পাকিস্তানের মন্ত্রী বুরহান ওয়ানির শেষকৃত্যের দৃশ্যকে ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রতিবাদের ছবি বলে টুইট করেছেন
ভিডিওটি আসলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত জঙ্গি বুরহান ওয়ানির অন্তিম যাত্রার ছবি।
পাকিস্তানের নৌ বিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার জাইদি শুক্রবার বুরহান ওয়ানির শেষকৃত্যের একটি পুরনো ভিডিও টুইট করে দাবি করেছেন, এটা নাকি কাশ্মীরে ভারত সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লক্ষ-লক্ষ কাশ্মীরির জমায়েতের ছবি।
জাইদির টুইট করা ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি একটা বিশাল খোলা মাঠে জমায়েতের ছবি, ওপর থেকে তোলা। ভিডিওর মূল কথাগুলির ওপর 'জঙ-এ-আজাদি' নামে একটা গান জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী মহোদয়ের টুইটে লেখা, "লক্ষ-লক্ষ নরেন্দ্র মোদী সরকারের ৩৫-এ ধারা বিলোপের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কাশ্মীরকে মোদীর হাত থেকে রক্ষা করুন।"
এই লেখার সময় পর্যন্ত ৫০ হাজার বার টুইটটি দেখা হয়েছে এবং ৫ হাজার জন তাতে 'লাইক' দিয়েছে।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
দাবিটি খুবই গোলমেলে, কারণ কাশ্মীরে এখন ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ, বিপুল সংখ্যক সেনা ও আধা-সেনা সর্বত্র মোতায়েন, এবং পাঁচজন বা তার বেশি সংখ্যায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
বুম ২০১৮ সালের একটি ইউ-টিউব ভিডিও সংগ্রহ করেছে, যার শিরোনাম 'বুরহান ওয়ানির অন্তিমযাত্রা।' ওই ভিডিও থেকেই জাইদির টুইটটি তুলে আনা হয়েছে। ভিডিওটি নীচে দেখুন (০.১৩ থেকে ০.৪০ পর্যন্ত)
via ytCropperএই ভিডিওটি আপলোড হওয়ার দু'বছর আগেই যেহেতু বুরহান ওয়ানি নিহত হয়েছিলেন, তাই আমরা আরও পুরনো ভিডিওর খোঁজ করি।
এবং একই কোণ থেকে তোলা ২০১৬ সালের অক্টোবরের একটি ভিডিও আমাদের নজরে আসে।
এটি ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর আপলোড হয়, যার শিরোনাম ছিল—'কাশ্মীরের ত্রাল-এ বুরহান ওয়ানির শেষযাত্রায় জনসমুদ্র'
মন্ত্রী মহাশয়ের টুইটে ব্যবহৃত ভিডিও এবং ইউ-টিউবে আপলোড হওয়া ভিডিওর ফ্রেমগুলি পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে স্পষ্ট, দুটি একই জায়গা থেকে তোলা। দুটি ভিডিওর ফ্রেমেই একটি গাছের গুঁড়ি এবং একটি হলুদ ছাতা একই স্থানে রয়েছে দেখা যায়।
হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার বুরহান ওয়ানি ছিলেন কাশ্মীরে জঙ্গি অভ্যুত্থানের 'পোস্টার বয়'। ২২ বছর বয়স্ক এই তরুণ জঙ্গি উপত্যকার জনমানসে একটা উপকথায় পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ৮ জুলাই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার কোকেরনাদে ওয়ানি তাঁর দুই সহযোগী সহ ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত হন। তাঁর মৃত্যু গোটা উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরও অনেক সংঘর্ষের স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে।
ত্রাল এলাকায় তাঁর অন্ত্যেষ্টির সময় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সমবেদনা ও শোকের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সমবেত জনসমুদ্র থেকে ভারত-বিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী স্লোগানও তোলা হয়।