন ৫ জুলাই ২০১৯ তারিখে।
সীতারামন তাঁর বাজেট ভাষণের শুরুতেই ঘোষণা করেন যে, অর্থবর্ষ ২০-তে ভারতের অর্থনীতির আয়তন ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। আর ২০২৪ সালের মধ্যে তা হবে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
ঘোষিত বাজেটের ১০ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল:
১. কর
- আয়করের ধাপগুলিতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। যাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তাঁদের কোনও আয়কর দিতে হবে না।
- ধনী ব্যক্তিদের কর: যাঁদের বছরে আয় ২ কোটি থেকে ৫ কোটি, তাঁদের ক্ষেত্রে সারচার্জ বাড়ছে ৭ শতাংশ। এবং যাঁরা ৫ কোটির বেশি আয় করেন, তঁদের ক্ষেত্রে সারচার্জ বাড়ছে ৩ শতাংশ।
- কর্পোরেট ট্যাক্স: বর্তমানে সবচেয়ে কম ২৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয় সেই সব কোম্পানিকে, যাদের বাৎসরিক বিনিয়োগ ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে। নতুন বাজেটে যে সব কোম্পানির বিনিয়োগ বছরে ৪০০ কোটি টাকা, তারাও ২৫ শতাংশ কর দেবে।
- বিশেষ আবগারি, রাস্তা ও পরিকাঠামো শুল্ক পেট্রোল ও ডিজেলের দামে প্রত্যেকক্ষেত্রে লিটার প্রতি ১ টাকা করে বেড়েছে।
- এখন থেকে আধার অথবা প্যান কার্ড, যে কোনও একটি দিয়েই আয়কর জমা দেওয়া যাবে।
২. জন বরাদ্দ
- ২০২০-অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতির হার ৩.৩ শতাংশে কমিয়ে আনা হবে যা সংশোধিত ২০১৯-অর্থবর্ষে ছিল ৩.৪ শতাংশ।
- মোট বাজেট ধার্য ২৮ লক্ষ কোটি টাকার।
- বর্তমান অর্থনীতির মূল্য ২.৮-ট্রিলিয়ন ডলার। সেটিকে আগামী পাঁচ বছরে তা আনুমানিক ৫-ট্রিলিয়ন ডলার ছোঁবার প্রত্যাশা।
৩. সাধ্যের মধ্যে বাড়ি
- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ): যোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য শৌচালয়, বিদ্যুৎ এবং এলপিজি সংযোগ সমেত ১.৯৫ কোটি বাড়ি নির্মাণের প্রস্তাব।
- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (নগরাঞ্চল): ২৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে; ৪৭ লক্ষ বাড়ি তৈরির কাজ চলছে।
- ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের বাড়ির ক্ষেত্রে সুদের ওপর ৩.৫ লক্ষ টাকা অবধি ছাড়। আগে ছাড়ের সীমা ছিল ২ লক্ষ টাকা।
৪. ব্যাঙ্ক বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধন পুনর্গঠন করতে ৭০,০০০ কোটি টাকার যোগান। এর মধ্যে ৪০,০০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্কগুলির সুস্থায়ী বৃদ্ধির জন্য।
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরনে সরকারের সাফল্য। তাদের সংখ্যা ৮-এ নামানো।
- এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণের জন্য নতুন করে সরকারের চেষ্টা।
- চার বছরে ৪ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ উদ্ধার। এ বছরে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ১.০৫ কোটি টাকা ।
৫. ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ব্যবসা বা স্টার্টআপ
- প্রধানমন্ত্রী কর্ম যোগী মান দান প্রকল্প: পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে ৩ কোটি খুচরো ব্যবসায়ীকে, যাদের বাৎসরিক বিনিয়োগ ১.৫ কোটি টাকার কম।
- ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য বিল মেটানোর বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা।
- প্রথাগত শিল্পী ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করা।
- কৃষিপণ্য উৎপাদকদের জন্য ১০,০০০ নতুন সংগঠন তৈরির প্রস্তাব, যাতে কৃষকরা সহজে বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
