রাহুল গাঁন্ধী কি তিনটি সিট থেকে দাঁড়াতে পারেন? তথ্য যাচাই
রাহুল গাঁন্ধী তিনটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়াচ্ছেন বলে দাবি করার পর ‘রিপাবলিক টিভি’ আর ‘টাইমস নাও’ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আইনত, দুটির বেশি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানো যায় না
‘রিপাবলিক টিভি’ আর ‘টাইমস নাও’-কে অনুসরণ করে বেশ কয়েকটি মূলধারার টিভি চ্যানেল দাবি করে রাহুল গাঁন্ধী তিনটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াচ্ছে, যদিও আইন দুয়ের বেশি অনুমোদন করে না।
বর্তমানে, কোনও নির্বাচনেই, একজন প্রতিদ্বন্দ্বী দুটির বেশি কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারেন না।
অর্ণব গোস্বামী-পরিচালিত ‘রিপাবলিক টিভি’ মঙ্গলবার দাবি করে যে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (কংগ্রেস) নাকি ২০১৯-এর নির্বাচনে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে তিনটি জায়গা থেকে দাঁড় করানোর কথা ভাবছে।
‘রিপাবলিক টিভি’ এক রিপোর্টে দাবি করে যে, রাহুল গাঁন্ধী তিনটি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চলেছেন। যেমন:
• আমেথি — উত্তরপ্রদেশে তাঁর বর্তমান কেন্দ্র
• নানডেড — মহারাষ্ট্রের একটি কেন্দ্র, যেটি এখন কংগ্রেসের হাতে আছে
• ছিন্দওয়ারা — মধ্যপ্রদেশের কেন্দ্র, যেটি সে রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের ঘাঁটি
কিন্তু টুইটার ব্যবহারকারীরা অবিলম্বে জানাতে থাকেন যে আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থী দুটির বেশি কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারেন না।
এর পর ‘রিপাবলিক টিভি’ লেখাটি বদলে ফেলে, যদিও লেখক বা সম্পাদক কেউই ভুলটি স্বীকার করেননি। ‘রিপাবলিক টিভি’র টুইটে দেওয়া লিঙ্কে এখন নতুন ও সংশোধিত রিপোর্টটি পাওয়া যাচ্ছে। নীচে আগের রিপোর্টের আরকাইভ সংস্করণ দেওয়া আছে। সেটির জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আপডেট করা রিপোর্টের স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হল। সেখানে বক্তব্য পরিবর্তন করে বলা হয়েছে রাহুল গাঁন্ধী তিনটির মধ্যে দুটি কেন্দ্র থেকে লড়তে পারেন।
রিপোর্টটি ‘টাইমস নাও’-ও তুলে নেয়। কিন্তু তাদের রিপোর্টিং-এর মাঝপথে তারা খবরটিকে গুজব আখ্যা দেয়।
এর ফলে কিছু রাজনৈতিক টিপ্পনিও শোনা যায়। যেমন, মহারাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী বলেন, নানডেডে-এ রাহুল গাঁন্ধী দাঁড়াতে চাইলে, তিনি স্বাগত — উনি লড়ে, হেরে, ফিরে যেতে পারেন।
‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-ও খবরটি ছাপে। তার আরকাইভ সংস্করণটি এখানে দেখা যাবে। তবে জানুয়ারি ২৩ তারিখে সংবাদপত্রটি অনলাইনে একটি সংশোধনী প্রকাশ করে।
ভুয়ো সংবাদ ওয়েবসাইট ‘পোস্টকার্ড নিউজ’, ‘রিপাবলিক টিভি’-র রিপোর্ট উল্লেখ করে সংবাদ করে। সেটি এখানে দেখা যাবে।
আইন কী বলে
দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫১
ওই আইনে, একজন এমপি বা এমএলএ’র নির্বাচন লড়ার নিয়ম-কানুন বলা আছে। এবং দেশের নির্বাচন সংক্রান্ত সূক্ষ্ম বিষয়গুলিও আলোচনা করা আছে। আইনটি এখানে দেখা যাবে। সেক্সন ৩৩(৭) শুরু হয় এই ভাবে:
Notwithstanding anything contained in sub-section (6) or in any other provisions of this Act, a person shall not be nominated as a candidate for election:
উপধারা (৬) বা এই অ্যাক্টের অন্য কোনও ধারায় যাই বলা থাক না কেন, একজন ব্যক্তিকে নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নমিনেট করা যাবে না:
এরপর, ওই অ্যাক্ট সংসদীয় নির্বাচনে ‘হাউস অফ পিপল’ বা ‘লোকসভা’ ইলেকশন সম্পর্কে নিয়মের কথা বলতে গিয়ে বলছে…
In the case of a general election to the House of the People (whether or not held simultaneously from all Parliamentary constituencies), from more than two Parliamentary constituencies
-The Representative of The People’s Act, section 33 (7)(A)
দুটির বেশি সংসদীয় কেন্দ্র থেকে, সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার ক্ষেত্রে (সব সংসদীয় কেন্দ্রে এক সঙ্গে হোক বা না হোক) । -দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫১
অর্থাৎ, আইনে পরিষ্কার বলে দেওয়া আছে লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি দুটির বেশি কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারবে না, তা সব কেন্দ্রে নির্বাচন হোক বা না হোক। একই কথা বলা আছে বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও।
In the case of a general election to the Legislative Assembly of a State (whether or not held simultaneously from all Assembly constituencies), from more than two Assembly constituencies in that State
-The Representative of The People’s Act, section 33 (7)(B)
একই নিয়ম রাজ্যসভা, বিধান পরিষদ এবং উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে জনসঙ্ঘের টিকিটে তিনটি কেন্দ্র — বলরামপুর, মথুরা আর লখনউ — থেকে নির্বাচন লড়েছিলেন। কারণ সে সময় দুটির বেশি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কোনও আইনি নিষেধ ছিল না। ১৯৯১ সালে আইন সংশোধন করে, এক সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে তেমন কেন্দ্রের সংখ্যা দুইয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ‘ইন্ডিয়াকানুন’-এর রিপোর্ট এখানে পড়ুন।
‘লাইভল’ একটি রিপোর্টে বলেছে যে, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিমকোর্টকে জানিয়েছে, একজন প্রার্থী যাতে একটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়ায় তারা সেই ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি দুটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুটোতেই জেতে, তা হলে যে সিটটি উনি ছেড়ে দেবেন, সেখানে উপনির্বাচন করার ব্যয়ভার তাঁকেই বহন করতে হবে।
ওই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানার জন্য বুম তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেই, এই লেখা আপডেট করা হবে।