বারাসাতের তিতুমীর বাস স্টপের নামকরণ তৃণমূল করেনি
রাজ্য সরকার সূত্রে জানা গেছে, বারাসাতের তিতুমীর বাস টার্মিনালটি ১২ বছর আগে সিপিআই (এম) এর সময় গঠন হয়
১৭ ডিসেম্বর পানিখালি বিজেপির একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দাবি করে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেশ কয়েকটি বাস স্টপের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোস্টটিতে উল্ল্যেখ করা আছে যে সম্প্রতি ‘তিনি হলদিরাম বাস স্টপের নাম পাল্টে হজ বাস টার্মিনাস রেখেছেন এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের বাস টার্মিনাসের নাম পাল্টে তিতুমীর বাস স্টপ রাখা হয়েছে।‘ শুধু এই নয় – পোস্টে এইটাও উল্ল্যেখ করা আছে যে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর একটি স্টেশনের নাম তিতুমীর দেওয়া হবে।
পোস্ট টি এক ঝলক এখানে দেখে নিন।
“কিন্তু কি কারণে, কাদের খুশি করতে এই নতুন নামকরণ তা অজানা থেকেই গেলো। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসাতের চাঁপাডালি মোড়ে দীর্ঘদিন থেকেই একটি বাস ডিপো ছিল। ওখান থেকেই জেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার বাস ধরতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নামকরণ করা হয়। তবে এই নতুন নামকরণ নিয়ে সুশীল সমাজের অনেকেই আপত্তি জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তিতুমীরের মতো চরম হিন্দুবিরোধী একজন ব্যক্তির নামে কি করে বাস-টার্মিনাসের হতে পারে। সেই সঙ্গে পুরোনো নামও ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা।"
পোস্টে হিন্দু সংহতির সভাপতি শ্রী দেবতনু ভট্টাচার্যের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "আজ সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নাম পরিবর্তন করা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে, প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু একইরকমভাবে পশ্চিমবঙ্গেও নাম পরিবর্তন চলছে, তবে তা চুপিসারে। এমনকি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে সংবাদপত্র কোথাও সেই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে না।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, "পশ্চিমবাংলার এই নিঃশব্দ ইসলামীকরণের প্রতিবাদে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদেরও এগিয়ে আসা উচিত।"
তিতুমীর কে ছিলেন?
সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর একজন ইসলামিক প্রচারক ছিলেন, যিনি ১৯ শতকের সময় ব্রিটিশ ভারতের জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। তাঁর অনুগামীদের পাশাপাশি তিনি নরকেলবারিয়া গ্রামে একটি বাঁশের দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৮২২ সালে, তিতুমীর মক্কা তীর্থযাত্রায় চলে যান। ১৮২৭ সালে মক্কা থেকে ফেরার পথে তিতুমীর উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ায় মুসলমানদের মধ্যে প্রচার শুরু করেন। ১৮ নভেম্বর ১৮৩১ এ তিনি মারা যান।
তথ্য যাচাই
রাজ্য সরকার সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের তিতুমীর বাস টার্মিনালটি ১২ বছর আগে সিপিআই (এম) এর সময় গঠন করা হয়েছিল। উইকিপিডিয়ার মতে, বারাসাতের তিতুমীর বাস টার্মিনাল (বিটিবিটি),আন্তঃচঞ্চল এবং স্থানীয় বাসগুলির প্রধান গেটওয়ে। এটি পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত। পূর্বে এটি চাপাডালি বাস স্ট্যান্ড হিসাবে পরিচিত ছিল। বাস টার্মিনালটি যশোর রোড এবং টাকি রোডের একটি জংশনের কাছে প্রধান বারাসাতে অবস্থিত।
বাস টার্মিনালটি ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তে নির্মিত হয়। সুভেন্দু অধিকারি, রাজ্য সরকার পরিবহন মন্ত্রী বলেন, "আমরা এখনো কোনো বাস টার্মিনাস পুনঃনামকরণ করিনি। এমনকি বাংলায় যেকোনো এলাকায় বাস টার্মিনাল পুনর্নির্মাণের জন্য বিলটিও সংসদ অধিবেশনে রাখা হয়নি। ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টটির ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। আমরা আমাদের সাইবার সেল বিশেষজ্ঞদেরকে বলব এই বিষয়ে নজর দিতে । "
বুমলাইভ তদন্তের পর জেনেছে যে নীল পোষ্টারটি তিতুমীর বাস স্ট্যান্ড গেটের প্রধান প্রবেশদ্বার এবং পোস্টারটি সেপ্টেম্বরে মমতা ব্যানার্জির একটি সমাবেশের সময় লাগানো হয়।
বারাসাত শহরের স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ অধিকারী জানান, “তিতুমীর বাস স্ট্যান্ডটির নাম তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার কর্তৃক পুনরুজ্জীবিত করা হয়নি। সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার বারাসাত প্রধান বাস স্টপেজ নামকরণ করে এবং তখন থেকে এটি তিতুমীর বাস টার্মিনাল নামে পরিচিত।“
এমনকি হিন্দু সংহতির ব্লগও উল্ল্যেখ করেছে যে হলদিরাম বাস স্টপ নামটি হজ বাস স্টপে পরিবর্তিত হয়েছে।
হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবাতনু ভট্টাচার্য বলেন, "পাবলিক সচেতনতার পর নামটি হালদিরাম বাস স্টপে পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা আমি জানি না। আমাকে চেক করতে হবে। কিন্তু টিএমসি সরকার হলদিরাম বাস স্টপের নাম বদলে হজ বাস স্টপ করেছিল এবং এজন্যই আমি হিন্দু সংহতি ব্লগটিতে উল্ল্যেখ করেছি। "
সুভেন্দু অধিকারি জানান, “এপ্রিল ২০১৮ সালে কোলকাতা পৌর বিভাগ একটি বাস স্ট্যান্ড তৈরি করে এবং এটি 'হজ হাউস বাস স্টপ' নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে নিত্যযাত্রীদের প্রতিবাদে অবশেষে বাস স্টপের নাম পরিবর্তন করা হয় এবং বর্তমানে নাম হল হলদিরাম বাস স্টপ।“