বিহারের একটি হিংস্র আক্রমণের ভিডিও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল করা হচ্ছে
বুম ভাভুয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ভিডিওটি এক ব্যক্তির, যে তার বন্ধুকে খুন করার দায়ে অভিযুক্তকে মারছে।

বিহারের একটি অস্বস্তিকর ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি অন্যজনকে নৃশংসভাবে মারছে, যে নাকি তার বন্ধুকে খুন করেছে। বিভিন্ন ভুয়ো দাবি নিয়ে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, যার অন্যতম হলো, ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অসম্মত হওয়ার জন্য জনৈক বিজেপি নেতা একজনকে ওই ভাবে পেটাচ্ছেন।
ভিডিওটি বিহারের কাইমুর জেলার ভাভুয়া থানার এলাকায় তোলা, যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি লোক অচৈতন্য ও রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে এবং অন্য লোকটি তার কোমরের দুধারে হাঁটু মুড়ে বসে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে-দিতে তাকে বেদম মারছে। অন্য কয়েকটি ভিডিওয় আক্রমণকারীকে অচৈতন্য পড়ে থাকা লোকটির উপর লাফিয়ে পড়তেও দেখা গেছে।
বুম ভাভুয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যে-লোকটি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে, তার নাম ভবানী ওরফে শহিদ, আর যে তাকে মারছে, তার নাম উত্তম প্যাটেল। আর এই দুজনেই এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী।
জেলার পুলিশ সুপার দিলনওয়াজ আহমেদ বলেন, ঘটনাটি নিছক ব্যক্তিগত বদলার, এর মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক রঙ নেই। শহিদ প্যাটেলের বন্ধু মাধব সিংকে গুলি করে মেরে দিয়েছিল, তারই বদলা নিতে প্যাটেলের এই আক্রমণ। এই তিনজনই দাগি দুষ্কৃতী রূপে এলাকায় কুখ্যাত।
ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে এই ভুয়ো দাবি নিয়ে, “জয় শ্রী রাম” না বলতে চাওয়ায় এই লোকটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। মুসলিম ও দলিতদের প্রতি কী তীব্র ঘৃণা। এই ভিডিওটি দেশময় ছড়িয়ে দিন, সকল গোষ্ঠীর কাছে পাঠিয়ে দিন। যদি এ দেশের ১২৫ কোটি মানুষ এখনও জেগে না ওঠে, তবে আর কখনও উঠবেও না। হামলাকারী একজন বিজেপি সাংসদ।
ভিডিওটির নিষ্টুরতার জন্য বুম এটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করছে না।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে তার ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালালে আমরা একটি সংবাদে পৌঁছয়, যাতে বিহারের কাইমুর জেলায় এক দুষ্কৃতীর নিধন ও তার জেরে হিংসাত্মক ঘটনার কথা রয়েছে।

জাগরণ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২ অক্টোবর, ২০১৯ মাধব সিং ও শহিদ রাইন নামে দুই দুষ্কৃতী প্রকাশ্য দিবালোকে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে, যার পরিণামে শহিদের গুলিতে মাধবের মৃত্যু হয়। এর পরই স্থানীয়রা শহিদকে ধরে ফেলে এবং পেটাতে থাকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাধবের গোষ্ঠীর সদস্য উত্তম প্যাটেল ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং মাধবকে খুন করার জন্য শহিদকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, শহিদ রাইনকে পেটানোর একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনা এবং তার ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপ এলাকায় হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
বুম ভাভুয়া থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে জানায়, ভিডিও ক্লিপটিতে শহিদকে উত্তমের পিটিয়ে মারার দৃশ্যটি রেকর্ড হয়েছে, যার কিছু ক্ষণ আগেই শহিদ মাধব সিংকে গুলি করে মারে।
পুলিশ সুপার দিলনওয়াজ আহমেদ বলেন, ঘটনাটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। “২ অক্টোবর একটি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মাধবের সঙ্গে শহিদের তর্কাতর্কি চলছিল, সহসা শহিদ তার বন্দুক বের করে মাধবকে গুলি করে দেয়। কিছু স্থানীয় লোকজন মাধবকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, বাকিরা শহিদকে ধরে ফেলে। মাধবকে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময়েই সে মারা যায়।” মাধব গুরুতর আহত হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার শাকরেদরা ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং শহিদকে পেটাতে থাকে।
“ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উত্তম প্যাটেল শহিদের বুকের উপর বসে তাকে প্রচণ্ড মারছে। সে সময় উত্তম “জয় শ্রী রাম” স্লোগানও দিচ্ছিল, আর তা দেখে ও শুনেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।” আহমেদ জানান, “ভাইরাল ভিডিওতে যদিও অন্য রকম প্রচার করা হচ্ছে, শহিদ রাইন কিন্তু প্রহৃত হলেও মারা যায়নি, হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। আমরা শহিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলাও দায়ের করেছি। আর উত্তম গা ঢাকা দিয়েছে, ওকে শহিদকে নির্মমভাবে পেটানোর দায়ে পুলিশ খুঁজছে।”
আহমেদ জানান, “ভিডিওটি ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়ে ভাভুয়া ও আশপাশের এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে, যার ফলে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চারিদিকে আমাদের বাহিনী মোতায়েন রেখেছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। এই ধরনের ভুয়ো ব্যাখ্যা দেওয়া ভিডিও আমাদের কাজটাকে অনেক কঠিন করে দেয়।”