রোগী মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করা মহিলা কোনও প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তার নন
ভিডিওতে উপস্থিত দেবপ্রিয়া বন্দোপাধ্যায় বুমকে জানান, তিনি পেশায় একজন থিয়েটার অভিনেত্রী, কোনও জুনিয়র ডাক্তার নন।
কলকাতায় (Kolkata) স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভে অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকদের (Junior Doctor) সমর্থনে আসা একজন প্রতিবাদকারী মহিলার সাক্ষাৎকারের এক সম্পাদিত অংশ সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সমাজমাধ্যমে ছড়ান ওই ভিডিওতে মহিলাটিকে একজন প্রতিবাদকারী জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে চিহ্নিত করে রোগী মৃত্যু সম্পর্কে তার মন্তব্যের সমালোচনা করা হয়।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ওই মহিলা কোনও প্রতিবাদকারী জুনিয়র ডাক্তার নন। আমরা দেবপ্রিয়া বন্দোপাধ্যায় নামের ওই মহিলার সাথে কথা বলে জানতে পারি পেশাগতভাবে তিনি একজন থিয়েটার অভিনেত্রী।
২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১ বছরের এক কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। এই ভয়াবহ হত্যা ও স্বাস্থ্য দফতরের দুর্নীতির প্রতিবাদে বর্তমানে কর্মবিরতি পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। আরজি করে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে চিকিৎসকদের ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হয় হাসপাতালে পরিষেবা অব্যাহত রাখার জন্য। তবে, জুনিয়র ডাক্তাররা সেই কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার ডাকে সাড়া না দিয়ে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসকদের সমর্থনে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষও।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে এবিপি আনন্দের এক সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, "কোন জায়গা থেকে ডাক্তারদের যে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে আপনাদের সামিল হওয়া?"
ওই প্রশ্নের উত্তরে মহিলাটি জানান, "কালকে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তাররা সত্বর কাজে ফিরুন কারণ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে, যে কথাটা ভীষণই রকম একপেশে। এটা ঠিক কথা যে মানুষজন মারা যাচ্ছেন কিন্তু এটাও বিচার্য বিষয় রোজ কত মানুষ মারা যায়।"
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে রোগী মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয় ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে। ভিডিওটির বিষয়ে লেখা হয়, "মানুষ তো রোজই মরে বাহঃ বাহঃ বাহঃ কি সাঙ্ঘাতিক কথাবার্তা। মানুষ তো রোজই মরে, কি সুন্দর কথা। নমস্কার ডাক্তার আপনাকে, আমরা জানতাম প্রাণ বাঁচান, ভুল জানতাম।"
পোস্টটি দেখুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অন্য এক ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, "এটা দেখুন, এরা করবে ডাক্তারি ? সারা বাংলা তে ইতিমধ্যেই যেখানে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৫ এর বেশী, সেখানে এরা এরকম ঘৃণ্য চক্রান্তে নেমেছে! ছিঃ, ধিক্কার জানাই! এই যদি জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থা হয়, তাহলে বহিষ্কার করা হোক এদের, বাতিল করা হোক লাইসেন্স।"
পোস্টটি দেখুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই: রোগী মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করা মহিলা কোনও জুনিয়র ডাক্তার নন
বুম এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। আমরা এর মাধ্যমে এবিপি আনন্দের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত এক শর্টস দেখতে পাই যেখানে ওই মহিলাকে নিজেকে নাগরিক বলে উল্লেখ করতে দেখা যায়।
আমরা সেই সাক্ষাৎকারের সরাসরি সম্প্রচারের এক অংশও এবিপি আনন্দের ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাই। নিচে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে হওয়া সেই লাইভ সম্প্রচারণের ১০:২১: ২৫ ঘন্টা থেকে ভাইরাল ভিডিওর অংশটি দেখতে পাওয়া যাবে।
এবিপি আনন্দের একজন সাংবাদিককে সল্টলেকে পোস্টার নিয়ে দাঁড়ানো ওই মহিলাকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, "আপনারা কোন হাসপাতাল থেকে আসছেন?" সাংবাদিকের সেই প্রশ্নের উত্তরে মহিলাটি বলেন, "আমি কিন্তু নাগরিক, আমি কোনও ডাক্তার নই।"
এরপর তাকে জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যভবন অভিযানে সামিল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "কালকে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তাররা সত্বর কাজে ফিরুন কারণ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে, যে কথাটা ভীষণই রকম একপেশে। এটা ঠিক কথা যে মানুষজন মারা যাচ্ছেন কিন্তু এটাও বিচার্য বিষয় রোজ কত মানুষ মারা যায়। আর সমস্ত মানুষের মারা যাওয়ায় কি জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য হচ্ছে?"
আমরা লক্ষ্য করি সমাজমধ্যমে ছড়ান ভিডিওতে তার নাগরিক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া ও উপরোক্ত বক্তব্যের শেষের অংশটি সম্পাদনা করে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে দৃশ্যমান ওই মহিলার ফেসবুক প্রোফাইলটিও আমরা খুঁজে পাই। জানা যায়, তার নাম দেবপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুমের তরফে দেবপ্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাইরাল দাবি নাকচ করে নিজেকে একজন থিয়েটার অভিনেত্রী বলে উল্লেখ করেন।
দেবপ্রিয়া বলেন, "আমাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে আমি কি জুনিয়র ডাক্তার - আমি প্রথমেই বলি না, আমি কিন্তু নাগরিক, জুনিয়র ডাক্তার নই।" তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি প্রতিটা মৃত্যু একই রকম ভয়াবহ, তিলোত্তমার মৃত্যু যতটা ভয়াবহ বিক্রমের মৃত্যুও ততটাই ভয়াবহ। সবকটা মৃত্যুর জন্যই কি জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা যায়? এই প্রশ্নটাই ছিল আমার।"
এছাড়াও তিনি জানান, "এবিপিতে বলা আমার পুরো বক্তব্যটা যারা শোনেননি বা শুনেও ইচ্ছাকৃত ভাবে সম্পাদনা করে তার প্রসঙ্গ বাদ দিলেন, আমার পরিচয় বিকৃত করে অন্য পরিচয়ে একটা মিথ্যে অপপ্রচার করার চেষ্টা করলেন শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ও তাদেরকে কলংকিত করার জন্য - তার আমি তীব্র ধিক্কার জানাই।"