গম, বার্লির আটা ও কালোজিরা গুঁড়ো সেবনে কি মধুমেহ সেরে যায়?
হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ছড়াচ্ছে মধুমেহ সারানোর এই ভুয়ো পথ্য।
একটি ভাইরাল হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে গম, বার্লির আটা আর কালোজিরা গুঁড়ো মিশিয়ে সেবন করলে নাকি ডায়াবেটিস বা মধুমেহ সেরে যায়। কিন্তু দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
ওই পরামর্শ বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য দু’জন ডাক্তারের নাম উল্লেখ করা হয়েছ—ডঃ টিনা সাইমনস ও ডঃ টোনি আলমিডা।
দাবি করা হয়েছে ওই পানীয় একটানা দু সপ্তাহ খেলে, তা একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়া এবং রক্তে শর্করা কমানোর ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
এই বার্তাটি কয়েক বছর ধরে প্রচারে রয়েছে এবং অন্যায় ভাবে ওই দুই ডাক্তারের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনেও (৭৭০০৯০৬১১১) বার্তাটি আসে।
বুম ডঃ টোনি আলমিডার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, ওই ধরনের কোনও মন্তব্য করার কথা উনি অস্বীকার করেন।
“এরকম কোনও কথাই আমি বলিনি। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে আমার নাম জড়িয়ে আছে,” উনি বলেন।
আন্তর্জালে আমরা ডঃ অনিতা সাইমনস সম্পর্কেও খোঁজখবর করি। সার্চের ফলাফল থেকে জানা যায় যে, উনি একজন চিকিৎসা বিষয়ক লেখক। ডঃ অনিতা সাইমনস পেডিঅ্যাট্রিক্স বা শিশু চিকিৎসায় এমডি ডিগ্রি-প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ নন।
মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ফুলরেণু চৌহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ওই রকম কোনও ওষুধ আছে কিনা।
উনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ওই শস্যগুলি ডায়াবেটিস সারায় সেরকম কোনও প্রমাণ নেই।”
মুম্বাইয়ে একজন প্রথম সারির আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডঃ নীতিন কোচারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বুম। ডায়াবেটিস সারানোর ক্ষেত্রে ওই পথ্যের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তাার কাছে।
“না, এটা সত্য নয়। ওই পথ্য কোনও পরিবর্তন ঘটাবে না। যে কোনও প্রাকৃতিক পদ্ধতিকেই আয়ুর্বেদ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই ভাবে বদনাম করা হয় আয়ুর্বেদের,” বলেন ডঃ কোচার।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হল এমন এক অসুখ যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় আর ইনসুলিন উৎপাদনে ব্যর্থ হয় অগ্নাশয়। ইনসুলিনের কাজ হল, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আর কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে থাকা চিনিকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে শক্তি সঞ্চয় করা।
ডায়ৈবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার বেশ কিছু উপায়ের কথা পাওয়া যায় আন্তর্জালে। ডঃ চৌহানের কাছে সেগুলি সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়।
“ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়তে গেলে প্রয়োজন ব্যায়াম, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা আর ডাক্তারের পরামর্শ,” বলেন চৌহান।
বর্তমানে ভারতে ৫০.৯ মিলিয়ন (৫০৯ লক্ষ) মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে ৮০ মিলিয়ন (৮০০ লক্ষ) হতে পারে।