ব্রাজিলের একটি শিরোচ্ছেদের ঘটনা ছড়ানো হচ্ছে রাজস্থানে সাম্প্রদায়িক হিংসার নমুনা হিসাবে
ভিডিওটি ২০১৮ সালের একটি ঘটনার, যখন ব্রাজিলীয় এক কিশোরীকে তার বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা ছুরিকাহত ও শিরোচ্ছেদ করেছিল।
ব্রাজিলে এক কিশোরীকে প্রথমে ছুরিকাহত ও পরে মুণ্ডচ্ছেদ করার দৃশ্য-সম্বলিত একটি অস্বস্তিকর ভিডিও রাজস্থানে মুসলিমদের হাতে এক হিন্দু নারীর হত্যার ঘটনা বলে ভুয়ো দাবি জানিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপটিতে দুটি লোককে এক মহিলাকে ছুরি মারার এবং মুন্ডু কেটে ফেলার কাজে লিপ্ত দেখা গেছে। বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) ভিডিওটি পাঠিয়ে কেউ-কেউ জানতে চেয়েছে, এর ব্যাখ্যাটি যথাযথ কিনা।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখাঃ “রাজস্থানে একটি হিন্দু মেয়েকে কিছু মুসলমান ছেলে তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের বাড়িতে ধর্ষণ করে এবং তার পর অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে। পুলিশ কিছুই করছে না, কারণ ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।”
তথ্য যাচাই
ভিডিওয় দেখানো ঘটনাটি ব্রাজিলের, যেখানে ডেবোরা বেস্সা নাম্নী ১৯ বছরের এই মেয়েটিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চালান চক্রের দুষ্কৃতীরা হত্যা করে।
গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটি নিখোঁজ ছিল এবং অবশেষে ব্রাজিলের রিও ব্রাঙ্কো অঞ্চলের একটি জঙ্গলে তার মৃতদেহ দেখতে পায় তার ২১ বছর বয়সী দিদি সারা ফ্রেইটাস ফ্রিস্সা ও অন্যান্য আত্মীয়রা এবং ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্লোবো মিডিয়া মারফত সেটির কথা প্রকাশ করে।
গ্লোবো সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্রাজিলের রিও ব্রাঙ্কোর পুলিশ মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিওটি তদন্তের স্বার্থে ব্যবহার করে অপরাধীদের খুঁজে পায় এবং অপরাধে লিপ্ত থাকার দায়ে ৫ জনকে গ্রেফতারও করে। তদন্তকারী অফিসার ক্রিস্তিয়ানো বাস্তোসকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ধৃতদের মধ্যে দুজনকে হাতে-কলমে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর জন্য এবং বাকি তিনজনকে ঘটনাটির ভিডিও তোলার জন্য পাকড়াও করা হয়েছে।
মহিলার মুণ্ডচ্ছেদ করায় অন্যতম অভিযুক্ত আন্দ্রে ডিসুজা মার্টিন্স (২৮) জানায়, সে প্রতিশোধ নিতে এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে, যেহেতু, তার মতে, ২০১৩ সালে তার ভাইয়ের খুনের ঘটনায় এই মহিলা যুক্ত ছিল।
“ডেবোরা প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সদস্যা এবং এমন আভাস আছে যে, যারা তাকে হত্যা করে, তাদের গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে খুনোখুনিতে সে অংশগ্রহণ করেছিল”, জানালেন রাজ্য সরকারের জন-নিরাপত্তা দফতরের সচিব এমিলসন ফারিয়াস।
২০১৮ সালের এপ্রিলেও ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছিল
২০১৮-র এপ্রিল থেকেই নানারকম ভুয়ো ব্যাখ্যা জুড়ে এই একই ভিডিও শেয়ার হয়ে চলেছে। গত বছর এপ্রিলেই অনিল কাপুরের একটি ভুয়ো টুইটার অ্যাকাউন্ট এটিকে অন্ধ্রপ্রদেশে এক মুসলিম স্বামীর হাতে এক হিন্দু স্ত্রীর নিধন হিসাবে ভিডিওটি শেয়ার করেছিল।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিলেই অবশ্য এসএম হোক্সস্লেয়ার এই ভুয়ো ভিডিওটি খন্ডন করেছিল।