পাক সেনার নির্যাতনের ১০ বছরের পুরনো ভিডিও ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরিদের পেটাচ্ছে বলে শেয়ার করা হচ্ছে
বুম দেখে ভিডিওটি অনলাইনে আসে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে। তালিবানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অত্যাচার করছে পাক সেনা, তেমনটাই জানা যাচ্ছে।

ভিডিওটি ২০০৯ সালের। তাতে দেখা যাচ্ছে, তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নির্মমভাবে অত্যাচার করছে পাক সেনারা। কিন্তু ভারতে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এই দাবি করে যে, ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরি মুসলমানদের মারছে।
দশ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সেনারা নির্বিচারে কিল, চড়, লাথি মারছে দুই ব্যক্তিকে। আর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন এক অফিসার। লোক দু’টিকে বেল্ট আর চাবুক দিয়েও মারতে দেখা যায় সেনাদের।
ওই ভিডিওতে লোক দু’টিকে পস্তু ভাষায় কাকুতি-মিনতি করতে শোনা যায়। ‘তালিবান’ শব্দটিও উচ্চারিত হয় কয়েকবার।
স্পর্শকাতর ভিডিওটির সত্যতা জানতে চেয়ে, সেটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১) পাঠান এক ব্যক্তি।

ভিডিওটি এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “দয়া করে এটিকে সারা বিশ্বে আপনাদের পরিচিতদের কাছে পাঠান, যাতে তাঁরা দেখতে পান যে, ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরের মুসলমানদের নিয়ে কি করছে।”

পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই ক্যাপশন সহ ক্লিপটি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে।

তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে ফ্রেমে ফ্রেমে ভেঙ্গে রাশিয়ান সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্সের সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, ভিডিওটি প্রায় ১০ বছরের পুরনো। অনলাইনে দেওয়া ক্যাপশন থেকে বোঝা যায়, ভিডিওটি পাকিস্তানের।
সতর্কতা: নীচের ভিডিওর দৃশ্যগুলি বেশ বীভৎস
বুম দেখে ইউটিউবে ১৮ অগস্ট ২০১০ সালে একই ধরনের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল। ক্যাপশনে বলা হয়, “পাক সেনা ওয়াহাবি মোল্লাকে শাস্তি দিচ্ছে...দেখা আবশ্যক”।
দশ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটির সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল-হওয়া ক্লিপটি মিলে যায়।
ইউটিউবে দেওয়া বিবরণে বলা হয়, “এটা সোয়াতের ভিডিও। তাতে পাক আর্মি দেওবন্দের বদমাসদের ধোলাই দিচ্ছে। এই লোকগুলো সোয়াতে সেনাদের গলা কেটেছিল। এই লোকগুলোই সারা দেশে নির্দোষদের রক্ত ঝরাচ্ছে। এরাই দেওবন্দের সেই বদমাস যারা সোয়াতে উলেমা ও মাশৈখ দের।”
(ক্যাপশনটি যেমন লেখা ছিল: “ye SAWAT ki video he jisme PAK ARMy DEOBAND k bad maasho ki marammat kar rahe hen.in logo ne SAWAT me ARMY K JAWANO k GALLAY kate thay..yehi log hen jo pore mulk me be gunaho ka khoun baha rahe hen..yehi deoband k BAD MAASH hen jinhone SAWAT me ULMA O MASHAIKH ko.” (sic)।
বেশ কয়েকটি প্রধান শব্দ—যেমন, ‘সোয়াত’ ‘পাকিস্তান সেনা’, ‘ম্যান বিটেন’—ব্যবহার করে গুগুলে সার্চ করা হয়। তার ফলে, ‘আল জাজিরা’ সংবাদ মাধ্যমের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। সেটির শিরোনামে বলা হয়, “ভিডিওতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতন ধরা পড়েছে”। লেখাটি প্রকাশিত হয় ৯ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আখতার আব্বাস জানান যে, ওই নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি উনি। সোয়াত হল পাকিস্তানের পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি জেলা। মে ২০০৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে ‘রাহ-এ-রস্ত’ অভিযান শুরু করে। তার ফলে ওই অঞ্চল দখলে রাখার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তালিবানদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ওই ভিডিওটি সম্পর্কে বিবিসিও রিপোর্ট করে। তাতে বলা হয়, ফুটেজে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর এক ইউনিফর্ম-পরা অফিসারকে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।
“দশ মিনিটের ওই ভিডিওতে, যেটি সোশাল নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে, তাতে পাকিস্তানি সেনাদের সন্দেহভাজন তালিবানদের নির্যাতন করতে দেখা যাচ্ছে,” বলে বিবিসি।