পোস্টের মিথ্যে দাবি দানিশ সিদ্দিকি মুনাফা পেতে শবদহনের ছবি বিক্রি করেন
ভারতে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব সম্পর্কে খবর করতেই রয়টর্সের চিত্রসাংবাদিক দানিশ শবদেহ সৎকারের ছবি তোলেন, মুনাফার জন্য নয়।
চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির (Danish Siddiqui) মৃত্যুর পর, সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই মিথ্যে দাবি করেছেন যে, কোভিড-১৯'এ মৃত ব্যক্তিদের গণসৎকারের ছবি (Cremation Images) তিনি বিদেশি সংবাদ সংস্থাগুলিকে লাভ করার জন্য বিক্রি করেন। সিদ্দিকি ছিলেন রয়টর্সে'র (Reuters) চিত্রসাংবাদিক। ভারতে কোভিড-১৯ অতিমারির (COVID-19 Pandemic) প্রভাব সম্পর্কে খবর করার জন্যই তিনি ওই ছবিগুলি তোলেন; লাভ করার জন্য নয়।
১৬ জুলাই, আফগান বাহিনী ও তালিবানদের মধ্যে, গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা স্পিন বোলডাক-এ, এক সংঘর্ষের খবর করতে গিয়ে সিদ্দিকি নিহত হন।
আরও পড়ুন: রয়টর্সের চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির হত্যার পর ছড়াল বিদ্বেষ বার্তা
সিদ্দিকি ও অন্যান্য চিত্রসাংবাদিকদের তোলা চিতার ছবি এবং গেট্টি ইমেজেস-এর স্ক্রিনশট শেয়ার করছেন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। তাঁরা দাবি করছেন যে, সিদ্দিকির মতো চিত্রসাংবাদিকরা হিন্দুদের সৎকারকে লাভ করার জন্য ব্যবহার করেন।
টুইটের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
দক্ষিণপন্থী লেখিকা শেফালি বৈদ্য, চিতার ছবি বিক্রি করার অভিযোগ এনেছেন সিদ্দিকির বিরুদ্ধে। বৈদ্য একাধিকবার টুইটারে সাম্প্রদায়িকভাবে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও মিথ্যে খবর শেয়ার করেছেন।
টুইটটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
টুইটটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
টুইটটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। (সতর্কবাণী: আর্কাইভ করা টুইটটিতে সিদ্দিকির মৃতদেহের একটি ছবি রয়েছে।)
টুইটটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। (সতর্কবাণী: আর্কাইভ করা টুইটটিতে সিদ্দিকির মৃতদেহের একটি ছবি রয়েছে।)
এপ্রিল ও মে ২০২১-এ, ভারত যখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের চরম পর্যায়ে লড়ছে, তখনও চিত্রসাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়েছিল।
টুইটটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
'লাভের জন্য বিক্রি'
গেট্টি, রয়টর্স, এজেন্স ফ্রান্স-প্রেস, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া'র মতো ফটো এজেন্সিগুলির নিজস্ব, নির্দিষ্ট বেতনভুক্ত, চিত্রসাংবাদিক আছে। যে কোনও অন্য মিডিয়া বা সৃজনশীল এজেন্সির মতোই, কর্মীদের তৈরি 'কনটেন্ট' বা বিষয়বস্তু ওই এজেন্সিরই সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। আর ওই সব বিষয়বস্তুর স্রষ্টা হিসেবে সত্ত্বাধিকার থাকে কর্মীদের।
ঘটনা সাম্প্রতিক হোক বা না হোক, এবং তার গুরুত্ব যাই হোক না কেন, যে কেউই ওই এজেন্সিগুলির কাছ থেকে, নির্দিষ্ট দামে, ছবি কিনতে পারে। তাদের কাছ থেকে এককালীন ছবি কেনা যেতে পারে। অথবা, মাসিক বা বাৎসরিক গ্রাহক হয়ে, তাদের ছবি ব্যবহার করা যায়।
ছবির মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে চিত্রসাংবাদিকদের কোনও হাত থাকে না।
সিদ্দিকি ছিলেন রয়টর্সের কর্মী। তাঁর ওয়েবসাইটে উনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, উনি নিজে ও রয়টর্স উভয়েই তাঁর ছবির সত্ত্বাধিকারী।
নিজেদের কর্মী ছাড়াও, এজেন্সিগুলি স্বাধীন চিত্রসাংবাদিক ও ছোট এজেন্সির কাছ থেকেও ছবি সংগ্রহ করে।
তাঁদের ছবি এজেন্সির দ্বারা বিক্রি হলে, স্বাধীন চিত্রসাংবাদিকরা একটা লভ্যাংশ পেতে পারেন। কিন্তু মাইনে পাওয়া চিত্রসাংবাদিকরা তা পান না।
'২৩,০০০ টাকায় ছবি বিক্রি'
অনেক দেশে বা অঞ্চলে, ফটো এজেন্সিগুলি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলির সঙ্গে খবর সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে তাদের পরিকাঠামো ব্যবহার করার জন্য চুক্তি করে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় 'প্রেস পুল'। এই প্রেস পুলের কোনও সদস্য যদি নিজের উপায়ে কোনও একটি ঘটনার ছবি তুলতে না পারে, তাহলে তারা অন্য সদস্যের তোলা ছবি ব্যবহার করতে পারে।
ভারতে, হিন্দুস্থান টাইমস, এএফপি ও নুরফটোর সঙ্গে গেট্টি ইমেজেস-এর ছবি শেয়ার করার চুক্তি রয়েছে। তাছাড়া স্বাধীন চিত্রসাংবাদিকদের ছবিও গেট্টি নিয়ে থাকে।
গেট্টি ইমেজেস-এর সঙ্গে ছবি শেয়ার করার কোনও ব্যবস্থা নেই রয়টর্স-এর। তাছাড়া সিদ্দিকি ছিলেন রয়টর্স-এর কর্মী। তাই অন্য কোনও সংবাদ সংস্থার হয়ে বা তাদেরকে ছবি বিক্রি করার কোনও এক্তিয়ার তাঁর ছিল না।
গেট্টি ইমেজেস-এর সাম্প্রতিক স্ক্রিনশটে, সিদ্দিকির তোলা কোনও ছবির অস্তিত্ব নেই। তাতে যে ছবিগুলি আছে, সেগুলি এএফপি'র চিত্রসাংবাদিক মানি শর্মার তোলা।
এপ্রিল ২০২১-এ, সিদ্দিকির তোলা দিল্লিতে গণসৎকারের চিত্রসংবাদ ভাইরাল হয়। দিল্লিতে অতিমারির প্রভাব বোঝানোর জন্য সিদ্দিকি সারি সারি জ্বলন্ত চিতার ছবি তোলেন ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে।
আল জাজিরা , দ্য টাইমস ও স্কাই নিউজ'র মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি সিদ্দিকির তোলা ছবি ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: নয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ৪২ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে: এডিআর