প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডিগ্রিতে স্বাক্ষরকারী উপাচার্যকে নিয়ে দাবিটি ভুয়ো
বুম যাচাই করে দেখে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কে এস শাস্ত্রী ১৯৮১ সালে মারা যাননি।
সোশাল মিডিয়ার পোস্টে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর (Narendra Modi) স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে স্বাক্ষরকারী গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কে এস শাস্ত্রী নাকি ডিগ্রির শংসাপত্রটি (Certificate) ইস্যু হওয়ার দুবছর আগেই ১৯৮১ সালেই প্রয়াত হন। বুম দেখে দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো।
দাবির সমর্থনে যে স্ক্রিনশটটি তুলে ধরা হয়েছে, তাতে উল্লেখিত তারিখগুলি বীর নর্মদ দক্ষিণ গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে এস শাস্ত্রীর জন্ম-মৃত্যুর তারিখ নয়, তাঁর উপাচার্য পদে আসীন থাকার মেয়াদের তারিখ।
অথচ বেশ কিছু কংগ্রেস সমর্থক এই স্ক্রিনশট তুলে ধরেই ফেসবুক ও টুইটারে এই ভুয়ো দাবিটি তুলেছেন।
অনিল প্যাটেল, যিনি নিজেকে কংগ্রেস সমর্থক এবং সমাজকর্মী বলে নিজের বায়ো-তে উল্লেখ করেছেন, তিনি দুটি ছবির কোলাজ টুইট করেছেন, যার একটিতে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রির স্ক্রিনশট রয়েছে, অন্যটিতে শাস্ত্রীর স্ক্রিনশটে ২২-০৮-১৯৮০ এবং ১৩-০৭-১৯৮১ তারিখ দুটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হয়েছে।
টুইটে অনিল ক্যাপশন লেখেন, “প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রির শংসাপত্রে স্বাক্ষরকারী উপাচার্য কে এস শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে ১৯৮১ সালেই, তাহলে এই স্বাক্ষর ছাপা হল কী ভাবে?”
একই ভুয়ো দাবি শেয়ার হয়েছে টুইটারেও এবং ফেসবুক-এর এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত পুরনো বিতর্কটি সম্প্রতি জিইয়ে ওঠে গুজরাত হাইকোর্টের একটি নির্দেশের কারণে। ২০১৬ সালে মুখ্য তথ্য কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি প্রকাশ্যে নিয়ে আসার যে নির্দেশ দেন, তাকে চ্যালেঞ্জ করে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই রায় দেয়। তথ্য কমিশনারের নির্দেশ আবার এসেছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের তথ্য জানার অধিকার সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে। হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই রায় দেয় এবং কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। এ ব্যাপারে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
সেই থেকে বিভিন্ন বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রির সত্যতা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করে চলেছেন।
২০১৬ সালেই বিজেপি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বি-এ ডিগ্রি এবং গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত এম-এ ডিগ্রির শংসাপত্র প্রকাশ করে। এম-এ ডিগ্রির ফোটোকপিতে লেখা আছে, এটি একটি ডুপ্লিকেট শংসাপত্র এবং সেখানে কে এস শাস্ত্রীর স্বাক্ষরও রয়েছে l দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
আমরা ডিগ্রিটার সত্যতা নিয়ে কিছু বলছি না। তবে এই শংসাপত্রে স্বাক্ষরকারী গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য যে মোটেই ১৯৮১ সালে মারা যাননি, সেটা বলতে পারি।
ভাইরাল ছবিতে উল্লেখিত তারিখ দুটি কেবল উপাচার্যের মেয়াদ শুরু ও শেষের তারিখ, তাঁর জন্ম-মৃত্যুর তারিখ নয়।
‘কে এস শাস্ত্রী’ এবং ‘গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়’—এই মূল শব্দদুটি বসিয়ে খোঁজ করার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যদের তালিকা সমন্বিত একটি পিডিএফ ডকুমেন্ট পাই।
সেই ডকুমেন্ট বা নথিতে দেখা যাচ্ছে, অধ্যাপক কে এস শাস্ত্রী ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত উপাচার্য ছিলেন। পিডিএফটি দেখুন এখানে।
এই একই অনুসন্ধান আমাদের বীর নর্মদ দক্ষিণ গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও পৌঁছে দেয়। দেখা যায়, এখন ভাইরাল হওয়া ছবিটা ওই ওয়েবসাইট থেকেই নেওয়া, যার আর্কাইভ এখানে দেখতে পারেন। ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, কে এস শাস্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও উপাচার্য ছিলেন ২২-০৮-১৯৮০ থেকে ১৩-০৭-১৯৮১ পর্যন্ত।
এছাড়াও শাস্ত্রীর নাম সোম-ললিত এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং সোম-ললিত ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট-এর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য রূপে নথিভুক্ত। দেখুন এখানে এবং এখানে।
গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কার্যকাল শেষ হওয়ার পর কে এস শাস্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনও আমাদের নজরে আসে। ২০০৩ সালে টাইমস অফ ইন্ডিয়া রিপোর্ট করে, কে এস শাস্ত্রী এবং তাঁর পুত্র প্রাজ্ঞেশ এবং প্রাক্তন রেজিস্ট্রার জাডিয়া দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন এবং প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে একতরফা ও বেআইনি ভাবে ফিজ বৃদ্ধি করার অভিযোগও রয়েছে।
টাইমস-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়, “গুজরাত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি হিসাবে কে এস শাস্ত্রী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মহা-গুজরাত নবনির্মাণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন”।
২০১২ সালে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে টাইমস অফ ইন্ডিয়া রিপোর্ট করে, গুজরাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষক সমিতির সভাপতির পদ থেকে কে এস শাস্ত্রীকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এসংক্রান্ত খবরটি পড়ুন এখানে।