সাম্প্রতিক বলে ছড়াল ভাগাড় কান্ড সংক্রান্ত ২০১৮ সালের প্রতিবেদন
বুম দেখে ভাগাড় কাণ্ড নিয়ে উক্ত বুলেটিনটি নিউজ ১৮ বাংলা ২০১৮ সালে সম্প্রচার করেছিল।
মূলতঃ কলকাতা (Kolkata) ও তার আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ভাগাড়ের মাংস (Dumpyard Meat) সরবরাহ চক্র ফাঁসের একটি পুরনো নিউজ বুলেটিন সাম্প্রতিককালের ঘটনা দাবি করে বর্তমানে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বুম যাচাই করে দেখে নিউজ ১৮ বাংলার ভাইরাল এই বুলেটিন কোনও সাম্প্রতিক ঘটনার নয়। ২০১৮ সালের ওই রিপোর্টে সেসময় পশ্চিমবঙ্গে ভাগাড়ের মাংস সরবরাহকারী এক চক্র ফাঁসের ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সরবরাহকারী এক চক্রকে ২০১৮ সালে ধরে ফেলে পুলিশ। তদন্ত করে চক্রের পাণ্ডা বিশ্বনাথ ঘড়াইকে গ্রেফতার করা হয় এবং এরই সাথে হাজার হাজার কেজি পচা মাংস ভিন রাজ্য ও আন্তর্জাতিক স্তরে পাচার হওয়ার তথ্যও সামনে চলে আসে। ওই ঘটনার পর রেস্তোরাঁয় কোনও মাংসের পদ কিনে খাওয়া নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় রাজ্যবাসীর মধ্যে। একারণে সেসময় অনেকেই মাংসের কোনও পদ বাইরে থেকে কিনে খাওয়ার থেকে কয়েক মাস বিরত থাকেন।
ওই আতঙ্কের রেশ ধরেই পশু মাংসের চক্র ফাঁসের এই ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে আবারও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। সেই ভিডিও প্রতিবেদনের উপরের অংশে সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ বাংলার প্রতীক দেখা যায়।
প্রতিবেদনটিতে কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও তাদের জেরা করে কলকাতা ও তার আশেপাশের অঞ্চলের খাবারের দোকান এবং রেস্তোরাঁয় সেই মাংস সরবরাহ চক্র সংক্রান্ত পুলিশের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করা হয়।
ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, "এরপর কাবাব, বিরিয়ানি খেতে যাবে কেউ? আর কে কে বিরিয়ানি খাবি বল।"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই দাবিসহ ভিডিওটি হোয়াটস্যাপেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ্য করে প্রতিবেদনটির উপরে ডানদিকে নিউজ ১৮ বাংলার একটি প্রতীক দেখা যাচ্ছে।
আমরা এই সুত্র ধরে, ফেসবুকে ভাগাড়ের মাংস চক্র ফাঁস সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করি। সার্চের মাধ্যমে সেই ভিডিও প্রতিবেদন আমরা পেয়ে যাই নিউজ ১৮ বাংলার ফেসবুক পেজে।
২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালে আপলোড করা এই ভিডিও প্রতিবেদনের ক্যাপশন থেকে জানা যায় কতখানি বিস্তৃত ছিল এই পচা মাংস পাচারের চক্র। নিউজ ১৮ বাংলার সেই রিপোর্টের ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "শুধু কলকাতা নয়, ভাগাড়ের মাংসের কারবার এ রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়েছিল ভিনরাজ্যেও। ধৃতদের জেরা করে বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাতে স্পষ্ট, ভাগাড়ের মাংস কারবারিদের প্রতিটি পদক্ষেপেই ছিল পরিকল্পনার ছাপ। মাংস সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার দেখে অবাক তদন্তকারীরাও।"
দেখুন এখানে।
নিউজ ১৮ বাংলা ছাড়াও ভাগাড়ের মাংস পাচার সেই চক্র সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে বাংলার মূলধারার অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও। ২০১৮ সালের ৫ মে প্রকাশিত এই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ভাগাড়ের মাংস পাচার চক্রের অন্যতম অভিযুক্ত বিশ্বনাথ ঘড়ুই ওরফে বিশু বেআইনি এই কারবার করে হয়ে ওঠে কোটিপতি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "বাবা ছিলেন মাছ ব্যবসায়ী। সেই সূত্রেই একসময় গড়িয়াহাট মার্কেটে মাছ বিক্রি করত বিশ্বনাথ ঘড়ুই ওরফে বিশু। মাছের ব্যবসার সময়েই ভাগাড়ের মাংসের কারবারে জড়িত এক লিঙ্কম্যানের সঙ্গে আলাপ। সাত-আট বছর আগে তার হাত ধরেই ভাগাড়ের মাংসের বেআইনি কারবার শুরু বিশুর। সেই ব্যবসা কয়েক বছরে এতটাই ফুলেফেঁপে ওঠে যে, শুধু শহর বা শহরতলির বিভিন্ন প্রান্তই নয়, নারকেলডাঙায় তার ভাড়া নেওয়া কোল্ড স্টোরেজ থেকে ভাগাড়ের মাংস পৌঁছে যেত দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো শহরেও। আর এ ভাবেই ধীরে ধীরে ‘মাছ বিশু’ কোটিপতি ‘মাংস বিশু’ হয়ে ওঠে। "
এছাড়া, সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে ফের ভাগাড়ের মাংস চক্র ফাঁস হওয়া সংক্রান্ত কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাইনি।