রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ খাবার ছোঁড়েন ভুয়ো দাবিতে ছড়াল সিনেমার দৃশ্য
বুম দেখে ভিডিওটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মের আগে হওয়া ১৮৯৯-১৯০০ সালের এক ফরাসি চলচ্চিত্রের দৃশ্য।
একটি পুরনো সাদা-কালো চলচ্চিত্রের রঙ-করা দৃশ্যে দুই ফরাসি (French) মহিলাকে ভিয়েতনামের (Vietnam) গরিব বাচ্চাদের (Poor Kids) দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চলচ্চিত্রের সেই দৃশ্যটি মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করে দাবি করা হয় তাতে (সদ্য প্রয়াত) রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে (Queen Elizabeth II) আফ্রিকার (Africa) শিশুদের দিকে খাবার ছুঁড়ে দিতে দেখা যাচ্ছে।
দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘকাল ব্যাপী রাজত্ব-করা সম্রাজ্ঞী। তিনি ৮ সেপ্টেম্বের, ২০২২ ৯৬ বছর বয়সে মারা যান। দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৭০ বছর সিংহাসনে আসীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যু টুইটারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেকে সমবেদনা জানান। অনেকে আবার উপনিবেশগুলিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের ভূমিকা নিয়ে তাঁর সমালোচনা করেন।
৩০ সেকেন্ডের ভিডিওর ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে "ইনি হলেন রানি নিজেই আফ্রিকার বাচ্চাদের খাবার ছুঁড়ে দিচ্ছেন, যেন তারা এক ঝাঁক মুরগি। এরপরেও 'রেস্ট ইন' (শান্তিতে)... পোস্ট ও টাইপ করার ঔদ্ধত্ব দেখান #ব্ল্যাক টুইটার #কুইনএলিজাবেথ #লন্ডনব্রিজইজডাউন"
(মূল ক্যাপশন ইংরেজিতে: This is the Queen herself throwing food to African kids like chicken and then you all have the audacity to post and type Rest in.... #BlackTwitter #QueenElisabeth #LondonBridgeIsDown)
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
ওই ভিডিওটি একই মিথ্যে দাবি সমেত মালয়ালম ভাষাতেও শেয়ার করা হচ্ছে। মালয়ালম ভাষায় লেখা ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "আমার মনে পড়ছে, কেউ একজন বলেছিলেন, মৃত্যু কাউকে মহান করে না...কেবল কৃতদাসসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন লোকেরা এবং তাদের জুতে-চাটা ঐতিহ্য তাদের প্রশংসা করতে পারে।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
মিথ্যে দাবি সমেত, ভিডিওটি ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পুলিশ আধিকারিকের ২০১৯ সালের ছবি ভুয়ো দাবিতে জুড়ল বিজেপির নবান্ন অভিযানের সঙ্গে
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ভিডিওটি একটি পুরনো চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া। সেটি ফরাসি পরিচালক গ্যাব্রিয়েল ভেয়েরে ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন। তাতে ভিয়েতনামে দুই ফরাসি মহিলাকে গরিব বাচ্চাদের দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ছবিটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ-এর জন্মের আগেই তৈরি হয়েছিল। রানির জন্ম হয় ১৯২৬ সালে।
ভাইরাল ভিডিওটি সমেত উদ্ধৃত-করা টুইটগুলি দেখার সময় আমরা টুইটার ব্যবহারকারী 'ফেক হিস্ট্রি হান্টার' (Fake History Hunter)-এর একটি মন্তব্য দেখতে পাই। তাতে উনি বলেন, ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাদের দেখা যাচ্ছে তাঁরা ফরাসি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নন।
ফরাসি ওয়েবসাইট 'ক্যাটালগ লুমিয়ের' (Catalogue Lumière) ফ্রান্সের লিঁও শহরের লুমিয়ের কম্পানির তৈরি সব চলচ্চিত্রের আর্কাইভ তৈরি করে রেখেছে। ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, দৃশ্যটি ১৮৯৯ থেকে ১৯০০-এর মধ্যে ভেয়েরে'র ছবি থেকে নেওয়া। ফরাসি ইন্দোচিন-এর (বর্তমানে ভিয়েতনাম) আন্নাম উপনিবেশে ছবিটির শুটিং হয়েছিল। ফরাসি ইন্দোচিন বলতে তিনটি দেশকে বোঝায় – ভিয়েতনাম, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া। ওই দেশগুলি এক সময় ফরাসি সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ছিল।
চলচ্চিত্রটি ফ্রান্সের লিঁও শহরে ২০ জানুয়ারি, ১৯০১ প্রদর্শিত হয়। যার শিরোনামে বলা হয় 'ইন্দো-চিন: আন্নামী বাচ্চারা মহিলাদের প্যাগডার সামনে পয়সা কুড়চ্ছে।' ছবিটির সারাংশে বলা হয়, যে দুই মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তাঁরা হলেন মাদাম পল ডুমর ও তাঁর মেয়ে। তাঁরা স্থানীয় ভিয়েতনামী বাচ্চাদের দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিচ্ছেন।
ফিল্মটি যে সময় তৈরি হয় সেই সময় ডমর-এর স্বামী পল ডমর ইন্দোচিনের গভর্নর নিযুক্ত হন। পরে তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি হন।
ফরাসি চিত্র পরিচালক ভেয়েরে ইন্দোচিন-এর নানা দিক ঘুরে স্থিরচিত্র ও ফিল্ম তুলে বেড়ান। ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকারের আয়োজিত ১৯০০ সালের 'প্যারিস এক্সপোজিশন ইউনিভার্সাল'-এ ছবিগুলি প্রদর্শিত হয়।
ক্যাটলগ লুমিয়ের-এ ওই চলচ্চিত্রের একটি স্থিরচিত্রের সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "মহিলাদের প্যাগোডার সামনে আন্নামী বাচ্চারা স্যাপেকিউ কুড়িয়ে নিচ্ছে। এখানে আন্নমী বলতে স্থানীয় ভিয়েতনামীদের বোঝাচ্ছে এবং স্যাপেকিউ হল উনবিংশ শতাব্দীর শেষে ইন্দোচিনে ফ্রান্সের চালু করা মুদ্রা।
ছবিটি দেখা যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: নিউজ ১৮, এই সময় ছড়াল পাকিস্তান বন্যায় অনিল কাপুরের অর্থদানের ভুয়ো খবর