পরীক্ষা না দিয়েই আইএএস স্পিকার ওম বিড়লার কন্যা অঞ্জলি? না, দাবিটি ভুয়ো
বুম দেখে লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লার কন্যা অঞ্জলি বিড়লা ইউপিএসসির প্রিলিমিনারি এবং মেইন দুটো পরীক্ষাই পাশ করেছেন।
সম্প্রতি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার (Om Birla) মেয়ে অঞ্জলি বিড়লা (Anjali Birla) পরীক্ষা ছাড়াই আইএএস (IAS) অফিসার হয়েছেন ভুয়ো দাবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওম বিড়লার সঙ্গে কন্যা অঞ্জলির একটি ছবি শেয়ার করে নেটিজেনদের একাংশ দাবি করেছেন ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষা না দিয়েই আইএএস অফিসার হয়ে গেছেন অঞ্জলি বিড়লা।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল দাবিটি ভুয়ো। লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লার কন্যা অঞ্জলি বিড়লা ইউপিএসসির প্রিলিমিনারি এবং মেইন দুটো পরীক্ষাই পাশ করেছেন।
ভারতে আইএএস অফিসার হিসাবে কর্তব্যরত হতে গেলে ইউপিএসসি অর্থাৎ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা, যা প্রিলিমিনারি ও মেইন দুভাগে হয়, দুটোতেই পাশ করতে হয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি পরিচালিত ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন পরীক্ষা নিটে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় এবং সিবিআই তার তদন্ত করছে। নেট পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কায় নির্দিষ্ট দিন থেকে বাতিল করে অন্য পরীক্ষার দিন নির্ধারিত করা হয়। এইসব দুর্নীতির অভিযোগের মাঝেই ওম বিড়লা কন্যা অঞ্জলি বিড়লার বিরুদ্ধে এমন দাবি ভাইরাল হয়েছে।
ওম বিড়লা ও কন্যা অঞ্জলি বিড়লার ভাইরাল ছবিতে '"পরীক্ষা না দিয়ে' ইউপিএসসি পাশের অভিযোগ স্পিকার-কন্যার বিরুদ্ধে!" লেখাটি নীচের দিকে দেখা যায়। এই ছবিটি শেয়ার করে কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী ওম বিড়লার মেয়েকে বিদ্রুপ করে ক্যাপশনে লেখেন, "স্পিকার ওম বিড়লার মেয়ে মডেলিং করতেন। হঠাৎ মনে হলো একটু IAS হই। তাই বিশ্বের অন্যতম সবথেকে কঠিন পরীক্ষায় বসলেন, আর প্রথমবারেই পাশ করে গিয়ে IAS হয়ে গেলেন। আমার গল্প ফুরোলো, নটেগাছটি মুড়োলো..."
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও, একজন ব্যবহারকারী একই ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "তাই বলে পরীক্ষা না দিয়ে IAS !!!! স্পিকার কন্যার বিরুদ্ধে খবর ভাইরাল। তদন্ত হোক। সব সত্য দেশবাসীর জানার আধিকার আছে।।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ছবিটির নীচে আনন্দবাজার অনলাইন লেখাটি লক্ষ্য করে। এই সুত্রধরে, আমরা আনন্দবাজার অনলাইনে অনুসন্ধান করে 'পরীক্ষা না দিয়ে' ইউপিএসসি পাশের অভিযোগ স্পিকার-কন্যার বিরুদ্ধে! শীর্ষক প্রতিবেদন পাই যেখান থেকে জানা যায় অঞ্জলি বিড়লা সকলের মতো পরীক্ষা দিয়েই আইএএস হয়েছেন।
ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় অঞ্জলি বিড়লা আইএএস হয়েছে খবরটি প্রকাশ হলে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ পরীক্ষা না দেওয়ার দাবিটি করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, "পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জলি বলেন, ‘‘পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার বাবাকে দেখেছি, তিনি কী ভাবে দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমিও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। সে কারণেই এই পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
