না, এটা শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খানের বিমানবন্দরে প্রস্রাব করার দৃশ্য নয়
বুম দেখে শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান নয়—২০১৩ সালের ভিডিওটিতে কানাডার অভিনেতা ব্রনসন পেলেটিয়ারকে দেখা যাচ্ছে।
এক মত্ত যুবক বিমানবন্দরের (Airport) কার্পেটের উপর প্রস্রাব (peeing) করছে, এমন একটি অপ্রীতিকর দৃশ্যের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে ভুয়ো ক্যাপশন সহ দাবি করা হচ্ছে যে, যুবকটি নাকি বলিউড (bollywood) অভিনেতা শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খান (Aaryan Khan)।
বুম দেখলো, ভাইরাল ভিডিওর দাবিটি ভুয়ো এবং যুবকটি আসলে কানাডার অভিনেতা ব্রনসন পেলেটিয়ার (Bronson Pelletier)।২০১৩ সালের ঘটনা এটি।
গত বছরের শেষ দিকে আরিয়ান খান সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন গোয়াগামী একটি ক্রুজ জাহাজে মাদক নিয়ন্ত্রক ব্যুরোর হাতে নৈশকালীন তল্লাশি ৩ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়ার পর। তাঁর সঙ্গেই আরবাজ মার্চেন্ট এবং মুনমুন ধামেচা সহ আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই হানাদারিতে ১৩ গ্রাম কোকেন, ৫ গ্রাম মেফেড্রন, ২১ গ্রাম চরস, ২২টি এক্সট্যাসি ট্যাবলেট এবং ১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। আরিয়ান খানকে ২৮ অক্টোবর জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আপাতভাবে নেশাগ্রস্ত এক যুবককে বিমানবন্দরের কর্মীরা ঘিরে ধরেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই যুবকটি লাউঞ্জের ভিতরেই প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে শুরু করে, যতক্ষণ না একজন নিরাপত্তারক্ষী তাকে পাকড়াও করে নিরস্ত করে।
ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, "মার্কিন বিমানবন্দরে আরিয়ান খান। এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই শাহরুখ খান মাদক-বিরোধী প্রচার শুরু করেছিলেন।"
দেখতে অস্বস্তিকর বলে বুম ভিডিওটি প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত করেনি।
একই ভিডিও শেয়ার করে একটি হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছেঃ "একটি মার্কিন বিমানবন্দরে আরিয়ান খান । আরিয়ান বিদেশে দেশের এবং তাঁর পিতা শাহরুখ খানের সুনাম নষ্ট করছেন । এই সব তরুণদের প্রতি ধিক্কার। এই ভিডিওটি গ্রুপে শেয়ার করা হচ্ছে এই আশায় যে আগামী প্রজন্ম এ থেকে শিক্ষা নেবে ।"
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: *आर्यन खान अमेरिका के एयरपोर्ट पर शाहरुख खान के बेटे विदेशों में बाप और देश का नाम डूबा रहें हैं लानत है ऐसे लोगों पर अच्छी पोस्ट है आशा है भविष्य में नौजवान पीढ़ी शिक्षा लेगी अतः ग्रुप में भेज रहे हैं')
বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও ভিডিওটি যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি থেকে একটি স্ক্রিনশট নিয়ে সেটির খোঁজ করে দেখেছে, ২০১৩ সালের এই ঘটনাটির বেশ কিছু সংবাদ-প্রতিবেদন রয়েছে।
২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি 'টিএমজেড'-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওর এই তরুণটিকে 'টুইলাইট' চলচ্চিত্রের অভিনেতা ব্রনসন পেলেটিয়ার হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, "বিমানবন্দরে প্রস্রাব করার জন্য টুইলাইট অভিনেতার শাস্তি!"
বর্তমানে যে ভাইরাল ভিডিওটি ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার হচ্ছে, প্রতিবেদনে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
২০১৩ সালেরই ৩ জানুয়ারি ডেইলি মেল গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও ঘটনাটি উল্লেখিত হতে দেখেছি আমরা।
প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়—"লস এঞ্জেলেস বিমানবন্দরে প্রবল নেশাসক্ত অবস্থায় পেলেটিয়ারকে হোঁচট খেতে দেখা গেছে একটি ফুটেজে, যাকে একজন নিরাপত্তারক্ষী বসানোর চেষ্টা করছে"। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, "অভিনেতাকে প্রকাশ্যে মদ্যপের মতো আচরণ করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়"।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরের, যখন পেলেটিয়ারকে বিমানের ভিতরে প্রবল নেশাগ্রস্তের মতো আচরণ করায় এবং বিমানযাত্রার অযোগ্য মনে করায় উড়ান থেকে নামিয়েও দেওয়া হয়েছিল। পরে এই অপরাধে পেলেটিয়ারের শাস্তি হয় দু'বছরের জেল।
আরও পড়ুন: 'দ্য ফায়ার যোগী' তথ্যচিত্র ছড়াল বিবিসির তোলা কুম্ভমেলার ঘটনা বলে