সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে বিহারে গণপিটুনির ঘটনা সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হল
বুম অনুসন্ধান করে দেখতে পায় যে ঘটনাটি বিহারের। সেখানে সাদাব কামিল নামে এক ব্যক্তি ভুলবশত গণপিটুনির শিকার হয়। চোর ভেবে লোকে তাকে মারধর করে।
চোর সন্দেহে এক ব্যক্তির গণপিটুনির শিকার হওয়ার বীভৎস ছবি টুইটারে মিথ্যে সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের সঙ্গে শেয়ার করা হল। আসলে ওই ব্যক্তিকে লোকে ভুল করে চোর ভেবে মারধর করে।
এই লেখাটি শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় ৬৮০০ বারের বেশি এই ছবিটি রিটুইট করা হয়েছে। ছবিটিতে এক জন আহত ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, যার চার পাশে বহু লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। টেলিভিশন অভিনেতা আজাজ খান ছবিটি শেয়ার করেছেন এবং মিথ্যে দাবি করেছেন যে ঘটনাটি মহুয়ায় ঘটেছে। তিনি দাবি করেছেন যে এক জন মুসলিম শিক্ষককে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। তিনি এই ভিড়কে “ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী” বলে বর্ণনা করেছ্বেন।
টুইটটিতে লেখা হয়, “বিহার: মহুয়ায় মারমুখী জনতা এক জন মুসলিম শিক্ষককে অমানবিক ভাবে মারধর করেছে। কামিলকে মৃত মনে করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু কামিল তখনও বেঁচে ছিলেন। কেউ এই মারমুখী জনতাকে আটকাতে পারেনি। সরকারের এদের থামানোর সদিচ্ছা নেই। এমনকি এদের শাস্তি দেওয়ার জন্য কোনও আইন, আদালত বা সংবিধান নেই।”
(মূল হিন্দিতে পোস্টটি: बिहार: महुआ में आतंकी भीड़ ने एक और मुस्लिम शिक्षक अबु कामिल को बुरी तरह पीटा, पीटने के बाद मरा हुआ समझकर कामिल को फेंक दिया था, मगर कामिल ज़िंदा हैं! इस खूनी आतंकी भीड़ के आतंक को रोकने के लिऐ न सरकार के पास नियत है, ना कोई कानून है, ना अदालत है, ना संविधान है, ना कोई सज़ा है!)
খানের টুইটের উত্তরে দিল্লি হাইকোর্টের উকিল প্রশান্ত প্যাটেল উমরাও আবার একটি অন্য ভূয়ো ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন যে একটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য ওই আহত ব্যক্তির নিজের সমাজের লোকেরা তাকে আক্রমণ করে। বুম এর আগে প্যাটেলের বক্তব্যের তথ্য যাচাই করেছে।
এই একই ছবি টুইটারে আরও এক জন শেয়ার করেছেন এবং তিনি ওই ব্যক্তিকে সাদাব বলে শনাক্ত করেছেন। পরে অবশ্য আক্রমণকারীদের হিন্দু বলে মিথ্যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকেও এই একই ছবি একই বক্তব্যের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছে যে উমরাও এবং খান দুজনের বক্তব্যই বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যে। উমরাও-এর টুইটের উত্তরে এক জন টুইটার ব্যবহারকারী আজ তক নিউজ বুলেটিনের একটি খবর শেয়ার করেছেন। সেই টুইটটি থেকে জানা গেছে যে ঘটনাটি বিহারের বৈশালীতে ঘটে।
আজ তক-এর ওই প্রতিবেদন অনুসারে সাদাব কামিল পাটনার একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। তিনি যখন বৈশালীতে তার বাড়িতে ফিরছিলেন তখন তিনি ডাকাতির শিকার হন এবং তাকে মারধর করে রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা সেই সময় তাঁকে ভুল করে চোর ভেবে মারধর করে। তাতে তিনি আরও আহত হন।
এই ঘটনাটি দৈনিক ভাস্করের হাজিপুর সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে কামিল যখন বৈশালীর শঙ্করপুর অঞ্চলে ফিরছিলেন তখন তিনি একটি গাড়িতে লিফট নেন। লুঠতরাজ করে, তাকে মারধর করা হয় এবং ভোজপট্টি গ্রামের কাছে ফেলে দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীরা সেই সময় ভুল করে কামিলকে চোর ভেবে মারধর করে তিনি তাতে আরও আহত হন। মহুয়া পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
আজাজ খানের দাবির উপর ভিত্তি করে বুম মুহুয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। মুহুয়া থানার হাউজ অফিসার উদয় শঙ্কর জানান যে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িত নয়। শঙ্কর বলেন, “এই সব দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িত নয়।”
অল্ট নিউজ এর আগে এই ভাইরাল হওয়া টুইটটিকে মিথ্যে বলে প্রমাণ করেছে।