এক ব্যক্তির পান্তুয়াতে প্রসাব দাবিতে জি নিউজ দেখাল সম্পাদিত প্রাঙ্ক ভিডিও
বুম দেখে মূল ভিডিওটিতে ওই ব্যক্তি একটি বোতল থেকে কিছু তরল পদার্থ ঢালছে, যা সম্পাদিত ভিডিওটি থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
জি উত্তরাখণ্ড-উত্তরপ্রদেশ নামে (Zee Uttar Pradesh Uttrakhand) একটি হিন্দি সংবাদ-চ্যানেল একটি ভিডিও ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করেছে। সেখানে জনপ্রিয় মিষ্টান্ন পান্তুয়া (Golap Jamun) (উত্তরভারতীয় গোলাপ জামুন) ভর্তি একটি পাত্রে এক ব্যক্তি তরল কিছু বোতল থেকে ঢালছে, এমন দৃশ্যকে সম্পাদনা করে মিথ্যে দাবি সহ এক বিয়েবাড়িতে প্রস্রাব করার দৃশ্য বলে সম্প্রচার করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওয় এক ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং ক্যামেরা পান্তুয়া ভর্তি পাত্রটিতে তরল কিছু ঢালার দৃশ্য বড় করে দেখানো হচ্ছে। যিনি ঢালছেন, তাঁর কোমরের কাছে ধরা একটি বোতল থেকে তরলটি ঢালা হচ্ছে, যা দেখে আপাতভাবে মনে হচ্ছে যেন ওই লোকটিই পাত্রে প্রস্রাব করছে।
ওই একই ভিডিও টুইটারেও একটা সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে ছড়ানো হয়েছে যে, যত্র-তত্র প্রস্রাব করার মুসলিম বদ অভ্যাসই এই ঘটনার নেপথ্যে সক্রিয়।
৩ ডিসেম্বর জি উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ড এই ভিডিওটি রিপোর্ট করে শিরোনাম দেয়, যার অনুবাদ হল, "বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রিতদের জন্য মিষ্টান্ন তৈরি হচ্ছিল, সেখানেই এই লোকটি যা করলো, দেখলে আপনার ঘেন্না হবে!" আর প্রতিবেদনটির ক্যাপশনের অনুবাদ হবে— "লোকটি গোলাপজামে প্রস্রাব করছে! এর আগে তরকারি, রুটি এবং ফুচকার জলে থুতু ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে! আর এখন এ রকম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। এই সব দেখার পর আপনার বিয়েবাড়িতে পরিবেশন করা খাবারের ওপরেই ধিক্কার এসে যাবে। এই ভিডিওটিতে নিমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য তৈরি গোলাপজামের পাত্রে হিসি করার দৃশ্য ফুটে উঠেছে, যা দেখে লোকে খেপে গেছে এবং লোকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।"
'জি-উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ড' ওই ভুয়ো দাবি সহ প্রতিবেদনও টুইট করেছে।
টুইটটি দেখতে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
'জি উত্তরপ্রদেশ উত্তরাখণ্ড' ভিডিওটি টুইটার থেকে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে কিংবা এটা যে অন্য একটি মজা করে তোলা ভিডিওর সম্পাদিত অংশ, তার কোনও উল্লেখ প্রতিবেদনে নেই। মূল ভিডিওয় বোতল থেকে তরল ঢালবার অংশটি ছেঁটে বাদ দিয়ে ভাইরাল ভিডিওটি বানানো হয়েছে, যার ফলে এ রকম ব্যাখ্যা বানানো সম্ভব হয়েছে।
আবার টুইটারে যখন ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে, তখন মিষ্টান্নর পাত্রে প্রস্রাব করা ব্যক্তিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বলে শনাক্ত করে ঘটনায় একটা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ খুঁচিয়ে তোলার অপচেষ্টা রয়েছে, যাকে "প্রেম জেহাদ"-এর মতো "খাদ্য-জেহাদ" আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশ বিজেপির যুব শাখার সোশাল মিডিয়া প্রধান ডঃ রিচা রাজপুত এই ভিডিওটি টুইট করে ক্যাপশন দিয়েছেনঃ "ফুড-জেহাদ"-এর পর এই জেহাদের নাম কী দেওয়া যাবে?
টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি যত্র-তত্র প্রস্রাব করা নিয়ে বড়োদের জন্য মজা করে বানানো একটি দীর্ঘতর ভিডিওর সম্পাদিত অংশ, যা ভুল ভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে এই বলে যে, লোকটি গোলাপজামের পাত্রে হিসি করছে। আমরা পরে দেখেছি যে, লোকটি একটি বোতল থেকে তরল কিছু মিষ্টির পাত্রে ঢালছে, যে-অংশটুকু ছেঁটে বাদ দিয়ে ভাইরাল ভিডিওটা বানানো হয়েছেl এটা যে কাটছাঁট করে মূল ভিডিও থেকে তৈরি করা হয়েছে, সেই সূত্রটি টুইটারের জবাবি অংশ থেকেই আমরা জানতে পারি এবং তা অনুসরণ করে দেখি, ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর দীর্ঘতর মূল ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা হয়েছিল। "@ashiq.billota", এই হ্যান্ডেল থেকেই এই টুইটটি আপলোড করা হয়েছিল।
এই হ্যান্ডেল থেকে এমন সব ভিডিও ও মিমস ছাড়া হয়ে থাকে, যেগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি এবং কিছুটা যৌনগন্ধী। একটি লোক একটা বোতল থেকে কোনও তরল মিষ্টির পাত্রে ঢালছে, সেই অংশটি স্পষ্ট দেখা গেলেও তা ভাইরাল ভিডিওয় ছেঁটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়l পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, যদি কেউ এই ভিডিওটির মালিকের নাম জানো, তাহলে জানাও, যাতে আমি তা আমার পোস্টে জুড়ে দিতে পারি।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল "@ashiq.billota" "@funtaap" নামে অন্য একটি মিম-পেজও তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে, যেটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যৌন ইঙ্গিতবাহী অনুরূপ পোস্ট বানায়।
২০২২ সালেরই ২৩ জুলাই ফানট্যাপ-এর আপলোড করা একটি ভিডিওতে এক সুইমিং পুলের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যেথানে একটি ছেলে পুলে সাঁতার কাটছে আর অন্য একটি ছেলে যেন পাড়ে দাঁড়িয়ে তার মাথার ওপর থেকে পুলে প্রস্রাব করছে বলে মনে হবে, যদিও আসলে ছেলেটি পুলে লাগানো একটি জলের পাম্পের পাইপ ধরে আছে, যা একেবারে শেষে গিয়ে বোঝা যাবে।
এতে বাঝা যায় যে, এটি প্রকাশ্য স্থানে যত্র-তত্র প্রস্রাব করা বিষয়ক ভিডিও নয়, বরং বড়োরা মজা পাবে, এমন ভাবে তৈরি ভিডিও।
ভাইরাল ভিডিওয় দেখানো ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে, তা বুম স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে এটা যে জনস্থানে প্রস্রাব করা বিষয়ক ভিডিও নয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ব্যাখ্যা তৈরি করতে সম্পাদনা করে বাজারে ছাড়া হয়েছে, এটা নিশ্চিত করতে পেরেছে।