ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিরুদ্ধে ১৯০ পাতার অভিযোগপত্রের দাবি বিভ্রান্তিকর
বুম দেখে সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র পাঠানোর দাবি সঠিক নয়।
২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের (DY Chandrachud) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিভ্রান্তিকর দাবিতে (misleading claims) সোশাল মিডিয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনা বলে ছড়ানো হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিরুদ্ধে ১৯০ পৃষ্ঠার অভিযোগ পত্র পাঠানো হয়েছে এই দাবি সঠিক নয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Gangopadhyay) তাঁর এজলাসে বিচারাধীন পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরাকারী সংবাদ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ভর্ৎসনা করেন। চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ২৮ এপ্রিল ২০২৩ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টকে। ভাইরাল পোস্টটি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ছড়ানো হচ্ছে।
ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ছবি সহ ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “জাস্টিস চন্দ্রচূড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লো, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী, ল মিনিস্টারের কাছে, করেছেন সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্ট লিটিগ্রান্ এসোসিয়েশনের সভাপতি, ১৯০ পৃষ্ঠার অভিযোগ পত্র। এটা খুবই প্রয়োজন ছিল খেলা শুরু হয়ে গেছে ভারত মাতার জয়”।
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
বুম দেখে একই দাবি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম গুগলে ‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১৯০ পাতার অভিযোগ’ লিখে কিওয়ার্ড সার্চ করে এব্যাপারে ২০২২ সালের একাধিক প্রতিবেদন খুঁজে পায়।
৯ অক্টোবর ২০২২ সংবাদ সংস্থা এএনআই-এ প্রকাশিত প্রতিবেদেন অনুযায়ী, রাশিদ খান পাঠান নামে এক ব্যক্তি ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে চন্দ্রচূড়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্র পাঠায়। পাঠান নিজেকে ‘সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্ট লিটিগ্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামের সংস্থার সভাপতি বলে দাবি করেন।
পাঠান তাঁর অভিযোগ পত্রে লেখেন, বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাঁর ছেলের নেতৃত্বাধীন কোনও মামলায় বিচারক হতে পারেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও চন্দ্রচূড় একটি মামলা শুনেছেন এবং তাঁর ছেলের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ওই একই ব্যক্তি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে স্বতঃপ্রোণোদিত একটি মামলায় তৎকালীন এক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) একই অভিযোগ আনলে সুপ্রিম কোর্ট ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে। ওই ব্যক্তি সহ আরও দু’জন যারা ২০১৯ সালে পিটিশন দায়ের করেছিলেন তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও তাদের তিনমাস কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালাত।
২০২২ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নাম ঘোষণা করলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সস্তা প্রচারের জন্য ওই আবেদনের কপি ভাইরাল করা হয় বলে খবরে প্রকাশ।
বুম এব্যাপারে দ্য নিউজ মিনিটে ১২ অক্টোবর ২০২২ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখতে পায়, বার কাউন্সিল তাদের বিবৃতিতে জানায় বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পুত্র অভিনভ চন্দ্রচূড় সাগর সূর্যবংশী নামের ব্যক্তির পক্ষে মামলা লড়েন বোম্বে হাইকোর্টে। পরে সেই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে।
বার কাউন্সিল তাদের বিবৃতিতে বলে এটা স্পষ্ট যে সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও বোম্বে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট পক্ষ এক নয়।
বুম দেখে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরানোর নির্দেশ দেওয়ার পর সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্ট লিটিগ্রান্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি বা অন্য কেউই রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা দেশের আইনমন্ত্রীর কাছে কোনও অভিযোগ পত্র পাঠাননি।
সম্পাদকীয় নোট: পূর্ববর্তী সংস্করণে এএনআই ও নিউজ মিনিট প্রকাশিত প্রতিবেদনের তারিখ ত্রুটিপূর্ণভাবে ২০২৩ সাল লেখা হয়েছিল যা পরে সংশোধন করা হয়েছে।