কোভিড-১৯ ঘিরে ডক্টর ডলোরেসের গুজবের পুরনো ভিডিও ফের ছড়াল
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক কোভিড বিষয়ক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সম্মেলনের।
কোভিড নিয়ে ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডলোরেস কাহিলের (Dolores Cahill) একটি পুরনো ভিডিও ভারত সহ বিভিন্ন দেশে করোনার (Coronavirus) নতুন করে সংক্রমণের খবরের মাঝখানে জিইয়ে তোলা হয়েছে।
৩ মিনিটের এই ভিডিওটি বার্লিনে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনাচক্র থেকে নেওয়া। মূল ভিডিওটি ১৮ মিনিটের, যাতে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও বক্তব্য পেশ করছেন। সেখানে ডাঃ কাহিলও বক্তব্য রাখেন এবং বাক-স্বাধীনতার নামে কোভিড-এর বিপদ কমিয়ে দেখানো বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।
তিনি বলেন, "আমি এই সুসমাচার জানাতে এসেছি যে করোনাভাইরাস একটি ঋতু-ভিত্তিক জীবাণু, যার সংক্রমণের উপসর্গ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রকট হয়। এবং যাদের এই উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের স্টেরয়েড ইনহেলার, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং জিংক ব্যবহার করা উচিত। এর নিয়ন্ত্রণের জন্যে লক-ডাউনের কোনও প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই ভয় পাবার, দরকার নেই মাস্ক বা মুখোশ পরার, পরস্পর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কিংবা বিচ্ছিন্নবাস বা কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার। গত বছর ফ্লু-এর জন্য ওরা মানুষদের গৃহবন্দি করে রেখেছিল, যে অসুখের চমৎকার চিকিত্সা আছে। তাই আমরা বলতে চাই, অযথা ভয় পাবেন না।"
এই বক্তব্যটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যার ক্যাপশনে লেখা— "এখন এটা আবার কেমন খবর? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখন পুরো উল্টো গাইছে! ওদের বক্তব্য, করোনা একটি ঋতু-ভিত্তিক জীবাণুর সংক্রমণ—কাশি, সর্দি, গলাব্যথার মিলিত রোগ, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় ঘটে এবং যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। করোনা আক্রান্তদের বিচ্ছিন্নবাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, পরস্পরের থেকে দূরত্ব বাজায় রাখারও দরকার নেই। এটা তত ছোঁয়াচেও নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংবাদিক সম্মেলন দেখুন। সকলকে দেখান!"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একই ধরনের অন্যান্য পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে।
আমাদের হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইন নন্বরেও (৭৭০০৯০৬৫৮৮) আমরা এই ভিডিও বার্তাটি পেয়েছি।
তথ্য যাচাই
বুম ইতিপূর্বে করোনা নিয়ে এই সব ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের পর্দাফাঁস করেছে, যার নমুনা আপনারা এখানে দেখে নিতে পারেন।
আমরা বার্লিনে সমবেত এই প্যানেলের বিজ্ঞানীদের অন্যান্য বক্তব্যের অসারতাও ইতিপূর্বে ধরিয়ে দিয়েছি, যেমন 'আরটিপিসিআর পরীক্ষার ফল ভুলভাল ইঙ্গিত দেয়' কিংবা 'করোনার জন্যে দায়ী ৫-জি প্রযুক্তি', ইত্যাদি।
এই বিশেষ ভিডিওটির পর্দাফাঁস করতে আমরা ইয়ান্ডেক্স-এর সাহায্যে অনুসন্ধান চালাই। আর তাতেই আমরা জানতে পারি, এই মহিলার পরিচয়। তিনি হচ্ছেন ডক্টর ডলোরেস কাহিল।
গুগল-এ খোঁজ করে আমরা দেখি, বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং এমনকী তাঁর নিজের ছাত্ররাও করোনা নিয়ে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানোর দায়ে তাঁকে দোষী ঠাওরেছেন।
তাঁর এই সব বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আয়ারল্যান্ডের ফ্রিডম পার্টির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তাঁকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপকের পদ থেকেও তিনি ইস্তফা দেন।
ডক্টর ডলোরেস কাহিলের বক্তব্য ছিল, করোনার প্রতিরোধে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এবং বিচ্ছিন্নবাসের কোনও উপযোগিতা নেই। অথচ 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের' (সিডিসি) ওয়েবসাইটের ভিত্তিতে ঠিক এই বিষয়গুলির উপরেই করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যবস্থাপত্র জারি করা হয়ে থাকে।
ডলোরেস কাহিল যে সংগঠনের শীর্ষ পদে আসীন ছিলেন, সেই 'ওয়ার্ল্ড ডক্টর্স অ্যালায়েন্স'-এর সম্পর্কেও আমরা খোঁজখবর নিই এবং দেখি যে করোনা প্যান্ডেমিকের ওপর তাদের প্রচার করা অনেক রিপোর্টেই ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়েছে। সেই বিষয়ে জানতে এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন।