এই দাঁতাল মাছগুলি কী পিরানহা?
"রুপচাঁদা বা পাকু মাছ রক্ষনাত্মক মাংসাশী নয়। সেভাবে দেখলে ভেটকি মাছের চাষও ক্ষতিকারক," বললেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে মানুষের দাঁতের মতো দাঁত সমেত পিরানহা জাতীয় একরকম মাছ পুকুরে চাষ করা হচ্ছে যা খাদ্য হিসাবে গ্রহন করলে ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার বা স্ট্রোক প্রভৃতি রোগ দেখা যায়।
পোস্টগুলিতে লেখা হয়েছে, "#সতর্কতামূলক_পোষ্ট #এই_মাছটি_মাংসাশী । যেখানে পিরানহা মাছ হয় সেখানে একটি মানুষ নামলে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগবে আস্ত মানুষটিকে হজম করতে। বর্তমানে অনেকেই চুপি চুপি এই মাছ পুকুরে চাষ করতেছে। আর সেই ভয়াবহ মাছগুলো ধরতে হয় পুকুরে বিষ ঢেলে। চেনার উপায় সামনের দাঁত গুলো অবিকল মানুষের দাঁতের মত। #খাওয়ার_পর_যেসমস্ত_রোগ_হয়ঃ ১/ফুসফুস ক্যান্সার, ২/ ব্রেন ক্যান্সার, ৩/ স্ট্রোক। যদি কেউ এই মাছ বিক্রি করে, সরকারী বিধি মোতাবেক তাকে জেল, জরিমানা করার বিধান রয়েছে। অথচ প্রকাশ্য পুকুরের চাঁন্দা মাছ বলে সাধারণ জনগণকে ধোকা দিয়ে প্রসাশনের নাকের ডগায় বাজারে এই মাছ বিক্রি হচ্ছে।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পোস্টটির ক্যাপশান সার্চ করলে দেখা যায় একই ছবি ও বক্তব্যের পোস্টগুলি ব্যপাকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যচাই
মাছগুলি বাজারে রুপচাঁদা, রুপচাঁদ মাছ বা পাকু মাছ নামে পরিচিত। লাল পেটের পাকু মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম পিয়ারাকটাস ব্রাঞ্চায়পোমাস (Piaractus brachypomus)
বুমের তরফে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপস কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন—
"রুপচাঁদা বা পাকু মাছ রক্ষনাত্মক মাংসাশী নয়। সেভাবে দেখলে ভেটকি মাছের চাষও ক্ষতিকারক। বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা যেতে পারে।" বললেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
অপরদিকে পিরানহা মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম পাইগোসেন্ট্রাস নাটারেরি (Pigocentrus nattereri) বা লাল পেটের পিরানহা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাংসাশী বা রক্ষনাত্মক বলা হয়। এটি ক্যারিকাসাইডি (caricacidae) ফ্যামিলির অন্তর্গত। সব পিরানহা প্রজাতি রক্ষনাত্মক নয়। নীচে দেখুন বিবসি আর্থের ক্লিপ। অরও পডুন এখানে।
দুটি মাছের দাঁতের আকার ও গঠনে ফরাক রয়েছে। পাকু বা রুপচাঁদা মাছের চোয়ালের গঠন আলাদা। পাকু মাছের দাঁত অনুন্নত, ভোতা, দুই মাড়িতে দুটি স্তরে সাজানো থাকে এবং মোটেই পিরানহা মাছের দাঁতের মত ধারালো এক স্তরের নয়। পাকু মাছের দাঁত মূলত বীজ বা গুগুলি জাতীয় প্রাণীর খোলক ভেঙে খাওয়ার জন্য।
মাছটি সুস্বাদু হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাকু মাছের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশর বেশ কিছু অংশে এর চাষের খবর পাওয়া গেছে। ভারতে মাছ চাষের ছাড়পত্র দেয়- ন্যাশানাল কমিটি টু ওভারসি এবং রেগুলেট দ্য ইন্ট্রোডাকশন অফ এক্সোটিক অ্যাকোয়াটিক স্পিসিস ইন ইন্ডিয়ান ওয়াটার্স। ২০১৮ সালে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লখনৌতে অবস্থিত ন্যাশানাল ব্যুরো অফ ফিস জেনেটিক ব্যুরের তৎকালীন পরিচালক কুলদীপ কে লাল বলেন এপ্রর্যন্ত মিনিস্ট্রি অফ এগ্রিকালচার এখনও এই প্রজাতি চাষের ছাড়পত্র দেয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এন আর চ্যাটার্জী ও বি মজুমদার ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার সম্ভাবনা’র কথা উল্লেখ করেছেন তাদের গবেষণায়। তবে ভারতে কিভাবে এই মাছ এল নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
"মাছের চাষ আসতে আসতে জনপ্রিয় হলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এসব মাছে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হার্টের পক্ষে বরং ভালো বলা যায়। মাছটি সুস্বাদু হওয়ায় ইতিমধ্যে কলকাতার বাজারে ছেয়ে গেছে। দক্ষিন চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিন বঙ্গের অন্যান্য জেলার কোথাও কোথাও চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে। এ মাছ চাষ করলে অন্য প্রজাতি বা জীব বৈচিত্রের ক্ষতি হবে কিনা সে ব্যাপারে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।’’
ড. তাপস কুমার ঘোষে, অধ্যাপক, অ্যাকোয়াকালচার বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়
পোস্টে দাবি করা হয়েছে পাকু মাছ খেলে ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে এর স্বপক্ষে প্রমানিত কোনও গবেষণা পত্র বুম খুঁজে পায়নি।
এমাছ কথনই বিষ প্রয়োগ করে ধরা হয়না যেমনটি ভাইরাল পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে। মাছগুলি চ্যাপটা আকারের হওয়ায় বেশ ছোট আকারেই মাছগুলির ওজন ৪-৫ কিলো হতে পারে। নীচে দেখুন পাকু মাছ চাষের ভিডিও।
পাকু নিয়ে অবশ্য ভিত্তিহীন গুজবের অন্ত নেই। পড়ুন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদন এখানে।