এছাড়াও, ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে একই দাবি ভাইরাল হলে বুম তার তথ্য যাচাই করে। সেসময় আমরা ইউপিএসসি ওয়েবসাইটের "What's New" বিভাগ থেকে ২০১৯ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সংরক্ষিত তালিকাটি দেখি। ওই তালিকায় ৬৭ নম্বরে অঞ্জলি বিড়লার নাম দেখতে পাওয়া যায়।
তালিকার শুরুতেই লেখা হয় কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগ (DoPT) আরও শূন্যপদ পূরণ করতে চায়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে বলা হয়েছে, "কমিশন, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাগুলির বিধি ১৬ (৪) এবং (৫) অনুসারে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধীনে সর্বশেষ প্রস্তাবিত প্রার্থীর নীচে মেধার ক্রমানুসারে একটি সংরক্ষিত তালিকা রেখেছে। কর্মী ও প্রশিক্ষণ দপ্তরের প্রয়োজন অনুযায়ী, কমিশন ২০১৯ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ভিত্তিতে অবশিষ্ট পদগুলি পূরণ করার জন্য ৭৩ জন সাধারণ, ১৪ জন ওবিসি, ১ জন ইডব্লিউএস এবং ১ জন এসসি সহ ৮৯ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করেছে।
সংরক্ষিত তালিকা কি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর পর ইউপিএসসি ওয়েবসাইটে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় 'সংরিক্ষিত তালিকা' কী এবং এটি কীভাবে প্রয়োগ করা হয় তাও স্পষ্ট করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা করা হয়, সংরক্ষিত তালিকাটি এবং অপেক্ষমান তালিকা এক নয়।
প্রথম মেইন ফলাফল সাধারণ বিভাগ এবং সংরক্ষিত বিভাগের প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত যারা তাদের নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে যোগ্যতা অর্জন করে যোগ্যতা বা নির্বাচনের মানদণ্ডে কোনও ছাড় ছাড়াই। কমিশন একই সঙ্গে সাধারণ ও সংরক্ষিত বিভাগের প্রার্থীদের একটি সমন্বিত সংরক্ষিত তালিকা তৈরি করে যাদের র্যাংক প্রথম তালিকায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরে। সংরক্ষিত তালিকার প্রার্থীরা পরবর্তী সুপারিশের জন্য যোগ্য এবং তারা তাদের পছন্দের একটি পরিষেবা বেছে নিতে পারে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, "বহু-পরিষেবা পরীক্ষায় সংরক্ষিত বিভাগের প্রার্থী যারা পরীক্ষার কোনও পর্যায়ে কোনও ছাড় না পেয়ে সাধারণ যোগ্যতা মান বা তার উপরে যোগ্যতা অর্জন করে তাদের পছন্দের পরিষেবা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সংরক্ষিত তালিকাটি প্রয়োজনীয়।"
ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, মেইন পরীক্ষা এবং ব্যক্তিগত ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হতে হয়।
অঞ্জলি বিড়লা প্রিলিম এবং মেইন উভয় পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হয়েছেন
অঞ্জলি বিড়লার রোল নম্বর ০৮১৮৭৬-এর সূত্রধরে, আমরা ২০১৯ সালের ইউপিএসসি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা দেখি। এই তালিকায় তার রোল নম্বর দেখতে পাওয়া যায় যা থেকে আমরা নিশ্চিত হই তিনি আইএএস হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।
কুইন্ট ওয়েবকুফ অঞ্জলি বিড়লার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিড়লা জানান তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অঞ্জলি বিড়লা দ্য কুইন্টকে বলেন, "ইউপিএসসি আগেই জানিয়েছিল যে তাদের ২০১৯ ব্যাচের জন্য ৯২৭টি শূন্যপদ রয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হলে তারা মাত্র ৮২৯টি শূন্যপদ পূরণ করেছিল। তাই, ২০২০ সালের অগস্টের সেই তালিকায় আমার নাম ছিল না কারণ আমি সাধারণ বিভাগের জন্য কাট অফের থেকে ৮ নম্বর কম পেয়েছি। এখন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আপনি দেখতে পাবেন যে ইউপিএসসি উল্লেখ করেছে যে কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগ (DoPT) আরও শূন্যপদ পূরণ করতে বলেছে।"