ছেলেধরা গুজবঃ পশ্চিমবঙ্গে মহিলাকে পেটালো জনতা
পুলিশ বুমকে জানালো, সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো গুজব ছড়িয়ে জনতা নিরীহ লোকদের মারছে
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/02/child-kidnapper-final.jpg)
বৃহস্পতিবার ভোরে পশ্চিমবঙ্গের টিকিয়াপাড়া অঞ্চলে ছেলেধরা সন্দেহে হিংস্র জনতা এক মহিলাকে বেধড়ক মারধর করে । বিভিন্ন হোয়াট্স্যাপ গ্রুপে ছড়ানো বার্তার উস্কানিতে প্ররোচিত হয়ে জনতা এলাকায় অপরিচিত মুখ দেখেই তাকে ছেলেধরা সন্দেহে ঘিরে ধরে মারধর করে ।
ছেলেধরাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে উন্মত্ত জনতা মহিলাটির উপর চড়াও হয়ে তাকে ঘিরে ফেলে এবং পুলিশ এসে লাঠি-চার্জ না করা পর্যন্ত ছত্রভঙ্গ হয় না । পুলিশকে এমনকী কমব্যাট ফোর্সের সাহায্যও নিতে হয় এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসও ছুঁড়তে হয় ।
ছেলেধরা এবং কিডনি-পাচারকারীরা চতুর্দিকে ওত্ পেতে আছে, ফেসবুক ও হোয়াট্স্যাপে এই ভুয়ো গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতেই নতুন করে আবার এই গণধোলাই-এর প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়েছে । ২০১৮ সালে এমন গুজব ও প্রবণতার পরিণামে দেশে ৩০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হন ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাওড়া পুলিশ বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে বুম কথা বলেছে । তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১ টার সময় টিকিয়াপাড়া অঞ্চলে এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় । যখন তিনি একটা দোকানের সামনে গিয়ে কিছু কেনার চেষ্টা করেন, তখনই দেড় থেকে দু হাজার লোক জড়ো হয়ে তাঁকে ঘিরে ফেলে নিগ্রহ করতে শুরু করে । পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যাবার আগেই তিনি কমবেশি আহত হন এবং তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশকে রীতিমত বলপ্রয়োগ করতে হয় ।”
“মহিলাটি সম্ভবত ভিক্ষাজীবী এবং রাজ্যের হুগলি জেলার বাসিন্দা । তিনি মধ্যবয়স্কা এবং নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্না । আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁকে নিয়ে যেতে বলেছি । তাঁকে এখন এক গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে ।”
তাঁর কাছে নাকি একটা ধারালো অস্ত্রও পাওয়া গেছে । অফিসারটি জানালেন—“ওটা একটা ভাঙা হাতুড়ি এবং সম্ভবত আত্মরক্ষার জন্যই তিনি ওটা সঙ্গে রেখেছেন । অমন একটা ভোঁতা জিনিস অন্য কী আর কাজে লাগবে!”
হোয়াট্স্যাপ বার্তা ভাইরাল হওয়ার পরিণাম
গত বছর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া যে গুজবে দেশে ৩০ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল, এবারের গুজব তারই ধারাবাহিকতা । এর আগেও বুম ছেলেধরা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে ছড়ানো বার্তার ভুয়ো ও মিথ্যা ব্যাপারটা উন্মোচিত করেছে । পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার আগে কী ভাবে বাংলাদেশেও একই গুজব ছড়িয়ে নিরীহ ব্যক্তিদের আক্রমণ করা হয়েছে, বুম সে সংক্রান্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেছে ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি-ও একটি ফেসবুক পোস্ট মারফত রাজ্যবাসীকে এ ধরনের গুজব ও ভুয়ো বার্তা ছড়ানোর পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছে। এ ধরনের গুজবের প্রসার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে একটি হেল্প-লাইনও (033-2497-8465) চালু করেছে ।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার ডায়মন্ডহারবারে ছেলেধরা গুজব ছড়ানো যে বার্তাটি ভাইরাল হয়, তার আর্কাইভ বয়ানটি এখানে দেখুন।
হাওড়া এবং টিকিয়াপাড়ার মতো যে সব অঞ্চলে এই গুজব সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে, পুলিশ গত সপ্তাহে সেই সব স্থানে পোস্টার এবং হ্যান্ডবিলও বিলি করে ।
হাওড়া পুলিশ কন্ট্রোলের ওসি জানালেন—“আমরা পাড়ায়-পাড়ায় সভা করে এবং প্রচার অভিযান চালিয়ে এ ব্যাপারে লোককে সচেতন করার চেষ্টা করছি । বৃহস্পতিবারের ঘটনার আগেও তিন-তিনটি এ রকম সভা করেছি, কিন্তু তার কোনও সুফল এখনও দেখা যাচ্ছে না । এটা এখন একটা গণ-হিস্টিরিয়ায় পরিণত হয়েছে এবং এটা অচিরে বন্ধ হওয়া দরকার ।”