মহারাষ্ট্র পুলিশের এক ব্যক্তিকে মারধর করার ভিডিও ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল
জালনা পুলিশ খারিজ করল—অ্যাম্বুল্যান্স চালক শিবরাজ নারিয়েলওয়ালে মৃতদেহ বহনের জন্য হাসপাতালে অক্সিজেন পরিষেবা বন্ধ করেছিল।
একটি হাসপাতালের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের (ICU) ভিতর গণ্ডগোল পাকানোর অপরাধে মহারাষ্ট্র পুলিশ (Maharashtra Police) এক ব্যক্তিকে মারধর করছে, এ ধরনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই লোকটি একজন অ্যাম্বুল্য়ান্স চালক এবং সে শবদেহ বহন করে বেশি টাকা রোজগারের মতলবে জীবন্ত রোগীর নাক থেকে অক্সিজেনের নল খুলে দেয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ৫ জন পুলিশ হাসপাতালের ভিতরেই এক ব্যক্তিকে বেদম লাঠিপেটা করছে।
বুম দেখলো, ভিডিওটি মহারাষ্ট্রের জলনা-র দীপক হাসপাতাল-এর ঘটনার ছবি, যেখানে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো একদল লোকের অন্যতম বিজেপি কর্মী শিবরাজ নারিয়েলওয়ালাকে পুলিশ প্রহার করছে।
ঘটনার সময় অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন জলনা-র পুলিশ ইন্সপেক্টর প্রশান্ত মহাজনl তিনি বুমকে জানালেন, ঘটনাটি ২০২১ সালের ৯ এপ্রিলের, যেদিন ওই হাসপাতালের আইসিইউ-তে একদল যুবক ভাঙচুর চালাচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। উত্তেজিত তরুণদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখনই পুলিশ নারিয়েলওয়ালাকে লাঠি-চার্জ করে। শিবরাজ একজন অ্যাম্বুল্য়ান্স চালক এবং সে জীবন্ত রোগীর নাক থেকে অক্সিজেনের নল খুলে দিয়ে তাকে মৃতদেহ হিসাবে দেখিয়ে বাড়তি টাকা রোজগার করবে বলে যে গুজব হোয়াট্স্যাপে ছড়ানো হয়েছে, মহাজনের মতে তা ভিত্তিহীন।
ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটি যে ক্যাপশন সহ শেয়ার হচ্ছে, তা হলো: "অ্যাম্বুল্য়ান্স মৃতদেহ বহনের জন্য বেশি টাকা পাওয়ার লোভে জীবন্ত রোগীর নাক থেকে অক্সিজেনের নল খুলে নিয়ে তার মৃত্যু ঘটানোর সময় হাতে-নাতে ধরা পড়ার দৃশ্য l"
ভিডিওটি দেখতে এখানে এবং তার আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকেও ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে আমরা খোঁজ করে দেখেছি, সেখানেও অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন:
আরও পড়ুন: ইতালির শিল্পীর ভাস্কর্য ছড়াল ইয়াসের পর বিহারে বিরল প্রাণী মিলল বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, ভিডিওটি মহারাষ্ট্রের জলনার ঘটনার, যেখানে এক রোগীর মৃত্যুর জেরে দীপক হাসপাতালের আইসিইউ-তে ঢুকে ভাঙচুর করার দায়ে পুলিশ বিজেপির যুব নেতা শিবরাজ নারিয়েলওয়ালাকে লাঠি-চার্জ করে ৯ এপ্রিল, ২০২১ সালে। খোঁজ-খবর করে আমরা দেখেছি, ২৬ বছর বয়স্ক এক জিম-মালিক দর্শন দেওয়াওয়ালে একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীপক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যেখানে পরে তার মৃত্যু হয়। এর পরেই বিজেপির স্থানীয় যুব নেতা শিবরাজ নারিয়েলওয়ালে তার সাঙ্গোপাঙ্গদের জুটিয়ে এনে হাসপাতালের আইসিইউ-তে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর রোগীরাও ভর্তি ছিল বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সোশাল মিডিয়ায় ২৮ মে এই মারধরের ঘটনাটির ভিডিও প্রচারিত হলে একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও ৪ জন পুলিশ কনস্টেবলকে পত্রপাঠ সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। কেননা তদন্ত করে দেখা হয়, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি পুলিশ প্রয়োগ করেছিল।
বুম এর পরই জলনা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওরা নারিয়েলওয়ালের অ্যাম্বুল্য়ান্স চালক হওয়ার খবর অস্বীকার করে। সে অতিরিক্ত টাকার লোভে জীবন্ত রোগীর নাক থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের নল খুলে নিয়ে তাকে মৃতদেহে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল, এই গল্পও খারিজ করে দেয়।
জলনা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর প্রশান্ত মহাজন জানান— "একটা ঘটনা ঘটেছিল, যাতে একজন জিম-মালিক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীপক হাসপাতালের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছিল l ৯ এপ্রিল সে মারা যায় আর তার পরেই উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের আইসিইউতে ভাঙচুর চালাতে থাকে । সেখানে তখন প্রায় ৭০ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীরও চিকিত্সা চলছিল l হাসপাতালের কন্ট্রোল রুম থেকে খবর পেয়ে পুলিশ আসে এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি-চার্জ করে। সেই লাঠি-চার্জে বিজেপির যুব নেতা নারিয়েলওয়ালেও আঘাত পান ।"
মহাজন আরও বলেন— "নারিয়েলওয়ালে কোনও অ্যাম্বুল্য়ান্স চালক নন, ওই হাসপাতালের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্তও নন । তাঁর সম্পর্কে যা রটানো হচ্ছে, সবই গুজব এবং ভুয়ো খবর ।"
লোকমত প্রচারিত ভিডিওতেও নারিয়েলওয়ালে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তিনি অ্যাম্বুল্য়ান্স চালান না, তিনি একজন বিজেপি কর্মী এবং ওই দিন তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের এক সদস্যের হাসপাতালে মৃত্যুর খবর শুনে সেখানে হাজির হয়েছিলেন।
"ওই দিন আমি আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজে ওখানে গিয়েছিলাম । তারপর আমার স্বজাতের এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই । গিয়ে শুনি পুলিশ আমাদের জাত তুলে নানা অকথা-কুকথা বলছে । তখন আমি সেটা সহ্য করতে পারিনি । সংশ্লিষ্ট পুলিশকে শনাক্ত করতে আমি গোটা ঘটনাটার ভিড়িও তুলতে শুরু করি আমার মোবাইল ফোনে । তখন পুলিশ অফিসার দেখতে পেয়ে আমার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং আমাকে লাঠিপেটাও করে।" অভিযোগ করেন নারিয়েলওয়ালে।
আরও পড়ুন: সোনিয়া গাঁধীর সেল্ফে খ্রিস্টধর্ম পরিবর্তনের বই? সম্পাদিত ছবি ভাইরাল