বিজেপির ইস্তাহারঃ জাতীয় নিরাপত্তা, রামমন্দির, সাবরিমালা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ
ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপি ৬টি প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকার করেছে
যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে আর ৭২ ঘন্টাও বাকি নেই, তখনই সোমবার ভারতীয় জনতা পার্টি তার ৪৯ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইস্তাহার ‘সংকল্পপত্র’ প্রকাশ করলো ।
ইস্তাহারে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিন্দুমাত্র নমনীয়তা না দেখানোর নীতি থেকে শুরু করে ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি । রামমন্দির এবং সাবরিমালার মতো ইস্যুগুলোও ইস্তাহারে স্থান করে নিয়েছে ।
ক্ষমতায় ফিরলে যে ৬টি প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকার ইস্তাহারে রয়েছে, সেগুলি দেখা যাক—
১) সবার উপরে জাতীয়তাঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল থেকে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা এবং জাতীয় নাগরিকত্ব নথি কার্যকর করা ।
জাতীয় নিরাপত্তাকে বিজেপি সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে । এই উদ্দেশ্যে ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের সার্জিকাল স্ট্রাইকের উল্লেখ করে উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের প্রতি অনমনীয় অবস্থান ঘোষিত হয়েছে ।
দল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কার্যকর করা এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করতে সংবিধানের ৩৫/ক অনুচ্ছেদ রদ করতে দায়বদ্ধ । বিজেপির দাবি, এই অনুচ্ছেদ জম্মু-কাশ্মীরে বসবাসকারী অস্থায়ী বাসিন্দাদের প্রতি এবং মহিলাদের প্রতিও বৈষম্যমূলক।
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশের অন্যান্য অংশে দফায়-দফায় নাগরিকদের জাতীয় রেজিস্টার চালু করার ব্যাপারেও বিজেপি বদ্ধপরিকর ।
২) কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা
২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার আশ্বাস দিয়েছে বিজেপি । উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও বিজেপি এই একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বিনা সুদে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষি-ঋণ দেবার আশ্বাসও ইস্তাহারে দেওয়া হয়েছে, যদি ঋণের আসলটা শোধ করে দেওয়া হয় । কৃষকদের জন্য একটি পেন্সন প্রকল্প চালু করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে । এ জন্য প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনাকে সব কৃষকদের জন্য সম্প্রসারিত করার আশ্বাসও রয়েছে ।
৩) ২০৩০ সালে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি
বিজেপি দেশের অর্থনীতির জন্য যে দিশা বাতলেছে, তার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনীতির আয়তনে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে উন্নীত করা । ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছে দেওয়াই দলের অভিপ্রায় ।
আর্থিক নীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবের মধ্যে আছে করের হার কমানো, জিএসটি-র সরলীকরণ এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১০০ লক্ষ কোটিতে নিয়ে যাওয়া ।
৪) রামমন্দির
রামমন্দিরের ইস্যুটিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শিরোনামের অধীনে রাখা হয়েছে । এই প্রশ্নে দল তার পুরনো অবস্থানেরই পুনরুচ্চারণ করে বলেছে, সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য সবরকম বিকল্প খতিয়ে দেখা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে ।
সাবরিমালা
সাবরিমালা প্রশ্নে কেবল বলা হয়েছে—সাবরিমালা নিয়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং পূজার্চনার পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়গুলি সুসংহতভাবে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে দল পেশ করেছে ।
৫) ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য পাকা বাড়ি
যে সব পরিবার মাটির বাড়িতে থাকে কিংবা যাদের ঠিকমত বাসস্থান নেই, তাদের সকলের জন্যই ২০২২ সালের মধ্যে পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে এবং দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষদের সংখ্যা ও শতাংশ বিপুলভাবে হ্রাস করা হবে বলে ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ।
এটা ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুরু করা সকলের জন্য বাসস্থান পরিকল্পনারই অনুসারী ।
ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য নাগরিক পরিকাঠামোর বিকাশের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ।
৬) তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা
‘যুব ভারত—আগামীর ভারত’, এই শিরোনামে ইস্তাহারে দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য অর্থনীতির চালিকা ক্ষেত্রগুলিতে কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ বৃদ্ধি করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ।
বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বা ঘরোয়া বাজারে এবং বৈদেশিক বাজারেও প্রতিরক্ষা এবং ওষুধপত্র তৈরির মতো ক্ষেত্রগুলিতে যত দূর সম্ভব কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে । স্বাধীন ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং ‘স্টার্ট-আপ’ ক্ষেত্রকে চাঙা করতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গড়ার আশ্বাসও ইস্তাহারে দেওয়া হয়েছে ।সমগ্র ইস্তাহারটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।