চিতাবাঘের এই শিকার দৃশ্যের ছবিটি তোলার পর ফটোগ্রাফার কী মানসিক অবসাদে ভুগছেন?
২০১৩ সালে ছবিটি তোলেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অ্যালিশন বাটিজিয়েগ। তিনি ২০১৭ সালেই জানান ওই রটনাটি ভুয়ো এবং মনগড়া।
কেনিয়ার মাসাইমারাতে চিতাবাঘের ইম্পালা শিকারের ছবি ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে। ইম্পালা হল এক বিশেষ প্রজাতির কৃষ্ণসারমৃগ (Antelope)। ওই ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, ওই শিকার দৃশ্যের ছবি যে ফটোগ্রাফার লেন্সবন্দি করেছিলেন তিনি নাকি অবসাদে চলে যান এই দৃশ্য দেখার পরে।
পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘‘এই ছবিটা শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে। ফেটোগ্রাফার ছবিটা তোলার পর ডিপ্রেসনে চলে যান। চিতা বাঘ গুলো মা হরিণ ও তার দুই বাচ্চাকে ধাওয়া করে। মা হরিণটা খুব সহজেই চিতা বাঘগুলোর কাছে নিজেকে ধরা দেয় অথচ সে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো কিন্তু সে তা না করে নিজেকে বলি দেয়, যাতে তার বাচ্চা দুটো পালিয়ে যেতে পারে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে চিতা বাঘগুলোর খাবারে পরিনত হওয়া মা হরিণটি তার বাচ্চাদের দূরে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া অবধি তাকিয়েই আছেন। মা তো মা ই! পৃথিবীর ইতিহাসে মা একটি পবিত্র নাম।’’
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটি শেয়ার করেছেন ২ হাজার ৪০০ জনের বেশি। লাইক করেছেন ২৭৩ জন।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে জানতে পেরেছে ছবিটি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অ্যালিশন বাটিজিয়েগের তোলা। ছবিটি অ্যালিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে।
শিকার দৃশ্যের ওই পর্বে বিভিন্ন মুহূর্তের ৯ টি ছবি তোলেন ফটোগ্রাফার অ্যালিশন বাটিজিয়েগ। অ্যালিশন ছবিটির বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন তার ওয়েবসাইটে, যার সারমর্ম নীচে দেওয়া হল।
তিনি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চিতাবাঘের ইম্পালা শিকারের দৃশ্যটি লেন্সবন্দি করেন কেনিয়ের মাসাইমারতে। নারাশা নামের মা চিতা বাঘটি তার শাবকদের শিকার ধরার কৌশল শেখাচ্ছিল; শিকারকে কীভাবে নাস্তানবুদ করতে হবে তারই প্রশিক্ষন দেওয়ার চেষ্টা করছিল মা চিতাবাঘ নারাশা।
বারবার মা চিতা নারাশা তার শাবকদের শিখিয়ে দিলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলো তারা। তিনি সমগ্র শিকারের দৃশ্যটির প্রতিটি ধাপ ক্যামেরায় তোলেন।
যদিও কয়েক মুহুর্তে পরেই তারা ওই ইম্পালাকে ধরাশায়ী করেছিল চিতা শাবকরা তাদের অপরিপক্ক কৌশলেই।
২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী অ্যালিশন বাটিজিয়েগ ফেসবুক পোস্টে ফটোগ্রাফারের অবসাদে চলে যাওয়ার সংক্রান্ত ভুয়ো রটনার ব্যাপারে তার অসস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি ওই পোস্টে লেখেন, ‘‘...এই ভুয়ো গল্প সহ ছবিটি লক্ষাধিকবার বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। আমি লক্ষাধিক মেসেজের বন্যায় ভেসে যাচ্ছি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে আমি কী ‘আবসাদগ্রস্ত ফটোগ্রাফার’। আমাকে লিঙ্কডইনে ট্যাগ করা হচ্ছে ভুয়ো রটনায় যা আমার পেশার দফারফা করতে চলেছে। কি বিষাক্ত পৃথিবীতে বাস করি আমরা। বোকা ধোকাবাজ লোকজন পাগলের মত ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে।’’