- স্টার্টআপ বিক্রির সময় মূলধনী লাভে ছাড়ের সময়সীমা বৃদ্ধি।
- স্টার্টআপের ক্ষেত্রে, ক্যাটেগরি-২ বিকল্প লগ্নি অর্থের নিয়ম অনুসারে, লগ্নিকারীদেরকে দেওয়া শেয়ার মূল্যের ন্যায্যতা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই আর।
- জিএসটি নথিভুক্ত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এই অর্থ বর্ষে নতুন ঋণ নিলে অথবা ইতিমধ্যেই নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ালে, সরকার তাদের সুদের ওপর ২ শতাংশ ছাড় দেবে। তার জন্য বরাদ্দ করা হবে ৩৫০ কোটি টাকা।
- স্টার্টআপদের জন্য দূরদর্শনে চালু হবে বিশেষ চ্যানেল, যাতে তাদের সম্পর্কে খবর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
- সব জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা। মুদ্রা যোজনার অধীনে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতিটি মহিলা সদস্যকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
৬. জন পরিকাঠামো
- রেল স্টেশন আধুনিকীকরনের প্রকল্প শুরু হবে এ বছর।
- রেল ব্যবস্থা
- মফস্সলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য লগ্নির ব্যবস্থা।
- সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ।
- রাস্তা: জাতীয় সড়ক প্রকল্পের সুসংহত পুনর্বিন্যাস
- প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অধীন তৃতীয় পর্বে ১,২৫,০০০ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তার উন্নতি সাধন যার জন্য বরাদ্দ ৮০,২৫০ কোটি টাকা।
৭. শিক্ষা
- দেশে গবেষণার উন্নতিসাধন, তার জন্য অর্থ যোগান এবং সমন্বয় করার কাজ করবে ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এনআরএফ)।
- বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে দেওয়া গবেষণার টাকা এনআরএফ অঙ্গীভূত করবে।
- নতুন যুগের প্রযুক্তি, যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, রবোটিক্স, ৩-ডি প্রিন্টিং-এর জন্য দক্ষতা অর্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব।
- অর্থবর্ষ ২০-তে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
- ‘ভারতে-পড়’ প্রকল্পে আরও বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ করা।
৮. সবুজ প্রযুক্তি/পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
- বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ।
- ব্যাটারি চার্জ করার পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য বিশেষ উৎসাহদানের ব্যবস্থা।
- বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কেনার জন্য ঋণের ওপর সুদ বাবদ ১.৫ লক্ষ টাকা কর ছাড়।
- লিথিয়াম ব্যাটারি ও সৌর চার্জার নির্মাতাদের করের সুবিধে।
৯. লগ্নি
- অসামরিক বিমানচলাচল, মিডিয়া অ্যানিমেশন, মধ্যস্থতাকারী বিমা সংস্থাগুলিতে সরাসরি বিদেশি লগ্নি সহজ করা।
- কিছু বিশেষ কোম্পানিতে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা আরও বাড়ানো।
- স্টক এক্সচেঞ্জে সেবির অধীনে একটি বিশেষ ‘সামাজিক বিভাগ’ খোলা, যাতে বিভিন্ন সংস্থা শেয়ার, ঋণ বা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।
- গুজরাটের বিশেষ ব্যবসায়িক জেলা ‘গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি’ বা গিইএফটি-সিটি-তে অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধে।
১০. মহাকাশ
- ইসরোর ব্যবসায়িক শাখা হিসেবে তৈরি হয়েছে ‘নিউ স্পেস ইন্ডিয়া’। মহাকাশ প্রযুক্তিতে ভারত যে ক্ষমতা অর্জন করেছে তার ব্যবসায়িক ব্যবহারের দিকটা দেখবে ওই সংস্থা।
Next Story