কোলাপুরে পাওয়া শিশু-বোঝাই ট্রাকের পুরনো ভিডিও রোহিঙ্গা মুসলিম দাবিতে ছড়াল
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২৩ সালের যখন কোলাপুরে একটি ট্রাকের ভেতর ৬৩টি শিশুকে পায় পুলিশ। কোলাপুরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র, বাচ্চাগুলি বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) বাচ্চা-ভর্তি একটি ট্রাক পাওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে ভিডিওতে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে পুলিশকে রোহিঙ্গা মুসলিম (Rohingya Muslim) বাচ্চাদের উদ্ধার করতে দেখা যায়।
এছাড়াও, দাবি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অনুপ্রবেশ করতে সাহায্য করছেন।
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২৩ সালের, যখন মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে ৬৩ জন শিশু ছুটি থেকে ফেরার পর একটি ট্রাক থেকে নামছিল। বাচ্চাগুলি কোলাপুরের আজারার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসে এবং গ্রীষ্মের ছুটিতে তারা গ্রামে গিয়েছিল। ছুটি শেষ হওয়ার পর তারা ট্রেনে করে কোলাপুরে এসে সেখান থেকে একটি ট্রাকে করে তাদের মাদ্রাসায় ফিরছিল।
ভাইরাল ভিডিওতে পুলিশের উপস্থিতিতে অনেকজন নাবালককে একটি ট্রাক থেকে নামতে দেখা যায়।
ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখে, "মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বহনকারী একটি ট্রাক ধরা পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ থেকে তাদের নিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ও পুরো দেশকে ভরিয়ে দিচ্ছে। হিন্দুরা কবে জাগবে ? দেশ মহা বিপদে পড়েছে হিন্দু সাবধান।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই: ভাইরাল ভিডিওটি ২০২৩ সালের
বুম ভাইরাল ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ১৮ মে, ২০২৩-এ প্রকাশিত টিভি৯ ভারতবর্ষের একটি সংবাদ প্রতিবেদন পায়।
টিভি৯ ভারতবর্ষের প্রতিবেদন জানায় কোলাপুরে একটি ট্রাকের ভিতরে ৬৩ জন শিশুকে পাওয়া যায়। এই সমস্ত শিশুরা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের সীমান্ত এলাকাবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে থেকে জানা যায়, কোলাপুরের কাছে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাচ্চারা তাদের নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। ছুটি কাটানোর পর তারা প্রথমে ট্রেনে করে রেলস্টেশনে পৌঁছয় এবং সেখান থেকে মাদ্রাসায় পৌঁছনোর জন্য শিশুদের একটি ট্রাকের পিছনে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্রাকে পাওয়া শিশুরা রোহিঙ্গা মুসলিম নয়
প্রতিবেদন অনুসারে, কয়েকটি হিন্দু সংগঠন ট্রাকের ভিতরে শিশুদের উপস্থিতি সন্দেহ করে পুলিশকে জানায়। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে বেশিরভাগ শিশুই বাংলা ও বিহারের। মাদ্রাসার মৌলবীকেও তলব করে পুলিশ।
শিশুদের সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়ার সময় মৌলবী জানান তারা তার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে এবং তারা গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে নিজেদের গ্রামে গিয়েছিল। বাচ্চাগুলি ট্রেনে করে কোলাপুরে ফিরে আসে এবং রেল স্টেশন থেকে তাদের ট্রাকে করে মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতিবেদনে কোলাপুরের তৎকালীন উপ-পুলিশ সুপার মঙ্গেশ চৌহানকে উদ্ধৃত করে নিশ্চিত করা হয়েছে, বাচ্চাগুলি কোলাপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষারত এবং গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে তাদের নিজ গ্রাম থেকে ফিরে এসেছিল।
আমরা ইন্ডিয়া টিভি, জি নিউজ এবং দৈনিক দিব্য মারাঠির মতো অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমেও এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন পেয়েছি। এই প্রতিবেদনগুলি অনুযায়ী, বাচ্চারা বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা, যারা কোলাপুরের আজারাতে অবস্থিত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। তাদের একটি ট্রাকে করে কোলাপুর থেকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসা হচ্ছিল।
আই.এ.এন.এস টিভির বুলেটিন অনুসারে, পুলিশ প্রথমে এটিকে শিশু পাচারের ঘটনা হিসাবে সন্দেহ করে। তবে তারা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় ওই ৬৩ জন শিশু বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহারাষ্ট্রের একটি মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা নিতে এসেছিল। ভিডিও রিপোর্টে তৎকালীন ডেপুটি পুলিশ সুপার মঙ্গেশ চৌহানের বক্তব্যও শোনা যায়।