কর্নাটক বিজেপির ভুয়ো চিঠি টুইট করে দাবি, সনিয়া গান্ধী লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ঘটাচ্ছেন
২০১৮ সালেই বুম এই ভুয়ো চিঠিটির পর্দাফাঁস করেছিল l কর্নাটক বিজেপির সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সেই চিঠিটি জিইয়ে তুলে এখন অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সনিয়া গান্ধী এবং এম বি পাটিল নাকি হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছেন l
ভারতীয় জনতা পার্টির কর্নাটক শাখার অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল মঙ্গলবার একটি ভুয়ো চিঠি টুইট করে দাবি করেছে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম বি পাটিল এবং কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী ভোট পাওয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চাইছেন । ২০১৮ সালে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই একই চিঠি হোয়াট্স্যাপে ভাইরাল হয়েছিল । ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট পোস্টকার্ড নিউজ এই বিষয়ে খবর প্রচার করার পর বুম ওই ভুয়ো চিঠিটির পর্দাফাঁস করেছিল, যার পরে ওয়েবসাইটটি খবরটি মুছে দেয় ।
টুইট করা ভুয়ো চিঠিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছেঃ “কংগ্রেস উন্মোচিত । সমগ্র লিঙ্গায়ত ও বীরশৈব সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিভাজনটা সনিয়া গান্ধীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে পরিকল্পিত হয়েছিল । সনিয়াকে লেখা এম বি পাটিলের চিঠিটাই দেখিয়ে দিচ্ছে, কী ভয়ংকরভাবে সনিয়া কর্নাটকের হিন্দু সমাজে ভাঙন ধরাতে চেষ্টা করেছিলেন ।”
টুইটটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন এবং তার আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ।
২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল কন্নড় দৈনিক বিজয়বাণী সনিয়া গান্ধী এবং এম বি পাটিলের ছবি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই কর্নাটক বিজেপির তরফে টুইটটি ছাড়া হয় । বিজয়বাণী সংবাদপত্রের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ওই ভুয়ো চিঠিটাও ছাপা হয় ।
গোটা পৃষ্ঠা জুড়ে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেওয়া হয়ঃ “আবার এম বি পাটিল আগুন জ্বালাবার খেলায় মেতেছেন l” তার পরেই লেখা হয়, “লোকসভা নির্বাচনের মুখে লিঙ্গায়তদের সমর্থনের প্রশ্নে কংগ্রেস অসহায় বোধ করছে” । প্রতিবেদনে পাটিলের একটি ছবি ছেপে প্রশ্ন তোলা হয়, “পাটিল কি এ ব্যাপারে সনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন?”
প্রতিবেদনে পাটিলের একটি আগেকার কৈফিয়তও প্রকাশ করা হয়, যাতে তিনি বলছেন—“এ ধরনের কোনও চিঠিই তিনি লেখেননি, চিঠিটা সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং এটা নিয়ে তদন্ত চালানো হবে”। এর পরই প্রতিবেদনে বলা হয়, “যেহেতু কোনও তদন্তই করা হয়নি, তাই ধরে নেওয়া যায় যে চিঠিটি সম্ভবত সত্যি ।”
কর্নাটক বিজেপি তার টুইটের সঙ্গে এই প্রতিবেদনটির অনলাইন সংস্করণও জুড়ে দেয় ।
২০১৮ সালেই কর্নাটকের বিধানসভার নির্বাচন আসন্ন হয়ে উঠলে এই চিঠিটি হোয়াট্স্যাপে ভাইরাল হয়েছিল । ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট পোস্টকার্ড নিউজ এই চিঠিটি প্রচার করে তারপর মুছে দিলে বুম এটিকে যাচাই করে ভুয়ো বলে রায় দেয় ।
বুম তদন্ত করে দেখে, ২০১৭ সালের ১০ জুলাই সনিয়া গান্ধীকে বিজাপুর লিঙ্গায়ত জেলা শিক্ষা সমিতির ছাপানো প্যাডে এম বি পাটিল এই চিঠিটি লেখেন । পাটিল নিজেই ছিলেন সেই সমিতির সভাপতি । এ ব্যাপারে বুমের তথ্য যাচাইকারী প্রতিবেদনটি এখানে দেখতে পারেন ।
ওই ভুয়ো চিঠিতে পাটিল নাকি সনিয়াকে জানাচ্ছেন, “বিশ্ব খ্রিস্টান পরিষদ এবং বিশ্ব ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে তিনি কর্নাটকের নির্বাচনের রণকৌশল নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন । সেই রণকৌশল হল, রাজ্যের খ্রিস্টান ও মুসলিম ভোটারদের তাদের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা আর হিন্দুদের বিভিন্ন জাত, উপজাত, সম্প্রদায়, উপ-সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভক্ত করে দেওয়া । এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে বীরশৈব ও লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের ভিতরকার দ্বন্দ্বকে খুঁচিয়ে তোলা হোক এবং খ্রিস্টান ও মুসলিমদের জন্য রকমারি ছাড় ও সুযোগসুবিধার ঘোষণা করা হোক, যা পরে দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও ছাপা হোক ।”
গুগল-এ সন্ধান করে বুম দেখেছে যে, বিশ্ব খ্রিস্টান পরিষদ নামে কোনও সংস্থার অস্তিত্ব নেই ।
এম বি পাটিলের সঙ্গে বুম যোগাযোগ করলে তিনিও এ ধরনের কোনও চিঠি লেখার কথা অস্বীকার করেন এবং পোস্টকার্ড নিউজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন । বুমকে তিনি জানান-- “প্রতিবেদনটি দেখে প্রথমে আমিও প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম । ওরা আমার সংগঠনের প্যাডের একটি পৃষ্ঠা এবং আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে এই জালিয়াতিটা করেছে, যার লক্ষ্যই হল আমার এবং সনিয়াজির সুনাম কলঙ্কিত করা” ।
বুম বিজয়বাণী সংবাদপত্রের সম্পাদক চান্নেগৌড়া কে এন-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করে । তিনি বলেন—“২০১৮ নির্বাচনের সময় এই চিঠিটাই ভাইরাল হয়েছিল । এখন আবার নতুন করে চিঠিটা ভাইরাল হয়েছে বলেই আমরা তা নিয়ে প্রতিবেদন রচনা করেছি । এম বি পাটিল সে সময় বলেছিলেন, তিনি বিষয়টার তদন্ত করবেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত সে রকম কোনও তদন্ত হয়নি, যেটা খুবই অস্বাভাবিক ।”
যখন তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হয় যে বিশ্ব খ্রিস্টান পরিষদ কিংবা বিশ্ব ইসলামি সংগঠন বলে কোনও সংস্থার অস্তিত্ব নেই, জবাবে তিনি বলেন—“এই ধরনের সংগঠন আছে কি নেই, তা খতিয়ে দেখা আমাদের কাজ নয় ।”