দেশে ধর্ষণের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলে ২০১০-এর তথ্য পোস্ট করলেন শ্রীলেখা মিত্র
বুম দেখে ধর্ষণের নিরিখে ভারতে প্রথম দশ রাজ্যের যে তালিকা শ্রীলেখা মিত্র পোস্ট করেছেন সেটি ২০১০ সালের তথ্য, সাম্প্রতিক নয়।
ধর্ষণের পরিসংখ্যানে ভারতের (India) প্রথম দশটি রাজ্যের একটি পুরনো তালিকার ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সেটিকে সাম্প্রতিক বলে বিভ্রান্তিকর দাবি করেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)। উক্ত তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিয়ে কটাক্ষও করেন তিনি।
বুম দেখে ধর্ষণের নিরিখে ভারতের প্রথম দশ রাজ্যের যে তালিকা অভিনেত্রী পোস্ট করেছেন সেটি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর প্রকাশ করা ২০১০ সালের তথ্য। সাম্প্রতিক নয়।
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের পর সরব হয়ে পথে নেমেছিলেন রাজ্য তথা দেশবাসী। জুনিয়র ডাক্তাররা দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি করে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চালিয়েছিলেন কর্মবিরতি এবং তাদের সেই আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষও।
তবে, ২০১২ সালে নির্ভয়া কাণ্ডের পর ধর্ষণের ক্ষেত্রে আইনে বেশ কিছু সংশোধন হলেও দেশে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিকার হয়নি। বরং ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ৩১০০০-এরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
এরই মধ্যে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র দেশে সাম্প্রতিক ধর্ষণের নিরিখে থাকা প্রথম দশটি রাজ্য দাবি করে এক তালিকা পোস্ট করেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। ওই তালিকা অনুযায়ী ৩১১৪টি ধর্ষণের ঘটনা সহ শীর্ষস্থান দখল করে মধ্যপ্রদেশ, ২৩০৭টি ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানাধিকার করে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের পরে ওই তালিকায় অসম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিসগড়, ওড়িশা ও বিহারের নামও দেখতে পাওয়া যায়।
তালিকা অনুযায়ী ভারতে সাম্প্রতিক মোট ধর্ষণের সংখ্যা ২১, ৮৮৪টি বলে দাবি করা হয় অভিনেত্রীর সেই পোস্টে।
তালিকাটি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করে অভিনেত্রী লেখেন, "১ নম্বর স্থানটা হাতছাড়া হয়ে গেল ইশশ...বুঝুন আমরা কোথায় থাকি।"
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের পোস্ট করা তালিকাটির ছবিতে "দ্য হিন্দু" শব্দ দুটি ইংরেজিতে লেখা আছে। এরপর, আমরা গুগলে ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা একই তালিকার ছবি দ্য হিন্দুর ২৮ অক্টোবর, ২০১১-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এই তালিকাটি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী তৈরি।
২০১১ সালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০-এ পাঁচটি মহানগরের মধ্যে প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে দিল্লিতে ৩.২ জন, মুম্বাইয়ে ১.২ জন, ব্যাঙ্গালোরে ১.১ জন, চেন্নাইয়ে ০.৭ জন এবং কলকাতায় ০.২ জন ধর্ষিত হয়েছে। কলকাতা ও বারাণসীর পরিসংখ্যান ভারতের যেকোনো শহরের থেকে কম দেখা গিয়েছে।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
এরপর, আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতে ধর্ষণের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসন্ধান করে দেখি সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ২০২২ সালের।
ইন্ডিয়া টুডের ৪ ডিসেম্বর ২০২৩-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এনসিআরবির প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় ২০২২ সালে ৩১, ৫১৬টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে ধর্ষণের সর্বাধিক অভিযোগ করা হয়েছে রাজস্থানে (৫৩৯৯), তারপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৩৬৯০) এবং মধ্যপ্রদেশ (৩০২৯)। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে শীর্ষ স্থানে রয়েছে উত্তর প্রদেশ (৬৫, ৭৪৩)।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।