নির্বাচন কমিশন ইভিএম কারিকুরির অভিযোগ অস্বীকার করছে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তিন স্তরের রক্ষাকবচ নেওয়া হয়েছে
লোকসভা নির্বাচনের গণনা শুরুর কয়েক দিন আগে নির্বাচন কমিশন দৃঢভাবে জানাচ্ছে যে, গণনা শুরুর আগেই ভোটযন্ত্রে কারিকুরি করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা আদৌ সত্য নয় । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া একাধিক ভিডিওয় ভোটযন্ত্রে কারিকুরির অভিযোগ ওঠায় নির্বাচন কমিশনকে এভাবেই জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে হচ্ছে । বেশ কয়েকটি বুথ-ফেরত সমীক্ষায় ভারতীয় জনতা পার্টির পুনরায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ।
ভোটদাতাদের রায়কে বিকৃত করার অভিযোগ নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করার পরই ইভিএম-এর নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসে । তার একদিন আগেই অবশ্য প্রণববাবু প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে বলেছিলেন, “কেবল একজন খারাপ শ্রমিকই তার যন্ত্রপাতিকে দোষ দেয়” । এ বিষয়ে আরও জানতে এখানে পড়ুন ।
সোশাল মিডিয়ায় যে ভিডিওগুলি ঘুরছেঃ
১) চন্দৌলি, উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের চন্দৌলির এই ভিডিওটিতে যিনি ছবি তুলছেন, তাঁকে ট্রাক থেকে কয়েকজন লোকের দ্বারা ইভিএম নামানোর ব্যাপারে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে ।
অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বিডিআর তিওয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন , চন্দৌলির সকলডিহা বিধানসভা কেন্দ্রের সংরক্ষিত/অব্যবহৃত ইভিএমগুলি দেরিতে এসে পৌঁছয় ।
“যখন গাড়ি থেকে ইভিএমগুলো নামানো হচ্ছিল, তখন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা ও কর্মী তা নিয়ে আপত্তি জানান । তাঁদের বলা হয় যে এগুলি ব্যবহার হয়নি এবং স্ট্রংরুমে নিয়ে গিয়ে মেশিনের অক্ষত সিলগুলিও দেখানো হয়“ বলে হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান তিওয়ারি ।
২) গাজিপুর, উত্তরপ্রদেশ
এই ভিডিওটিতে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে সমাজবাদী পার্টি-বহুজনসমাজ পার্টির জোটপ্রার্থী আফজল আনসারিকে স্ট্রংরুমের সামনে প্রতিবাদ-ধর্নায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে । আনসারি অভিযোগ করেন, ইভিএমগুলি একটি গাড়িতে করে স্ট্রংরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
গাজিপুরের রিটার্নিং অফিসার ঘটনাটি নিয়ে একটি বিবৃতিও জারি করেন ।
৩) ঝাঁসি, উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি থেকে পোস্ট হওয়া এই ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে অভিযোগ করতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রার্থীকে কিছু না জানিয়েই ইভিএম স্ট্রংরুমে নিয়ে আসা হয়েছে ।
ঝাঁসির জেলা নির্বাচনী আধিকারিক শিবসহায় অবস্থি জানান, “কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা দেরিতে এসে পৌঁছন । তবে যাই হোক, সকাল ৭টার মধ্যেই সবকটি ইভিএম স্ট্রংরুমে পৌঁছে যায় এবং পর্যবেক্ষক ও প্রার্থীদের উপস্থিতিতে এবং সিসিটিভির নজরদারিতে তা সিল করে দেওয়া হয়” ।
নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা
সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, ভোট-পড়া ইভিএমগুলি কড়া নিরাপত্তায় স্ট্রংরুমে রয়েছে ।
“সংবাদ-মাধ্যমের কিছু অংশে জল্পনা চালানো হচ্ছে যে, ভোট-পড়া ইভিএমগুলি স্ট্রংরুম থেকে সরিয়ে সে জায়গায় অন্য ইভিএম রাখা হচ্ছে । নির্বাচন কমিশন দৃঢভাবে এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চায় যে, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং তথ্যগতভাবে ভুল । সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে যে সব ইভিএম দেখানো হচ্ছে, সেগুলি ভোটের কাজে ব্যবহৃত হয়নি ।”
কমিশনের প্রেস-বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে-সব ইভিএম-এর চলাচল ও মজুত করা নিয়ে ভিডিও ক্লিপে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলির কোনওটিই ব্যবহার করা হয়নি, অতিরিক্ত যন্ত্র হিসাবে সংরক্ষিত ছিল । পুরো বিবৃতিটি পড়ুন এখানে ।
ভোটদান শেষ হয়ে গেলে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রগুলি সিল করে স্ট্রংরুমে রেখে দেওয়ার কথা ।
“জাতীয় বা রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আরও/এআরও তাঁদের কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্রংরুমে ইভিএমগুলি মজুত করবেন এবং পুরো ঘটনাটির ভিডিও তুলে রাখা হবে । আর ভোটারদের সচেতন করা কিংবা প্রশিক্ষিত করার জন্য ব্যবহার্য ইভিএমগুলি অন্য একটা স্ট্রংরুমে রাখা থাকবে, যাতে ভোটগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট এবং সংরক্ষিত ইভিএমের স্ট্রংরুম আগে খোলা না হয় । অন্তত নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ও ভিভিপ্যাট বিষয়ক ম্যানুয়ালে তেমন কথাই লেখা আছে” । এখানে পড়ুন ।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশন অনেকের দ্বারা সমালোচিত হচ্ছে অব্যবহৃত ইভিএম যন্ত্রগুলির নিরাপত্তার প্রশ্নে ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, “সাধারণ নির্বাচনের জন্য সারা দেশ জুড়েই স্ট্রংরুমগুলিতে ত্রিস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । যেখানে ইভিএমগুলি রাখা রয়েছে, সেই স্ট্রংরুমের ভিতরে কমিশন এবং আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা পাহারায় রয়েছেন । আর বাইরের চৌহদ্দিতে পাহারায় থাকছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ, স্থানীয় পুলিশ এবং সংলগ্ন রাস্তায় জেলা-প্রশাসনের নিযুক্ত বাহিনী” ।
সূত্রটির আরও বক্তব্য-- “জেলার ভিতর অবস্থিত স্ট্রংরুমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ থাকছেন জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার” ।