দিল্লিতে খুনের দায়ে অভিযুক্ত আফতাব মুসলমান, পার্সি নয়
বুম দেখে শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা ধর্মে মুসলমান, পার্সি নয়।
বেশ কিছু সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এই মিথ্যে দাবি করেছেন যে, শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে (Shraddha Walkar) নৃশংস ভাবে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা (Aftan Poonawala) পার্সি সম্প্রদায়ভুক্ত, তিনি মুসলমান নন।
বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে। অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা একজন মুসলমান।
২০১৯-এ, ভাসাই-এর বাসিন্দা, ২৯ বছর বয়সী শ্রদ্ধা ওয়ালকার-এর সঙ্গে আফতাবের পরিচয় হয় একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। তারপর তাঁরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। শ্রদ্ধার খুনের ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। খবরে প্রকাশ, মে ২০২২-এ, দিল্লির ছত্তরপুর এলাকায় তাঁদের ভাড়া-করা ফ্ল্যাটে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার পর, আফতা্ব শ্রদ্ধাকে খুন করে ও মেয়েটির দেহ টুকরো টুকরো করে কাটে। তারপর সে একটি ফ্রিজ কেনে। এবং শ্রদ্ধার দেহাংশগুলি তার মধ্যে রেখে দেয়। জানা গেছে, উভয়ের পরিবার, ধর্মের কারণে, তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করলে, তাঁরা দিল্লি চলে আসেন। খবরে প্রকাশ, খুন করার ব্যাপারে, আফতাব মার্কিন সিরিয়াল 'ডক্সটার' দেখে প্রভাবিত হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী, দিল্লির আদালতের নির্দেশ মতো, তদন্তের স্বার্থে, এবার তার নারকো-অ্যানালিসিস পরীক্ষা করা হবে।
এই ঘটনার তথ্যগুলি প্রকাশ্যে এলে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা আফতাবের ধর্ম সম্পর্কে জল্পনা করতে শুরু করে দেন।
একটি পোস্টে দাবি করা হয়, "আফতাব শিবদাসানি যেমন সিন্ধি, তেমনই আফতাব পুনাওয়ালা একজন পার্সি। আজ তার বাবা নিরঞ্জন আমিন পুনাওয়ালা তার জামিনের জন্য দিল্লির তিস হাজারি আদালতে আবেদন করেছেন। আজ হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভারসিটিগুলির অন্ধ ভক্তরা মুখে তালা দিয়েছেন। তা না হলে, গত দু'দিনে সোশাল মিডিয়া সাইটগুলিতে আগুল লেগে যেত।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
অন্য একটি পোস্টে বলা হয়েছে, "লোকটির নাম আফতাব পুনাওয়ালা। সে একজন পার্সি। তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু এখন লোকে এই ঘটনাকে হিন্দু-মুসলমান বিবাদ বলে চালাবে। একটি নির্দোষ মেয়ের বিরুদ্ধে এ এক অমানুষিক কাজ।"
পোস্টটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
'আফতাব পুনাওয়ালা' দিয়ে বুম কি-ওয়ার্ড সার্চ করে। তার ফলে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। অভিযুক্তের অতীত সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়া হয় তাতে।
তা থেকে জানা যায় যে, আফতাব এক সময় খাবারের ওপর একটি ব্লগ লিখত। সেটির নাম ছিল, 'হাঙ্গ্রিচোকরো_এসকাপেডস'।
এই সূত্র ধরে, আমরা তার প্রোফাইলটি দেখি। তাতে পুনাওয়ালার ছবি ছিল। ক্যাপশনে লেখা ছিল, "আবশ্যিক ইনস্টাগ্র্যাম ছবি: খাবারের স্টাইল। এই রকম একটি ছবি না থাকলে পেজ সম্পূর্ণ হয় না। কারণ মুখ দেখানো জরুরি।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
'হাঙ্গ্রিচোক্রো' পোস্টটিতে আমরা একটি হ্যাসট্যাগ দেখতে পাই। সেটি থেকে পুনাওয়ালার একটি ইনস্টাগ্র্যাম প্রোফাইলের সন্ধান পাওয়া যায়। সেটির নাম 'দ্যহাঙ্গ্রিচোক্রো'। তাতে তার বেশ কয়েকটি ছবি ছিল। সেখানে সার্চ করলে, ২০১৪ সালে করা পুনাওয়ালার একটি মন্তব্য দেখতে পাই আমরা। সেখানে, তার ধর্ম সংক্রন্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় যে, সে একজন মুসলমান।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পুনাওয়ালা লেখে, "আমি একজন মুসলমান। অন্য দিকে বলা যাবে আপনি হলেন হিন্দু। কৃষ্ণ ভগবান হলেন হিন্দুদের ভগবান। আমি কি জানতে পারি যে, আমার ধর্মের ব্যাপারে এত কৌতুহল কেন?"
বুম এই ঘটনার এফআইআর-এর প্রতিলিপিও জোগাড় করে। তাতে বলা হয়েছে, পুনাওয়ালা হলেন একজন মুসলমান। শ্রদ্ধার বাবা তাঁর বয়ানে বলেছেন, "২০১৮'য় আমার মেয়ে শ্রদ্ধা বিকাশ ওয়ালকার, মুম্বাইয়ের মালাড-এ একটি কল সেন্টারে কাজ করত। সেখানে অফতাব আমিন পুনাওয়ালা নামের একটি ছেলেও কাজ করত।৮-৯ মাস পরে আমরা জানতে পারি যে, আমার মেয়ে শ্রদ্ধা বিকাশ ওয়ালকার ও আফতাব আমিন পুনাওয়ালা'র মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২০১৯-এ আমার মেয়ে আমার স্ত্রীকে বলে যে, আফতাব আমিন পুনাওয়ালার সঙ্গে ও লিভ-টুগেদার করবে। কিন্তু আমার স্ত্রী বারণ করেন। কারণ, আমি একজন হিন্দু। আমার জাতি হল কোলি। এবং ছেলেটি মুসলমান। আমরা ভিন্ন ধর্মে/ভিন্ন জাতিতে বিয়ে চাইনি।"
উনি আরও বলেন, "আমরা সম্মত না হলে, আমার মেয়ে শ্রদ্ধা বিকাশ ওয়ালকার আমাদের বলেন. 'আমার ২৫ বছর বয়স হয়েছে। নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে। আফতাব আমিন পুনাওয়ালার সঙ্গে আমি লিভ-টুগেদার সম্পর্কের মধ্যে থাকতে চাই। আজ থেকে আমি তোমাদের মেয়ে নই'। একথা বলার পর, সে তার জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তাকে আমি ও আমার স্ত্রী অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে রাজি হয় না। সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ও আফতাব আমিন পুনাওয়ালার সঙ্গে লিভ-টুগেদার শুরু করে।"