জন্মদিনে মুসলিমরা কেকে মাদক মেশাচ্ছে মিথ্যে দাবিতে ছড়াল নাটিকা ভিডিও
বুম দেখে ভিডিওটি চিত্রনাট্যের ভিত্তিতে তৈরি। অনুগামী বাড়াতে একটি ফেসবুক পেজ এই ধরনের ভিডিও নিয়মিত পোস্ট করে।
নাট্যরূপ (Dramatized) দেওয়া একটি ভিডিওয় কয়েক জনকে এক মহিলার জন্মদিন উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটি মুসলমানদের (Muslims) নিশানা করে এক মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে দু'জন মহিলা ও চারজন পুরুষকে একটি কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে। যে কেকটিতে নাকি মেশানো আছে ঘুমের ওষুধ।
বুম দেখে, ভিডিওটি চিত্রনাট্য লিখে ও অভিনয় করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা দেখি, ওই ভিডিওটির উৎস হল এমন একটি ফেসবুক পেজ, যেটি অভিনীত ভিডিওকে সিসিটিভি ফুটেজ বলে চালায়। এই ভাবে সেটি ফলোয়ার বা অনুগামী বাড়ানোর চেষ্টা করে।
এই রকম ভিডিওর একটি সিরিজের মধ্যে এটি হল সাম্প্রতিকতম। এবং সোশাল মিডিয়ায় সেটি সম্পর্কহীন একটি সাম্প্রদায়িক দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুকে প্রভাব খাটাতে পারেন এমন ব্যক্তিদের শেয়ার-করা বেশ কিছু ভিডিও বুম খন্ডন করেছে। অনুগামী পেতে তাঁরা অভিনীত ভিডিও শেয়ার করে থাকেন। এবং সেগুলি ভাইরাল হয়ে যায়। ওই প্রভাবান্বিত করার মতো ব্যক্তিরা সাধারণত মডেল বা অভিনেতা অভিনেত্রী হন।
তাঁরা তাঁদের আপলোড করা ভিডিওতে ঘোষণাও করে দেন যে, ভিডিওটি 'শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে' তৈরি। কিন্তু ওই ভিডিওগুলির অপব্যবহার করা হয়। এবং মিথ্যে ক্যাপশন সমেত মুসলমানদের নিশানা করে শেয়ার করা হতে থাকে।
ভাইরাল ক্লিপটিকে দেখে সিসিটিভি ফুটেজ বলে মনে হয়। সেটিতে চারজন পুরুষ ও দু'জন মহিলাকে একটি জন্মদিনের পার্টিতে দেখা যাচ্ছে। পার্টিটি হচ্ছে একটি বাড়ির ব্যালকনিতে তিনজন পুরুষ সেলফি তোলার নাম করে মহিলাদের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেন অন্যদিকে। সেই সুযোগে, চতুর্থ পুরুষ কেকটিতে মাদক দ্রব্য মিশিয়ে দেন। দুই মহিলা ওই কেক খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়লে, পুরুষেরা তাঁদের একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে চলে যান।
ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, "এই মোল্লারা যদি আপনার বন্ধু হন, তাহলে দেখুন তাঁরা কী ভাবে জিহাদ চালান। গাজওয়া-এ-হিন্দ। প্রথমে তাঁরা আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। তারপর যৌন ভিডিও তুলে আপনাদের যৌনদাসীতে পরিণত করেন। তারপর আসে ব্ল্যাকমেল, ধর্মান্তরিতকরণ ও আরও অনেক কিছু যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। জাগুন, হিন্দুরা!"
(হিন্দিতে লেখা ক্যপশন: ये मुल्ले अगर आपके दोस्त है तो देख लीजिए, ये जिहाद कैसे करते है जिहाद गजवा ए हिंद पहले बेहोश करके सेक्स क्लिप निकालते है फिर आपको बनाते है सेक्स स्लेवरी। फिर ब्लेकमेलिंग, धर्म परिवर्तन और भी बहुत कुछ जो आप सपने में भी नही सोच सकते जागो मेरे हिंदू शेरो जागो, ऐसे दोस्तों से बचें, इससे पहले कि बहुत देर हो जाए, जागो।)
পোস্টটি এখানে দেখুন।
একই দাবি সমেত ওই ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক পেজ ও টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জন ফোর্ডের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ মিথ্যে দাবিতে ছড়াল মার্কিন ব্যক্তির ছবি
তথ্য যাচাই
আগেও আমরা এই ধরনের অভিনীত ভিডিও যাচাই করেছিলাম। সেই সূত্র ধরে, আমরা 'বি কেয়ারফুল বার্থডে কেক' (জন্মদিনের কেক থেকে সাবধান), এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে দেখা যায় যে, সঞ্জনা গলরাণী'র যাচাই-করা ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
ভিডিওটি ৪ ডিসেম্বর, ২০২১-এ গলরাণী'র পেজে আপলোড করা হয়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "সাবধান হন! দেখার জন্য ধন্যবাদ! মনে রাখবেন এই পেজে চিত্রনাট্য-ভিত্তিক নাটক ও প্যারডি উপস্থাপন করা হয়। ওই ছোট ছবিগুলি এক মাত্র বিনোদন ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তৈরি!"
ভিডিওটি ১০ মিলিয়ন বা এক কোটিবার দেখা হয়েছে।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
গলরাণী'র ফেসবুক পেজে তাঁকে একজন অভিনেত্রী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর পেজের ভূমিকায় বলা হয়েছে, "সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য আমি ভিডিও ও চিত্রনাট্য-ভিত্তিক নাটক শেয়ার করি।" তাছাড়া আমরা তাঁর টাইমলাইনে বেশ কিছু ওই ধরনের ভিডিও দেখতে পাই, যেগুলি সিসিটিভি ফুটেজ হিসেবে শেয়ার করা হয়।
বুম দেখে গলরাণীর যাচাই-করা হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা অভিনীত ভিডিওগুলিতে লাল রঙের গোল বা বর্ষামুখের চিহ্ন ব্যবহার করে বিভিন্ন জিনিসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। আমরা এও দেখি যে, সঞ্জনা গলরাণীর পেজ থেকে নেওয়া ভিডিওটি সম্পাদনা করার ওয়েবসাইট ক্লিডিও.কম'র সাহায্যে সম্পাদনা করা হয়েছে। ওই ওয়েবসাইটের লোগোটি ভাইরাল ভিডিওটিতেও দেখা যাচ্ছে। সম্পাদনা করার ওই সরঞ্জামটি ব্যবহার করে, ভিডিওটিতে "বিওয়্যার অফ জিহাদি (জিহাদি থেকে সাবধান)" শব্দগুলি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুম ওই পেজ ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁর উত্তর পাওয়ার পর এই প্রতিবেদন আপডেট করা হবে।
আরও পড়ুন: হরিয়ানায় গোবর খাওয়া চিকিৎসক কি হাসপাতালে ভর্তি? একটি তথ্য যাচাই