অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি মন্দিরে বিদ্যুৎ সংযোগ কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন? একটি তথ্য-যাচাই
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল-হওয়া এক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, আপ সরকারের নির্দেশে দিল্লির সব মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
দিল্লির বিধায়ক কপিল মিশ্রর একটি টুইট সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে উনি বলেছেন যে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নির্দেশে দিল্লির ৩৫০ মন্দিরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
মিশ্রর হিন্দিতে লেখা পোস্টটি তর্জমা করলে দাঁড়ায়: “কেজরিওয়াল মসজিদগুলিকে মাসে ৪৪,০০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর, এখন দিল্লির সব মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইএস দিল্লিতে ৩৫০ মন্দিরে বিদ্যুৎ কেটে দিয়েছে। কেজরিওয়াল সরকারের নির্দেশ—সব মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
কপিল মিশ্রের ফেসবুক পোস্ট ও টুইট এখানে আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
মিশ্রর পোস্টে যখন প্রায় ৩৫০ মন্দিরে বিদ্যুৎ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তখন অন্যান্য সোশাল মিডিয়া পোস্টে কেজরিওয়ালের নির্দেশে সব মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
বিএসইএস দিল্লি, রাজধানীর অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তারা ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে তাদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল মারফত ওই দাবি উড়িয়ে দেয়।
টুইটার হ্যান্ডল’এ বলা হয়, “মন্দিরসহ, বিল মিটিয়ে যাচ্ছেন এমন কোনও প্রকৃত কনজিউমারের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেটে দেওয়া হয়নি।”
কপিল মিশ্রর দাবির সত্যতা যাচাই করতে বুম বিএসইএস যমুনা পাওয়ার লিমিটেড, আম আদমি পার্টি এবং দিল্লির দুটি মন্দিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বিএসইএস যমুনা পাওয়ার লিমিটেড-এর লক্ষ্মীনগর ডিভিশনের প্রধান (অপারেশনস ও মেনটেনেন্স) একাংশ শ্রীবাস্তবের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে, উনি বলেন, খবরটি মিথ্যে। “আমরা সব মন্দির আর মসজিদে মিটার লাগিয়েছি। মন্দিরে বিদ্যুৎ কেটে দেওয়ার তো কোনও কথাই ওঠে না।”
আমরা বিএসইএস যমুনা পাওয়ার লিমিটেড-এর উত্তর-পূর্ব সার্কেলের (অপারেশন ও মেনটেনেন্স) প্রধানের সঙ্গেও কথা বলি। উনি জানান, “আমাদের সার্কেলে, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
আপ পার্টির তৎকালীন সোশাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত লালও একই কথা বলেছিলেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বুম যখন তার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল।
“আমি জানি ওটা ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যাবে যে, এরকমটা সম্ভব নয়। অবশ্যই ওটা মিথ্যে,” বলেন লাল।
রাজধানীর ভিন্ন দুটি এলাকায় দুটি মন্দির আমরা র্যান্ডামভাবে বেছে নিই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমারা জানতে চাই বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কিনা।
নতুন দিল্লির কালকাজি এলাকার কালকাজি মন্দিরের এক পুরোহিত, লোকেশ ভরদ্বাজ, জানান যে, তাঁদের মন্দিরের বিদ্যুৎ সংযোগে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। “মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন বন্ধ হবে — এমন কাজ কেন করবে কেউ? কোন এমএলএ ও কথা টুইট করেছেন? হতে পারে, তাঁর মন্দিরেই বিদ্যুৎ নেই। হয়ত বিদ্যুতের বিল মেটাননি,” বলেন ভরদ্বাজ।
বিধায়ক কপিল মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বুম। খবরটা উনি কোথায় পেলেন, সেটা জানাই ছিল উদ্দেশ্য। বিধায়ক ব্যস্ত থাকায়, তাঁর টিমের এক সদস্য আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। মিশ্রর দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে উনি বলেন, “অফিসাররা মন্দিরের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিচ্ছেন এই বলে যে তা আবার চালু করে দেওয়া হবে। কিন্তু তা আর করা হচ্ছে না। অফিসাররা বলছেন যে, ব্যক্তিবিশেষর নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হবে।”
আমরা যখন ওই ব্যক্তিকে জানাই যে, বিএসইএস টুইট করে ঘোষণা করেছে যে কেবল যারা বিল দেয়নি, তাদেরই বিদ্যুৎ সরবরাহ কেটে দেওয়া হচ্ছে, তখন উনি একটু থেমে বলেন, “না, সেরকমটা নয়। ভাইয়াজি এখন মিটিং-এ আছেন। আমি একটু পরেই তাঁকে আপনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।” এরপর, বার বার চেষ্টা করেও কপিল মিশ্রকে যোগাযোগ করা পাওয়া যায়নি।