মহাকাশ থেকে মক্কার ঝলক দেখার পর নাসা'র নভোচর সুনীতা উইলিয়ামস কি ইসলাম ধর্ম নিলেন?
২০১০ সালেই এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা উইলিয়ামস এই দাবিটিকে ভুয়ো গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তার পরেও গত প্রায় এক দশক ধরে তাঁর ইসলামে ধর্মান্তরের গল্প চলে আসছে।
সুনীতা উইলিয়ামস ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি সর্বৈব ভুয়ো। ফেসবুক পেজে দেড় লক্ষ বার শেয়ার হওয়া এই ভিডিওটিতে বাংলায় বর্ণনা করা হয়েছে, কী ভাবে মহাকাশ থেকে মক্কা ও মদিনা দেখতে পাওয়ার পরই তিনি ইসলাম ধর্মে অন্তরিত হন।
বুম লক্ষ্য করেছে, ২০০৮ সাল থেকে এই ভুয়ো বার্তাটি বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হয়ে চলেছে। আমেরিকায় জন্মানো সুনীতা নাসা বা ন্যাশনাল এয়ারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর একজন মহাকাশচারী। তবে তাঁর বাবা দীপক পান্ডা-র সূত্রে ভারতের গুজরাটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "মহাকাশ থেকে ফিরেই কেন’ সুনিতা উইলিয়াম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন"
ভিডিওটিতে সুনীতার মুখে এই মিথ্যা উক্তিটি বসানো হয়েছে,“যখন আমি পৃথিবী থেকে ২৪০ মাইল উপরের মহাকাশে পৌঁছই, তখনই দেখতে পাই নীচে জ্বলজ্বল করছে দুটি তারা। তক্ষুণি আমি টেলিস্কোপ লাগিয়ে তারা দুটি দেখার চেষ্টা করি এবং তাদের খুঁজেও পাই। একটি তারা মক্কায় জ্বলছিল, অন্যটি মদিনায়। আমি এ দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে যাই এবং তখনই সিদ্ধান্ত নিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার। পৃথিবীতে ফিরেই আমি ইসলামকে বরণ করি।”
এর পর আরও গাঁজাখুরি সব গল্প ভিডিওটিতে শোনানো হয়—কী ভাবে সুনীতা মক্কা ও মদিনার পবিত্র তীর্থ দ্বারা অভিভূত হন, কী ভাবে পৃথিবীর অত উপরে মহাকাশ থেকেও তিনি দুই মহাতীর্থের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিলেন। “তারার মতো উজ্জ্বল ওই আলো দেখে প্রথমে তিনি বিমূঢ হয়ে গিয়েছিলেন, তারপর সহযাত্রীদের কাছে প্রশ্ন করে তিনি জানতে পারেন ওই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলি আর কিছুই নয়, ইসলামের দুই মহান তীর্থ মক্কা ও মদিনা,” তিনি আরও বলেন।
এরপর ভিডিওটিতে মিথ্যা করে বলা হয়েছে—“সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত মাসে সুনীতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি বলেন—আমি এখন একজন মুসলমান এবং এটা ভাবতেও আমার বড় আনন্দ হচ্ছে।”
আরও মিথ্যার জাল বুনে ভিডিওটিতে বলা হয়েছে, এরপর সুনীতা সৌদি আরবের রাজধানী জেড্ডায় যান এবং সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার উত্তেজক কাহিনীর বর্ণনা দেন। মজার ব্যাপার, এ সবের কোনও ছবি বা নথি বা ভিডিও ফুটেজ কিন্তু নেই, আছে শুধু মক্কা-মদিনার বহুপরিচিত স্থিরচিত্রের সঙ্গে ধারাবিবরণী।
বুম বেশ কিছু ওয়েবসাইট খুঁজে পেয়েছে, যারা গত দশ বছর ধরে এই ভুয়ো খবরের ভিডিও ক্রমাগত প্রচার করে চলেছে।
গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় ভাইরাল হওয়া একই ধরনের অন্য একটি ভিডিও বুম খুঁজে পেয়েছে।
একটি পাকিস্তানি ব্লগেও ২০০৮ সালে সুনীতার ইসলামে ধর্মান্তরকরণের উল্লেখ রয়েছে। ব্লগটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ইসলামে ধর্মান্তরিত সুনীতা উইলিয়ামস—এই শব্দগুলি দিয়ে অনলাইনে খোঁজ চালিয়ে বুম সুনীতার ২০১০ সালের একটি সাক্ষাত্কারের সন্ধান পায়, যেটি কন্ডে নাস্ট (Conde Nast) পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে তিনি মহাকাশ থেকে মক্কা ও মদিনা দেখার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন—
“আমি ঠিক জানিনা কোথা থেকে এই গুজবের শুরু। আমি যে এতে খুব কিছু মনে করি, তাও নয়, কারণ কোনও ধর্মের প্রতিই আমার কোনও পক্ষপাত নেই। তবে আমার বাবা একজন হিন্দু এবং বড়ই হয়েছি কৃষ্ণ, রাম, সীতা প্রভৃতির তাত্পর্য উপলব্ধি করতে গিয়ে। আবার আমার মা একজন খ্রিস্টান, তা হলে যিশুই বা আমার কাছে কী? ব্যক্তিগতভাবে আমার কথা বলছি-- এর সঙ্গে নাসা-র কোনও সম্পর্ক নেই-—আমি মনে করি ঈশ্বর বলে কেউ একজন আছেন, কেউ একজন যিনি আমাদের দেখছেন, আমাদের পথনির্দেশ দিচ্ছেন অত্যন্ত সুখী ও সুফলপ্রসূ জীবন গড়ে তোলার। এর বৃহত্তর তাত্পর্য রয়েছে। এটাই আমার ধারণা।”
সাক্ষাৎকারে সুনীতা কোনও ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কথা অস্বীকার করলেও এটাও জানিয়েছেন যে, যখনই তিনি মহাকাশ অভিযানে যান, তাঁর সঙ্গে থাকে হিন্দু দেবতা গণেশের একটি মূর্তি। “গণেশ আমার বাড়িতে সর্বত্র। যখনই আমি যেখানে থেকেছি, গণেশ আমার সঙ্গে থেকেছেন। তাই আমি মহাকাশে গেলেও তাঁকে তো আমার সঙ্গে যেতেই হতো।”