অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা করলেন সিআইডিকে? বিভ্রান্তিকর দাবি
বুম দেখে ২৯ মার্চ ২০২৩ তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই/ইডিকে নিশানা করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ (TMC) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) শহিদ মিনারে (Shaheed Minar) সভার বক্তব্যের ছাঁটাই ভিডিও (Cropped Video) ভুয়ো (Fake Cliam) দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সিআইডি (CID) কে নিশানা করেছেন অভিষেক।
বুম যাচাই করে দেখে ২৯ মার্চ ২০২৩ তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ মিনারের সভায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই/ইডিকে নিশানা করেন, সিআইডি সম্পর্কে কিছু বলেননি।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ডায়মন্ড হারবারের সাংসাদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, “যবে থেকে সারদা হয়েছিল। আক্রমণ ছিল আমার দিকে। এই মদন মিত্র বসে আছে। কুনাল ঘোষ দীর্ঘদিন কাস্টডিতে ছিল। কি বলেছে জানেন এদেরকে? বলেছে অভিষেকের নাম নাও ছেড়ে দেবো। কি বলেছিল ওরা?”
ভিডিওটিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের অব্যবহিত পরে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “শুনলেন তো ভাইপো কি বললেন? পরিস্কার বললেন কুনাল ঘোষকে নাকি জেলে থাকাকালীন জেরাতে চাপ দেওয়া হয়েছিল অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য। এখানে আমাদের একটা সহজ সরল প্রশ্ন আছে। কুনাল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। তাহলে ভাইপো বলতে চাইলেন সিআইডি চাপ দিয়েছিল কুনাল ঘোষকে অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য। কিন্তু সিআইডি তো রাজ্যের অধীনস্থ সংস্থা। পুলিশ মন্ত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি পিসির দিকে আঙুল তুললেন ভাইপো? এটাকে কি তৃণমূলের দখলদারি বখরা নিয়ে পিসি ভাইপোর পারিবারিক বিবাদ নাকি মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছেন ভাইপো। আসলে তৃণমূলের সব দুর্নীতির এপিসেন্টারই তো পিসি-ভাইপো। এখন ইডি ভাইপোর কাঁধে নিশ্বাস ফেলছে বলেই কি শাক গিয়ে মাছ ঢাকতে গিয়ে ল্যাজে গোবরে হচ্ছেন ভাইপো।”
ভিডিওটি একই দাবি সহ ফেসবুকে ব্যাপকভাবে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “পিসির CID-র দিকে আঙুল তুললেন ভাইপো ?#ChorTMC”।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিওটি দেখুন এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে ২৯ মার্চ ২০২৩ ইউটিউবে তৃণমূল কংগ্রেসের নিজস্ব চ্যানেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সংবলিত ৩৬ মিনিটের একটি ভিডিও খুঁজে পায়।
ওই ভিডিওর শিরোনাম বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মাননীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহিদ মিনারের বিশাল জনসভায় বক্তব্য।” (মূল ইংরেজিতে শিরোনাম: Speech of Hon'ble General Secretary of AITC, Shri Abhishek Banerjee's mega rally at Shaheed Minar)
ওই ভিডিওটির ১৯ সেকেন্ড সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, “যবে থেকে সারদা হয়েছিল। আক্রমণ ছিল আমার দিকে। এই মদন মিত্র বসে আছে। কুনাল ঘোষ দীর্ঘদিন কাস্টডিতে ছিল। কি বলেছে জানেন এদেরকে? বলেছে অভিষেকের নাম নাও ছেড়ে দেবো। কি বলেছিল ওরা?
এরপর অভিষেককে বলতে শোনা যায়, “সারদা থেকে শুরু করে নারদা। তারপর হল গরু, কয়লা, এসএসসি। আমি যত সিবিআইয়ের ইনভেস্টিগেশন চলছে। আমি বুক ঠুকে বলে যাচ্ছি, সবার জন্য আইন আলাদা হলেও আমার জন্য আলাদা রাখার দরকার নেই। সবাই যদি দুর্নীতিতে কোনওভাবে যুক্ত থাকে। তার বিরুদ্ধে ইডি সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হোক। আর বর্তমানে যত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করছে—ইডি হোক বা সিবিআই, আমার যদি কোথাও যোগসাজস থাকে এবং প্রমান করতে পারে যে আমি যুক্ত। আমার পিছনে ইডি সিবিআই লাগাতে হবে না। সারদা হোক, নারদা হোক, টেট হোক, এসএসসি হোক, কয়লা হোক, গরু হোক এই শহিদ মিনারের মঞ্চে আমি মৃত্যুবরণ করবো। ফাঁসির মঞ্চে আমি কথা দিলাম।”
ভিডিওটি আসলে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেস এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আয়োজিত শহিদ মিনারের সভায় রাখা অভিষেকের বক্তব্য।
বর্তমানে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মন্ডল, কুন্তল ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তাধীন রয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গেই এই বক্তব্য রেখেছন। তিনি রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে নিশানা করেননি।
অভিষেকের একই বক্তব্যের রিপোর্ট দেখা যাবে টিভি৯ ভারতবর্ষে ২৯ মার্চ প্রচারিত খবরে। ১১ মিনিট ২৫ সেকেন্ড সময়ের পরে এই অভিষেকের এই বক্তব্যটি দেখা যাবে টিভি৯ ভারতবর্ষের বুলেটিনে।
অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে এই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারদা দুর্নীতি মামলায় ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গ্রেফতার করে। আদলাতের নির্দেশে তদন্তভার কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গেলে ২০১৪ সালে সিবিআই হেফাজতে যান কুনাল।