পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কী জনসভায় বলেছেন বিজেপিকে ভোট দিতে?
বুম যাচাই করে পেয়েছে ভিডিওটি ভুয়ো। বিজেপির অন্য একটি জনসভার ভিডিও থেকে অংশ নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক অংশের সাথে জুড়ে সম্পাদিত করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অফিশিয়াল ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৩ এপ্রিল ২০১৯ একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটির দৃশ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জনতার উদ্দেশ্যে বিজেপিকে ভোট দিতে শোনা যাচ্ছে। আর জনতা প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে হর্ষধ্বনি দিচ্ছে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি ১৪০০ জন রিট্যুইট এবং ৩৪২০ জন লাইক করেছেন। ভিডিওটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে “এই গণতন্ত্রে বিজেপি সরকারকে ভোট দিয়ে, বিজেপি সরকারকে ভোট দিয়ে, বিজেপি সরকারকে ভোট দিয়ে..” বলতে শোনা যায়। ভিডিওটির পরের দৃশ্যে, গৈরিক সমর্থকদের প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে হর্ষধ্বনি দিতে দেখা যায়।
ট্যুইট ও ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
বুম একই ক্যাপশনসহ আরও ফেসবুক পোস্ট খুজে পেয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ওই ট্যুইটটিতে বলা হয়েছে(অনুবাদ), “মোদি সুনামির প্রভাব। @মমতাঅফিশিয়াল প্রত্যেককে আকুতি জানায় বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য! এই প্রথমবার তিনি এই নির্বাচনী প্রচারে কোনও মানে খুজে পেলেন! অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি!”
তৃণমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ওই ট্যুইটির প্রত্যুত্তর দেওয়া হয়েছে। ট্যুইটিতে বলা হয়েছে, “ব্রেকিং, জোচ্চুরি ফাঁস। মরিয়া @বিজেপিফরবেঙ্গল ট্যুইট করে ভুয়ো @মমতাঅফিশিয়ালের ভিডিও। কেন তোমরা আমাদের পরবর্তী দুটি শব্দ সম্পাদন করেছ? তিনি বলেন-৬ই মে আসছে দিন, ভালো করে গণতন্ত্রে বিজেপি সরকারকে ভোট দিয়ে কবর দিন।”
তৃণমূল কংগ্রেসের ওই ট্যুইটার হ্যান্ডেল প্রমান হিসাবে ২৩ এপ্রিল ২০১৯ হুগলীর খানাকুলে হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি জনসভার অসম্পাদিত অংশ ট্যুইট করেছে।
তথ্য যাচাই
বুম পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট হওয়া ভিডিওটি যাচাই করে দেখেছে। ভিডিওটি খেয়াল করলেই বোঝা যায় ভিডিওটি ভুয়ো।
ভিডিওটির ৪ সেকেন্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, “বিজেপি সরকারকে ভোট দিয়ে..”, এবং হটাৎ বক্তব্যের পরিবর্তন হয়ে তারপর একই কথা বারবার বলতে শোনা যায়।
মাত্র কয়েকজন ব্যবহারকারী ভিডিওটি ভুয়ো ধরতে পারলেও অনেকেই ভিডিওটিকে আসল ভাবে।
বুম খানাকুলে হওয়া সভার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের ভিডিওর অসম্পাদিত অংশ খুজে পেয়েছে। তৃণমূলের টুইটার খেকে দাবি করা ভিডিওটি সঠিক।
ভুয়ো ভিডিওটিতে ব্যবহার হওয়া অংশটি ৩৫:৫০ সময়ে পাওয়া যাবে। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পষ্ট বলতে শোনা যায়, “ভোট দিয়ে বিজেপি সরকারকে কবর দিন।” ভুয়ো ভিডিওটিতে “কবর দিন” শব্দ দুটিকে বদলে “বিজেপিকে ভোট দিন..” করা হয়েছে।
ভিডিওটির অপটু সম্পাদনের ফলসরূপ ব্যকরনগত কোনও মানে তৈরি হয়না।
ভুয়ো ভিডিওটি মোদির নামে হর্ষধ্বনিতে শেষ হয়। ভিডিওটিতে বেশ কয়েকজনকে গৈরিক উত্তরীয় এবং টুপি পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে যা দেখে বিজেপি সমর্থক বলে মনে হয়।
তৃণমূলের সভায় প্রতিপক্ষ বিজেপি সমর্থকদের উপস্থিতি দেখে বুমের সন্দেহ হয়। ভিডিওটি বিজেপিরই কোনও জনসভা থেকে নিয়ে সম্পাদন করার স্পষ্ট ইঙ্গিত পায়।
বুম পশ্চিমবঙ্গে হওয়া সাম্প্রতিক কয়েকটা বিজেপির জনসভার ভিডিও তল্লাশির পর, বুম মোদির নামে হর্ষধ্বনি দেওয়া আসল ভিডিওটির হদিস পায়।
দুটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট তুলনা করলে বোঝা যায়, ভিডিওর অংশটি উপরের জনসভা থেকে নেওয়া হয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাষন শুনতে পাওয়া যায়।

কৌতুক ও ভুয়োর সীমারেখা
বুমের তরফে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দিলীপ ঘোষ স্বীকার করেছেন ভিডিওটি সম্পাদিত।
বুমের তরফে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দিলীপ ঘোষ স্বীকার করেছেন ভিডিওটি সম্পাদিত।
দিলীপ ঘোষ বলেন, “নেটিজেনরা মমতা ব্যানার্জীর ওপর রসিকতার উদ্দেশ্যে এডিট করে থাকবে। এটা স্পষ্ট যে ভিডিওটা সম্পাদিত। যেরকম রাহুল গান্ধির ভিডিও প্রায়শই এডিট করে অনলাইনে পোস্ট করা হয়। সুতরাং, আমি জানিনা এত শোরগোল কীসের।” তিনি অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা দেননি রাজনৈতিক দলের ভোরিফাই করা অ্যাকাউন্ট নিজে থেকে কেন এরকম ভুয়ো ভিডিও প্রচারে সংযুক্ত।
যদিও, ঘোষনা ছাড়া কৌতুক প্রায়শই ভুয়ো খবরের কারন হয়ে চলেছে। অতীতে ও এরকম ঘটেছে। কৌতুক ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উদ্ভুত হওয়া এরকমই বেশ কিছু ঘটনা বুম খন্ডন করেছে। ভুয়ো খবরের কাগজের ক্লিপিং টুইট করেছিলেন আরবিআই বোর্ডের সদস্য এস গুরুমূর্তি। ওই ঘটনা নিয়ে বুমের যাচাই করা প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।