কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর অর্ণব গোস্বামী কি সত্যিই বলেছেন, “ওদের মারো, হাজারে হাজারে মারো?” একটি তথ্য-যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে পুলাওয়ামা আক্রমণের পর অর্ণব গোস্বামী এই মন্তব্য করেছিলেন।
রিপাবলিক টিভির মুখ্য সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীর একটি ভিডিও এডিট করে মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি আসলে ফেব্রুয়ারিতে পুলাওয়ামা হামলার সময়কার। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে অর্ণব গোস্বামী সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে এবং কাশ্মীরে যারা পাথর ছুঁড়ছে, তাদের মেরে ফেলতে আহ্বান জানিয়েছেন। ভিডিওটিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ ও ৩৭০ ধারার বিলুপ্তিকরণের পর সঞ্চালক এই মন্তব্য করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি শো থেকে অর্ণব গোস্বামীর বাইটের অংশটি খুব সতর্কতার সঙ্গে এডিট করা হয়েছে এবং ভিডিওটিতে ঢোকানো হয়েছে। বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে পুলাওয়ামা আক্রমণের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি সম্প্রচারিত ‘সানডে ডিবেট উইথ অর্ণব’ নামক শো-এ অর্ণব গোস্বামী সন্ত্রাসবাদীদের সম্পূর্ণ নির্মূল করতে আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘এর ফলে যে ক্ষতি হবে, তার জন্য তৈরি।’
২৪ সেকেন্ড দীর্ঘ এডিট করা ক্লিপটিতে গোস্বামীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “এবার অপারেশন নির্মূল করা শুরু হবে। এই সমস্ত লোকেদের আমাদের নির্মূল করতেই হবে।” এখানে একটি এডিট কাট করা হয়েছে, যার পরে গোস্বামী বলছেন, “যারা স্লোগান দিচ্ছে, তারা কি মনে করে না যে আমরা তাদের অনেক সুযোগ দিয়েছি? এবার আমাদের একটা কঠোর সামরিক পদক্ষেপ দরকার। এর ফলে যে ক্ষতি হবে, একজন গর্বিত ভারতীয় হিসেবে তার জন্য আমি তৈরি।” তার পর অন্য প্যানেলিস্টরা যখন মতামত দিতে থাকেন। তখন তিনি বলতে থাকেন, “এদের মারো। হাজারে হাজারে এদের মারো।”
এই এডিট করা ভিডিওটি উইথ কাশ্মীর নামে টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়। এই টুইটার হ্যান্ডেলটি এখন মুছে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে লেখা ছিল, “কাশ্মীরে যখন হাজার হাজার মানুষ সামরিক অবরোধের মধ্যে রয়েছেন, তখন অর্ণব গোস্বামী বলছেন, ‘এক জন গর্বিত ভারতীয় হিসেবে এর ফলে যে ক্ষতি হবে তার জন্য আমি তৈরি... এদের মারো। হাজারে হাজারে এদের মারো।' ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিকরা কাশ্মিরীদের রক্ত চাইছে। #স্ট্যান্ডউইথকাশ্মীর।”
আরও অনেকেই একই বক্তব্যসমেত এই ভিডিওটি টুইট করেছেন। ফেসবুকেও ভিডিওটি এখন ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত হয়েছে যে এই ভিডিওটিতে গোস্বামীর সান ডে ডিবেট শো-এর অনেকগুলো আলাদা আলাদা মন্তব্যকে একত্রিত করা হয়েছে। এই ভিডিওটি আসলে এডিট করা হয়েছে। ৮ সেকেন্ডের মাথায় ভিডিওটির শব্দ একেবারে ক্ষীণ হয়ে যায়, আবার ১০ সেকেন্ডের পর তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসে। তা ছাড়া, গোস্বামীর মন্তব্যটি শুনে মনে হয় অসম্পূর্ণ বিতর্কটি যেন হঠাৎ শেষ হয়ে গেল।
ভিডিয়োটিতে পর্দার একেবারে ওপরের অংশে দেখা যাচ্ছে শো-টির শিরোনাম— ‘উইল প্রো-আজাদি গ্যাঙ ইউনাইট এগেনস্ট পাকিস্তান?’ হ্যাশট্যাগ ‘কাশ্মীরডিবেট’ এই কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা হলে, ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে সরাসরি সম্প্রচারিত বিতর্ক অনুষ্ঠানটিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
উপস্থিত অতিথিরা গোস্বামীর সঙ্গে বিতর্কটিতে যোগ দেন। ভিডিয়োটিতে দেখা যায়, কাশ্মীরে যারা পাথর ছোড়ে, গোস্বামী তাঁদের সম্পর্কে বলছেন, “ওদের এই বিদ্বেষ অসংখ্য সৈনিক ও পর্যটকদের মেরে ফেলছে।” ৫৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মাথায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ওদের মারো। হাজারে হাজারে ওদের মারো।” যারা পাথর ছুড়ছে, তাদের সম্পর্কে কথাটি বলেন তিনি। পরে তিনি আরও বলেন যে ওদের নিয়ন্ত্রণ করার একটাই পথ— প্রথমেই ওদের কোণঠাসা করে ফেলতে হবে এবং ‘ওদের ব্যাপারে নরম হলে চলবে না।’ তিনি আরও জানান, কীভাবে পাথর ছুড়ে গ্রেফতার হওয়া যুবক জুবের আহমেদ তুরে ১৫ দিনের মধ্যে জেল থেকে পালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের দলে যোগ দিয়েছে।
এক ঘণ্টা ৭ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় গোস্বামী বলেন যে, “আমি বলছি যে এবার আমাদের একটা কঠোর সামরিক পদক্ষেপ করা দরকার এবং একজন গর্বিত ভারতীয় হিসেবেই আমি কথাটি বলছি। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য যদি কোনও ঝক্কি পোহাতে হয়, আমরা তার জন্য তৈরি। এবার অপারেশন এলিমিনেশন শুরু হবে। এই সমস্ত লোকেদের আমাদের নির্মূল করতেই হবে।”
রিপাবলিক দাবি করেছে যে এই ভিডিওটি পাকিস্তানিরা এডিট করেছে এবং শেয়ার করেছে
রিপাবলিক টিভি টুইটারে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, WithKashmir নামক টুইটার হ্যান্ডেলটি পাকিস্তানিরা চালায়। চ্যানেলটি #TwitterMustClarify নামে একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের প্রচার আরম্ভ করে, যার ফলে উইথকাশ্মীর নামে টুইটার হ্যান্ডেলটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়।