ভাইরাল এক ভিডিওর দাবি—কাশ্মীরের জন্য জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাপারে আমরা যা জানতে পেরেছি
বুম দেখেছে ভিডিওটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হাঙ্গুতে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে তোলা হয়েছে।
একটি সেলফি ভিডিওতে বেশ কিছু তরুণকে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় কোনও চত্বরে সমবেত হতে দেখা যাচ্ছে, যে ছবিটি সোমবার ভারতে টুইটার মারফত ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটির উৎস সন্ধান করতে গিয়ে বুম দেখেছে, এটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হাঙ্গুতে অবস্থিত একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ শিবিরে তোলা হয়েছে।
২৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটির উপরে 'মুজাহিদিন' এবং 'মুজাহিদিন কাশ্মীর' এই শব্দদুটি লেখা রয়েছে। সঙ্গে বাজানো হচ্ছে 'অ্যায় বতন, তেরা ইশারা আ গয়া' গানটি।
শুরুতেই পুশতু ভাষায় একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে—"এরা সকলেই মুজাহিদিন (স্বাধীনতা-সংগ্রামী), যারা কাশ্মীরে গিয়ে জেহাদে যোগ দিতে প্রস্তুত।"
ভিডিওটির শেষে যে লোকটি ছবি তুলছিল, তাকে রাইফেল হাতে এবং কালো ভেস্ট পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি ভারতীয় টুইটার ব্যবহারকারীদের ক্রুদ্ধ করেছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য মেজর সুরেন্দ্র পুনিয়াও এই ভিডিওটি টুইট করেছেন।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
ভিডিও ক্লিপটির প্রথম কয়েকটি ফ্রেমে একজন পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
তা ছাড়াও দেখা যাচ্ছে একটি ট্রাঙ্ক এবং সেই সঙ্গে কিছু লাগেজ, যা থেকে আমাদের ধারণা হয়, এটি পাকিস্তানের কোনও পুলিশ বা সেনা প্রশিক্ষণ শিবিরের ছবি।
বাড়িটাকে চিহ্নত করা
ভিডিওর ক্যামেরা যখন ঘোরে, তখন লাল ও ধূসর রঙের কয়েকটি ইঁটের বাড়ি নজরে পড়ে। লোকেরাও অধিকাংশই প্রথাগত পাঠানি পোশাক বা পাঠানি কুর্তায় সজ্জিত। তাই আমরা আমাদের অনুসন্ধান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটেইই কেন্দ্রীভূত করার সিদ্ধান্ত নিই।
এবং শেষ পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হাঙ্গুতে কোহট রোডের পুলিশ ট্রেনিং কলেজে পৌছায়।
কলেজের ওয়েবসাইটে ইনস্টিটিউটের প্রধান বাড়িটির ছবি স্পষ্ট। ভিডিওটি এই বাড়িরই পিছন দিকে লাগোয়া অন্যান্য বাড়ির সামনে তোলা।
পিটিসি—হাঙ্গু নামে একটি ফেসবুক পেজও বুম খুঁজে পেয়েছে, যদিও পেজটি যাচাই করা নয়।
এরপর আমরা হুপোস্টেডহোয়াট.কম নামে একটি মুক্ত ফেসবুক গ্রাফ সার্চের পেজে গিয়ে 'পিটিসি হাঙ্গু' এই শব্দগুলি সাজিয়ে জানতে চাই, কাদের পোস্টে এই কলেজ বা ইনস্টিটিউটের উল্লেখ রয়েছে।
সেই খোঁজখবরের ফলাফলে জানা যায় নাসারুল্লা খান নামে এক ব্যক্তি মূল ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন।
ভিডিওটি যাঁর তোলা
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর নাসারুল্লা খান ভিডিওটি পোস্ট করেন। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে জুড়ে দেওয়া কথা ও ছবি সহ, তা অবিকল নাসারুল্লার পোস্ট করা ভিডিওটির অনুরূপ।
এখন অবশ্য এই পোস্টটি আর ফেসবুকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
অস্ত্রশস্ত্রের যে ছবি ভিডিওটিতে দেওয়া হয়েছে, তা অনলাইনে এ কে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্রের পরিচিত ছবি।
নাসারুল্লা খানের ফেসবুক প্রোফাইল জানাচ্ছে, তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশের একজন কর্মী।
তাঁর বর্তমান প্রোফাইলের ছবিতে তিনি পুলিশ ট্রেনিং কলেজের উর্দিই পরে রয়েছেন।
বুম এই প্রোফাইলের ছবির সঙ্গে ভিডিওর সেলফিতে তোলা তার ছবির তুলনা করেছে।
নাসারুল্লা তাঁর অহংকার বা ঔদ্ধত্য থেকে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন, নাকি স্রেফ মজা করতে, সেটা স্পষ্ট নয়। কেননা পোস্টের উপর করা একাধিক মন্তব্যে জানা যাচ্ছে, কোনও জেহাদে যোগ দিতে নয়, ওই পুলিশ দলকে ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় মহরমের সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বে নিযুক্ত করার জন্যই জড়ো করা হয়েছে।
সংস্করণ
৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক পেজ পিটিসি—হাঙ্গু বুম-এর জিজ্ঞাসার উত্তরে জানায়, ভিডিওটি ওই কলেজেই তোলা এবং ভিডিওয় দেখা ব্যক্তিরা কেউই সন্ত্রাসবাদী বা জেহাদি নয়, স্রেফ মহরমের জন্য নিযুক্ত হতে যাওয়া পুলিশকর্মী।
"হ্যাঁ, পিটিসি হাঙ্গুতেই এই ভিডিও তোলা হয়েছে এবং এরা কেউ সন্ত্রাসবাদী নয়, সকলেই সৈন্য, যাদের মহরম উল হারামের বিশেষ ডিউটিতে নিযুক্ত করা হচ্ছে।"
অতিরিক্ত প্রতিবেদন স্বস্তি চ্যাটার্জি।