ব্রিগেড সমাগম, সত্যি কি জনস্রোতের ঢেউ আসে গ্রাউন্ডে – তথ্য যাচাই
রাজনৈতিক সমাবেশের পর, সাধারণ প্রবণতা হল স্থানটিতে কতজন লোক জড়ো হয়েছিল তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ
জননেত্রীর হুংকার, বিরোধী দলনেত্রীর আশ্বাস, কাশ্মিরের হুশিয়ারি, দিল্লির দাপট - ১৯ শে জানুয়ারী ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের চিত্রটা ঠিক এই ছিল। আর তার সঙ্গে ছিল জন সমাগম, ১০০র বেশি মজুত স্নাইপার এবং ডিম ভাতের গুজব! প্রশ্ন উঠেছে একটাই ব্যাপার নিয়ে। না, ডিম-ভাতের মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে নয়, জনস্রোত যা ভেঙ্গে পড়ে ব্রিগেডে তা নিয়ে।
একদিকে আয়োজক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে যে মানুষের ঢল নেমে পড়ে কলকাতায়, গত শনিবার, অপর দিকে বিরোধী দলরা সোশ্যাল মিডিয়া মাত করে দিচ্ছে ব্রিগেডের নিরাশাময় উপস্থিতির প্রমাণ দেখিয়ে।
প্রতিটি রাজনৈতিক সমাবেশের পর, সামাজিক প্রচার মাধ্যমের সাধারণ প্রবণতা হল স্থানটিতে কতজন লোক জড়ো হয়েছিল তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরোধী দলের প্রবণতা হয় ‘লোক কমের’ চিত্র তুলে ধরা। আর অন্য দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সবসময়ই এই চিত্র প্রদর্শন করার চেষ্টা করছেন যে এটি একটি বিশাল সমাবেশ যেখানে লাখে লাখে লোকের সমাগম হয়। ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিরোধী দলীয় একতা সমাবেশ ব্যতিক্রম ছিল না।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সমর্থিত একটি ফেসবুক পোস্টে বিজেপি সমর্থকদের দল দাবি করে, "হেভিওয়েট নেতাদের আনা সত্ত্বেও মমতা ব্যানার্জি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড পূরণ করতে পারছেন না।" পোস্টটি শতকেরও বেশি শেয়ারের সাথে অবিলম্বে ভাইরাল হয়ে যায়।
কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের র্যা লি, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী সকল নেতাদের একটি অন্যতম সমাবেশে পরিণত হয়।
বুম রাজ্য সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তিনি বলেন, "বৃহত্তর মেজর সমাবেশ দেখার জন্য ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রায় ৫ লক্ষ লোক জমায়েত হয় শনিবার। আমি বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা ভিডিওটি দেখেছি। কিন্তু আমি মনে করি না এটি সমাবেশ চলাকালীনের ফুটেজ। বিজেপি সমর্থকদের যে ভিডিওটি তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তা সমাবেশের আগে অনে দূরত্ব রেখে শুটিং করা হয়েছে এবং এটি একটি বায়বীয় দৃশ্য। "
এমনকি মমতা ব্যানার্জি তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ১৯শে জানুয়ারি একটি বায়বীয় দৃশ্য আপলোড করেছে যা তাদের ওয়েবসাইটে ব্যাবহার করা হয়েছিল।
বুম সমাবেশের ভিডিওটিও শুট করে এবং চাক্ষুষ দেখা যায় যে সমাবেশে মানুষের ঢল নেবে আসে ।
টিএমসির মধ্যে সূত্ররা জানান যে, ভিডিওটির প্রধান অংশটি নেওয়া হয়েছে ব্যাকস্টেজ থেকে যেখানে অংশগ্রহণকারিরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন। ভিড় মাটির মাঝখানে সর্বাধিক ছিল। যখন এক প্রান্তে মানুষ মাটিতে বসে ছিলেন। বিজেপি ফেসবুক পেজগুলিতে পোস্ট করা ছবিটি সেই শেষের দিক গুলিতে শুট করা হয়েছে যেখানে মানুষ সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এবং তারা হাইলাইট করছে যে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সমাবেশে খুব কম লোক রয়েছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "ব্রিগেড গ্রাউন্ডে ৬ লাখ লোক ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে। ভিড় সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং তাই পাশের লেনগুলি আটকায়নি।“
সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, শনিবার প্রায় ৩.৫ লাখ লোক সমাবেশে যোগ দেন। অনেক ‘ফ্লোটিং’ ভিড় ছিল। কিছু মানুষ আশেপাশে হাঁটা চলা করেন এবং তারপর আবার সমাবেশে ফিরে আসেন। সমাবেশ মাঠে সাতটি এন্ট্রি পয়েন্ট ছিল। প্রায় ১০ টি ঘড়ির টাওয়ার মাটিতে স্থাপন করা হয়েছে এবং ১০০০ মাইক্রোফোন এবং LED স্ক্রিনগুলিও ইনস্টল করা হয়েছে।“
সমাবেশে উপস্থিত নেতারা হলেন এইচডি দেভেগৌড়, এইচডি কুমারস্বামী, এন চন্দ্রবাবু নাইডু, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এমকে স্ট্যালিন, আখিলেশ যাদব, তেজশই যাদব, শরদ পয়ার, শরদ যাদব, ওমর আবদুল্লাহ, ফারুক আব্দুল্লাহ, সতীচ চন্দ্র মিশ্রা, অজিত সিং, জয়ন্ত চৌধুরী, মল্লিকাজুন খড়্গ, অভিষেক মনু সিংভি, শত্রুঘ্ন সিংহ, অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা, জিগং আপাঙ্গ, হেমন্ত সোরেণ, বাবুলাল মারান্দী, হার্ডিক প্যাটেল, জগেশেশ মভানি, প লালদুহোমা।
শুধু ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে নয়, কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পেজ কয়েকদিন আগেও হাজরাতে টিএমসি এমপি অভিষেক বান্ধপাধ্যায়ের সমাবেশে একটি পোস্ট করেন এই দাবি করে যে সেখানে ভিড় ছিল না।
১৮ জানুয়ারি সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। নীচের ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সমর্থকদের পেজে পোস্ট করা হয়েছে।
পরে অভিষেক ব্যানার্জি তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ছবি আপলোড করেন যেখানে ভিড়ের কেন্দ্রস্থলে সর্বাধিক মানুষকে দেখা হয়। অগত্যা ছবিতে দেখা খালি চেয়ারের সমাবেশে শুরুতে শুট করা হয়েছিল।