৩৭০ ধারা: ২০১৭ সালের বিক্ষোভকে সাম্প্রতিক বলে চালানো হয়েছে
বুম দেখে যে, বিক্ষোভটি ২০১৭ সালের মে মাসে কাশ্মীরের শ্রীনগরে একটি কলেজের সামনে ঘটে।
কাশ্মীরে বিক্ষোভকারী আর নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে এক সংঘর্ষের ভিডিও এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর কাশ্মীরিদের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তাতে।
ভিডিওটি ১.৫২ সেকেন্ডের। তাতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ করে পাথর ছুঁড়ছে এবং বাহিনী তাদের দিকে গুলি চালাচ্ছে।
ভিডিওটি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ আর টুইটারে শেয়ার করা হচ্ছে।সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “ভারতের মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমগুলি মোদীর ধাপ্পা জোর করে চালাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে যে, কয়েক হাজার বাড়তি সেনা মোতায়েন আর রাজ্যটিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ব্যবস্থাকে কাশ্মীরিরা স্বাগত জানিয়েছে। কাশ্মীরে ভারতীয় অত্যাচারের কথা সারা বিশ্ব জানে।”
একজন স্বাধীন বা ফ্রিলান্স সাংবাদিক, সি জে ওয়েরলেম্যান, সেপ্টেম্বর মাসে ভিডিওটি টুইট করেন। তবে খুব তাড়াতাড়ি উনি সেটি ডিলিটও করে দেন। কিন্তু উনি তাঁর টুইটে ভিডিওটির সঙ্গে যে ক্যাপশন ব্যবহার করেছিলেন, সেটিই এখন ভাইরাল-হওয়া ভিডিওটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি সমেত তাঁর টুইটটি এখন হোয়াটস্যাপে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ করে যে, ভাইরাল ভিডিওতে রাশিয়ান ভিডিও সংবাদ সংস্থা ‘রুপ্টলায়’-এর চিহ্ন রয়েছে। ‘রুপ্টলায় প্রোটেস্ট ইন শ্রীনগর’ — এই শব্দগুলি দিয়ে গুগুলে সার্চ করলে দেখা যায়, ওই সংস্থাটির ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিওটি ১৭ মে ২০১৭’য় আপলোড করা হয়। তার শিরোনামে লেখা হয়, ‘ইন্ডিয়া: শ্রীনগরে সাম্প্রতিকতম প্রতিবাদের সময় পুলিশ আর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ’। ক্যাপশনে বলা হয়, “সোমবার কাশ্মীরের শ্রীনগরে একটি কলেজের সামনে পুলিশ আর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড এবং রবার বুলেট ব্যবহার করে। অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর আর পুলিশেরই ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের খোল ছুঁড়তে থাকে।”
রুপ্টলায়ের ভিডিও থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, ‘প্রোটেস্ট আউটসাইড কলেজ শ্রীনগর’ (শ্রীনগর কলেজের সামনে বিক্ষোভ), এই নির্দিষ্ট শব্দগুলি দিয়ে গুগুল সার্চ করা হয়। জানা যায় যে, ২০১৭ সালে শ্রীনগরের এসপি কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
স্থানীয় প্রথম সারির দৈনিক ‘গ্রেটার কাশ্মীর’-এর এক রিপোর্টে বলা হয়, “বিগত কয়েক সপ্তাহে পুলিশের দ্বারা ছাত্রদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে, সোমবার এসপি কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায়। তারা ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন ছাত্ররা এমএ রোডের দিকে যেতে গেলে, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের রাস্তায় নামা বন্ধ করার চেষ্টা করে। আর তখনই সংঘর্ষ বেধে যায়।”
বুম লক্ষ করে যে, ভিডিওটিতে ২০ সেকেন্ডের মাথায়, একজন পুলিশ অফিসার আহত হলে, তাঁকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখা যায় যে তিনি তাঁর কপালে রুমাল চাপা দিয়ে আছেন।
বেশ কয়েকটি মিডিয়া সংস্থা খবরটি রিপোর্ট করে। ‘কাশ্মীর: শ্রীনগরের মগমে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে আহত পুলিশ’ এই শিরোনামে ‘মুম্বাই মিরর’ ঘটনাটি রিপোর্ট করে ১৭ মে ২০১৭’য়। পুলিশ বলে, “একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে”।
‘গ্রেটার কাশ্মীর’ তাদের রিপোর্টে বলে, “সংঘর্ষের মধ্যে, ক্রালখুদ পুলিশ স্টেশনের স্টেশন হাউস অফিসারের মাথায় পাথর লাগায়, উনি জখম হন। ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে”।