এক গবেষণা কি বলে সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কাঁদলে রোগা হওয়া যায়? একটি তথ্য যাচাই
টাইমস অফ ইন্ডিয়া সহ অনেকগুলি ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কাঁদলে ওজন কমে। বুম এই দাবির স্বপক্ষে কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ পায়নি।
সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কাঁদলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই দাবি ব্রিভ্রান্তিকর। আকর্ষণীয় শিরোনামের মাধ্যমে এই ভিত্তিহীন তত্ত্ব আরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বুম অনুসন্ধান করে এমন কোনও গবেষণার সন্ধান পায়নি তাতে এই ধরনের কোনও দাবি করা হয়েছে।
এশিয়াওয়ান নামে সিঙ্গাপুরের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল, “গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কান্না শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।”
এশিয়াওয়ানের ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে “একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে আবেগপ্রসূত কান্না আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ, এই কান্নার সঙ্গে সেই সব হরমোনের যোগ আছে যেগুলি কারটিসোল লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যখন মন আবেগে ভরে যায়, তখনই এটা পাওয়া যায়।”
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “বিজ্ঞানীরা সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কাঁদার পরামর্শ দেন কারণ ওই সময়টাই কোনও দুঃখের সিনেমা দেখে বা নিজের ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কের কথা মনে করে কাঁদার আদর্শ সময়।”
এশিয়াওয়ানের প্রতিবেদন দেখে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর টাইমস অব ইন্ডিয়া, স্কুপহুপ, পপোক্সো, নেক্সটশার্ক, উইমেনস হেল্থ, প্রভৃতি ওয়েবসাইট এই লেখাটি প্রকাশ করেছে।
বলা নেই নির্দিষ্ট করে
এশিয়াওয়ান এই গবেষণা করা গবেষকের নাম, প্রকাশের তারিখ বা কোন জার্নালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল, সে সংক্রান্ত কোনও তথ্যই জানায়নি।
লেখাটিতে ডঃ আরোন নিউফিল্ড নামে লস এঞ্জেলসের একজন অপ্টোমেট্রিস্ট তিন ধরনের চোখের জলের কথা বলেছেন: বাসাল টিয়ার্স, যা চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখে; রিফ্লেক্স টিয়ার্স, যেটা চোখে কিছু পড়লে বা দেওয়া হলে চোখে আসে; এবং সাইকিক টিয়ার্স,সেই চোখের জল, যা আবেগ থেকে বা কোনও চাপের মুখে চোখে আসে।
এই লেখাতে আরও দাবি করা হয়েছে যে সাইকিক টিয়ার্স অর্থাৎ প্রকৃত আবেগের কারণে চোখে যে জল আসে তা ওজন কমাতে পারে।
যাই হোক, এই প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় না যে এই গবেষণাটি অপ্টোমেট্রিস্টরাই করেছিলেন কি না। লেখাটা থেকে বিভিন্ন ধরনের চোখের জলের কথা জানা যায়, কিন্তু তাদের সঙ্গে ওজন কমার দাবির কী সম্পর্ক, তা বোঝা যায় না।
বুম এশিয়াওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে তারা এই প্রতিবেদনটি তাদের কন্টেন্ট সহযোগী ফিলিপিনীয় দৈনিক ইনকোয়ারার-এর কাছ থেকে পেয়েছে।
বুম কান্নার সঙ্গে ওজন কমার সম্পর্কের বিষয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সন্ধান পায়নি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কান্নার সময় করটিসল হরমোনের নিঃসরণের ফলে ওজন কমতে পারে।
ডঃ উইলিয়াম ফ্রে-র ১৯৮২ সালের একটি গবেষণা উদ্ধৃত করে লেখাটিতে বলা হয়েছে, কান্না মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তিন দশকেরও বেশি পুরনো এই গবেষণাটি করটিসল হরমোনের নিঃসরণের সঙ্গে ওজন কমার বিষয়ে কোনও প্রমাণ দেয়নি।
করটিসল হরমোন মানসিক চাপে শরীরকে সাড়া দিতে সাহায্য করে। কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে আমরা পাল্টা আক্রমণে যাব, না কি পরিস্থিতি থেকে পালাব, এই হরমোন তা স্থির করতে সাহায্য করে।
বুম পুণের বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডক্টর শ্রীরং গোডবোলের সঙ্গে কথা বলেছে। উনি জানান, ওবিসিটি বা অস্বাভাবিক রকম মোটা হয়ে যাওয়ার পিছনে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে।
“কোনও একটি নির্দিষ্ট কাজ করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমানো যায় না”, জানালেন ডক্টর গোডবোলে।
“ওজন কমানো কঠিন, এবং কমিয়ে ফেলতে পারলেও তাকে ধরে রাখা আরও কঠিন। কোনও একটি নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। কাঁদলে ওজন কমে, এমন দাবির পক্ষে কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই।”