ইউনেস্কোর বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারির ভাইরাল দাবিটি ভুয়ো
বুম দেখে ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারকে ৭২ ঘন্টায় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বহিষ্কার করার কোনও হুঁশিয়ারি এখনও অবধি দেয়নি।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি পোস্ট শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন বাংলাদেশ সরকার (Bangladesh Government) ৭২ ঘন্টার মধ্যে যদি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়, তবে জাতিসঙ্ঘ থেকে বাংলাদেশকে (Bangladesh) বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউনেস্কো (UNESCO)।
বুম দেখে দাবিটি ভিত্তিহীন। ইউনেস্কোর তরফ থেকে এখনও অবধি বাংলাদেশকে বহিষ্কার করার কোনও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়নি।
ইদানিং, বাংলাদেশে সংরক্ষণ তুলে নেওয়ার দাবিতে দেশজুড়ে, বিশেষত রাজধানী ঢাকায়, আন্দোলনে নেমেছেন সর্বস্তরের পড়ুয়া, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ। আন্দোলনে জর্জরিত বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা শতাধিক।
এরই মধ্যে, ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টটি ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ""সতর্ক" সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো। যদি দেশ আর দেশের পরিস্থিতিকে ঠিক করা না হয়,সরকারকে বহিষ্কার করা হবে!!! সরকার মূলতঃ আলোচনায় বসতে চাচ্ছে নিজের গদি বাঁচানোর জন্য। নয়তো বুলেটের ভাষায় কথা চলতো, যেভাবে এতদিন চালাচ্ছিলেন। ভুলেও আলোচনায় বসা যাবে না, ভুলেও আন্দোলন থামানো যাবে না। I repeat, ভুলেও আলোচনায় বসা যাবে না, ভুলেও আন্দোলন থামানো যাবে না। কোন আপস আর হবে না আমরা মানবোনা।আমার ভাইয়েরা যখন রক্ত দিছে আমরা ১বিন্দু ও পিছু হটবো না।হয় এই সরকার থাকবে না হয় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকবো। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে। তবে, আমরা ইউনেস্কোর বাংলাদেশকে জাতিসঙ্ঘ থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি সম্পর্কে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি।
এরপর, আমরা ইউনেস্কোর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে অনুসন্ধান করে, তাদের ইউনেস্কো মানবাধিকার ফেসবুক পেজটিতে ১৯ জুলাইয়ের পোস্টে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের বক্তব্য দেখতে পাই।
পোস্টে উল্লিখিত ওয়েবসাইটে গিয়ে আমরা তুর্কের ১৯ জুলাই করা সম্পূর্ণ বক্তব্য দেখতে পাই। তুর্ক নিহত ও আহতের সংখ্যার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন ছাত্রদের উপর হামলার দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজনীয়।
তিনি দুপক্ষকেই সংযম বজায় রাখতে অনুরোধ করেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনাবলি কঠোর ভাবে মান্য করার উপদেশ দেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে ছাত্র প্রতিবাদ ঠেকাতে আধা সেনা মোতায়েন নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন।
তুর্ক বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের এবং তাদের সমাবেশ ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার বজায় রাখতে যেন বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া নিয়েও চিন্তা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও, রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেলের মুখপাত্রর ১৯ এবং ২২ জুলাইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির উল্লেখ থাকলেও আমরা ভাইরাল দাবির সঙ্গে মেলে এমন কোনও হুঁশিয়ারি দেখতে পাইনি।
উপরন্তু, ২২ জুলাইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আমরা দেখি সেক্রেটারি-জেনারেল আশা করছেন ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলায় দেওয়া রায় এবং ৪৮ ঘন্টা আন্দোলনের বিরতি সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুযোগ করে দেবে।