শিল্পীর তৈরি আইএসআইএস-এর হাতে বন্দি যৌন কৃতদাসের ছবি মিথ্যে বিবরণ সমেত ভাইরাল
পেশাদার শিল্পী নাদিয়া বাশার-এর একটি ছবি, যেটি নারী অধিকার সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটি মুসলমান-বিরোধী ক্যাপশন সমেত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/05/nadia-1.jpg)
ছবিটি দু বছরের পুরনো। সেটি এক শিল্পীর তৈরি, যাতে ইসলামিক স্টেটের হাতে এক ইয়াজেদি মহিলার যৌন কৃতদাস হিসেবে তাঁর বন্দিদশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেটি এক মিথ্যে মুসলমান-বিরোধী বিবরণ সমেত ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মার্চ ৮, ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সচেতনতা বাড়াতে ছবিটি ব্যবহার করা হয়।
কালো পোষাক-পরা ও চেন দিয়ে বাঁধা মহিলার ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়েছে: “এই ইয়াজেদি মহিলার দাম মাত্র ১০ ডলার (ড্রামের ওপর দাম লেখা আছে)। লুট-করা জিনিসের দাম খুব কম হয়। মনে করুন উনি আপনার বোন বা মেয়ে…হিন্দুগন, আপনারা যদি এখনও না বোঝেন, তা হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে…বাংলার জেলা বা আলওয়ার থেকে অপহরণ করা আপনার মেয়েরা কোথায় হারিয়ে যায়, তা কেউ জানে না।’
(হিন্দিতে লেখা: मात्र 10 $ में इस यज़ीदी औरत का रेट ।(ड्रम के ऊपर रेटलिस्ट लिखी हुई हैं )
लूट का माल बहुत सस्ते में । सोचो अगर ये हमारी बहन या बेटी होती तब ..!
हिन्दुओ ! अगर अब भी नही सम्भले तो कुछ भी हो सकता हे.. बंगाल,अलवर के कुछ जिले वहाँ आपकी बेटीयाँ अपहरण करके कहां जाती है कोई पता नही चलता)।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/05/nadya-bashar-700x501.jpg)
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে এবং পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে। ছবিটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/05/viralonfb-3.jpg)
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/05/viralonfb2.jpg)
তথ্য-যাচাই
ভাইরাল ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বুম। দেখা যায় অন্যান্য ছবি সমেত ওই একই ছবি ২০১৭’য় ট্যুইট করা হয়েছিল। তা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ছবিটি সাজিয়ে তোলা হয়েছিল।
ট্যুইটে বলা হয় ছবিটির জন্য নাদিয়া বাশার ভঙ্গমা দেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আইএসআইএস-এর হাতে যৌন কৃতদাস হিসেবে বন্দি ইয়েজেদি মহিলাদের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলায় ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
বাশারের ফেসবুক প্রোফাইলে তাঁকে একজন ‘পারফর্মিং আর্টিস্ট’ বা পেশাদার শিল্পী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/05/nadiafb-700x497.jpg)
ভাইরাল হওয়া ছবিটি আমরা বাশারের ফেসবুক টাইমলাইনেও দেখতে পাই।
এই তথ্য-যাচাই প্রকাশিত হওয়ার পর, বাশার বুমের লেখাটি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন এবং পুনরায় জানান যে, ছবিটা সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।
আইএসআইএস ও নারী নির্যাতন
আইএসআইএস খুব পরিকল্পিতভাবেই ধর্ষণ আর যৌন কৃতদাসপ্রথা তার যোদ্ধাদের পুরস্কৃত করার জন্য ব্যবহার করে। এবং ইরাক ও সিরিয়াতেও ব্যবহার করে ‘কাফের’ বা বিধর্মীদের সাজা দেওয়ার উপায় হিসেবে। ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নারী পাচারের মাধ্যমে খিলাফতের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। (সূত্র: ধর্ষণ ও কৃতদাসপ্রথা ইউকে-তে যৌন হিংসার হিস্ট্রি আছে এমন আইসিস যোগদানকারীদের ক্ষেত্রে টোপ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে )। ধর্ষণ আর যৌন অত্যাচারের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, ইউএন উইমেন-এর মতে, প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তেমন ঘটনার সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে বলে মনে করা হয়।
ইয়েজেদিরা হল কুর্দভাষী এক ছোট ধর্মীয় গোষ্ঠী। তারা জঘন্যতম যুদ্ধ অপরাধের শিকার। ইসলামিক স্টেট, উত্তর ইরাকে, ২০১৪ থেকে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, বন্দি করে কৃতদাসে পরিণত করেছে এবং ধর্ষণ করেছে। আর ইয়েজেদিদের তারা খতম করার চেষ্টা চালিয়েছে কারণ তারা ইয়েজেদিদের শয়তানের পূজারী বলে মনে করে।
বুম আগেও এরকমেরই একটি তথ্য-যাচাই করেছিল। যখন আইএসআইএস-এর হাতে বন্দি মহিলাদের চরম দুরাবস্থা সম্পর্কে এক পথনাটিকা হয়েছিল। তার একটি দৃশ্যকে লন্ডনে নিলামে নারী কেনা-বেচার আসল ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। (ইসলামিক স্টেট কি লন্ডনের রাস্তায় নিলামে নারী কেনা-বেচা করেছে?)
(এই প্রতিবেদনটি নাদিয়া বাশারের মন্তব্য সহ সংস্করন করা করা হয়েছে)