বাংলাদেশ: চাঁদপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের পুরনো ছবি সাম্প্রতিক দাবিতে ভাইরাল
বুম দেখে ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালে দুর্গা পুজোর সময় বাংলাদেশের চাঁদপুরের একটি মন্দিরে হামলার পরবর্তী অবস্থার ছবি, বরিশালের নয়।
একটি মণ্ডপে ভগ্ন দূর্গা প্রতিমার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বিভ্রান্তিকর দাবিসহ। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীর একাংশের দাবি ছবিতে ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের (Bangladesh) বরিশালের গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে হামলার পরে দূর্গা প্রতিমার অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ভগ্ন মূর্তি ছাড়াও, দেবী দুর্গার ছবির ব্যানার টানিয়ে পুজো করার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে যা শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে মূর্তি ভাঙচুরের (idol vandalisation) ফলে ওই মন্দিরে এভাবে পুজো করা হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভগ্ন মূর্তির ভাইরাল ছবিটি পুরনো এবং বরিশালের গণপাড়ার দুর্গা মন্দিরের নয়। ছবিটি ১৪ অক্টোবর, ২০২১ সালে দুর্গা পুজো চলাকালীন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের একটি মন্দিরে হামলা ও দূর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের পরবর্তী দৃশ্যের।
গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নিশ্চিত করে বুম বাংলাদেশকে জানান এবছর, তাদের মন্দিরে বন্যার জল জমে থাকার ফলে তারা দুর্গা মূর্তি তৈরি করতে পারেননি। তাই, তারা দেবী দুর্গার ব্যানারে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও প্রথম দিন থেকে এভাবেই পুজো করছেন; মূর্তি ভাঙচুরের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
৪ অক্টোবর, ২০২৪-এ বরিশালের বাকেরগঞ্জে গভীর রাতে পশ্চিম শ্যামপুর দেউরী বাড়ি সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে দূর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর করে দুষ্কৃতিরা। মূর্তি প্রায় সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেছিল কেবল রঙ করা বাকি ছিল।
ত্রিপুরা নিউজ ইনফো নামক একটি গণমাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে দাবি করে, "#Bangladesh : বাংলাদেশে দূর্গা পূজার মূর্তি ভাঙচুর!! ১০/১০/২০২৪ গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, কাশিপুর, বরিশাল, বাংলাদেশ।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে হিসাবে লিখেছেন, "মূর্তি ভাঙার পর ব্যানার টানিয়ে পুজা❗যেদিন ব্যানারও টাঙ্গাতে পারবেনা,সেদিন কী করবেন সনাতনীরা❓গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ী সার্বজনীন দূর্গা মন্দির,কাশিপুর, বরিশাল, বাংলাদেশ।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাঙচুর করা দুর্গা প্রতিমার ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালের যখন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে দুর্গা পুজোর সময় হামলা করে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। বরিশালের কাশিপুরে গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে দেবী দুর্গার ব্যানার টানিয়ে পুজো হয় বন্যার জল জমে থাকার জন্য মূর্তি ভাঙচুরের কারণে নয়, নিশ্চিত করে জানান ওই মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক।
ভগ্ন মূর্তির ভাইরাল ছবি
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ছবিটির গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। আমরা নিউজ বাংলা ২৪-এর ২০২১ সালের ২১ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই।
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, "১৩ অক্টোবর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় হাজারখানেক মানুষের মিছিল থেকে হামলা হয় স্থানীয় একটি মন্দিরে।"
প্রতিবেদন অনুসারে, "তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্য দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।"
এরপর, আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে বিবিসি বাংলার ১৪ অক্টোবর, ২০২১-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় প্রথমে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরান পাওয়া যায়। এই ঘটনার জেরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় যার প্রকোপে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা করা হয়। পুলিশ ও হামলাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।
বিডিনিউজ২৪.কম-এর এই ঘটনা সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলা করা হয় এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয় সেখানে।
দেবী দুর্গার ব্যানার টানিয়ে পুজো
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখে দেবী দুর্গার ব্যানার টানিয়ে পুজো করা হয় বরিশালের কাশিপুরে গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে, তবে সেখানে কোনও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।
বুম বাংলাদেশের প্রতিনিধি তৌসিফ আকবর গণপাড়া বিশ্বাস বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভাইরাল দাবি নস্যাৎ করে বলেন তাদের মন্দিরে মূর্তি ভাঙচুরের দাবিটি পুরোটাই গুজব। তিনি জানান বাংলাদেশে ২০২৪ সালে হওয়া বন্যার ফলে তাদের মন্দিরে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে ছিল এবং তারা প্রথমে পুজো না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, পরে তারা ঠিক করে একটি ব্যানার টানিয়ে ঘট পুজো করবেন।
স্বপন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, "আমরা এই বছর ব্যানার দিয়ে প্রথম থেকেই থানা, বিভাগ, উপজেলা, জেলা সব জায়গায় এক মাস আগেই রেজোলিউশনের কপি দিয়েই আমরা ঘট পূজা দিয়েছি। এখন হঠাৎ করে যদি কেউ বলে আমাদের প্রতিমা ভেঙে ফেলেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, এটা মেনে নেওয়া যায় না।"
তিনি মূর্তি বানালে তা ভেঙে ফেলার আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দেন এবং জানান ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া তাদের পুজোয় এখনো অবধি এধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিংঃ তৌসিফ আকবর, বুম বাংলাদেশ)