না, বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমি বলেননি রোজা রাখলে ক্যান্সার নিরাময় হবে
বুম যাচাই করে দেখে নোবেলজয়ী জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির নামে রোজা ক্যান্সার নিরাময় করে এই ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে।
নোবেলজয়ী জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির (Yoshinori Ohsumi) নাম করে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক গ্রাফিকে দাবি করা হয়েছে রোজা (Fasting) রাখলে মারা যায় প্রাণঘাতী ক্যানসার (Cancer) ব্যাধির জীবাণু।
বুম যাচাই করে দেখে বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির নামে ছড়নো দাবিটি ভুয়ো। রোজা রাখলে ক্যানসার নিরাময় হবে এই সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা চলতি রমজান (Ramzan) মাস ব্যাপী সূর্যদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত উপবাস বা রোজা রাখে। সূর্যাস্তের পর পানীয় ও অন্যান্য খাবার গ্রহণ করা হয়। ভাইরাল গ্রাফিকটি এই প্রেক্ষিতেই সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গ্রাফিকে বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির ছবি ব্যবহার করে লেখা হয়, "রোজা রাখলে মারা যায় ক্যানসারের জীবাণু - নোবেলজয়ী জাপানি গবেষক ওশিনরি ওসুমি - ইসলামের প্রতিটি ইবাদতেই রয়েছে অশেষ রহমত"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
গ্রাফিকটি ফেসবুকে পোস্ট করে এক ব্যবহারকারী ক্যাপশন লিখেছেন, "আলহামদুলিল্লাহ রোজা রাখলে মারা যায় ক্যান্সারের জীবাণু"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম গুগলে ইয়োশিনোরি ওসুমির 'রোজা রাখা ও ক্যান্সারের কোশের মৃত্যু' সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে। আমরা রোজার সঙ্গে বিজ্ঞানী ওসুমির গবেষণা বিষয়ে কোনও গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
আমরা দেখতে পাই বিজ্ঞানী ওসুমির নাম করে এর আগেও ক্যানসার রোগের নিরাময় নিয়ে উপবাস রাখার তত্ত্ব ছড়িয়েছিল সমাজমাধ্যমে। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা এএফপি সেসময় বিজ্ঞানী ওসুমির নামে ছড়ানো দাবি উপবাস করলে ক্যানসার নিরাময় হবে এই বক্তব্যের সত্যতা জানতে টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সাথে যোগাযোগ করে।
টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ইয়োশিনোরি ওসুমি সেখানে সেল বায়োলজি সেন্টারের ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত । ২৭ অক্টোবর ২০২২, এএফপির জিজ্ঞাসার উত্তরে টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তরফে এক জনসংযোগ অধিকারিক জানান, বিজ্ঞানী ওসুমি এই ধরণের কোনও মন্তব্য করেননি।
বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির নোবেলজয়
কোশ নিজে নিজেকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া বা অটোফ্যাজি নিয়ে গবেষণার জন্যে ২০১৬ সালে নোবেল পান বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমি। ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে যখন এই প্রক্রিয়ার বেশিরভাগটাই অজানা ছিল তখন বিজ্ঞানী ওসুমি ইস্ট নিয়ে একের পর এক যুগান্তকারী পরীক্ষা পরিচালনা করে অটোফ্যাজি এবং এই প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনগুলি শনাক্ত করেন। ওসুমির সেই আবিষ্কার অপুষ্টি, সংক্রমণ, কিছু বংশগত এবং স্নায়বিক রোগের কারণ ও ক্যানসার মোকাবিলার করার জন্য কোষের ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন ধারণার হদিস দেয়।
অকার্যকর বা ডিসফাংশনাল অটোফ্যাগি তো শরীরে ক্যানসারের কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাঁর গবেষণায় কোথাও বলা হয়নি, রোজা ক্য়ান্সার সারাবে।
২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমির নোবেলজয়ের পর তাঁর বক্তব্য নিচে শুনুন।
বুম ২০২০ সালের ইয়োশিনোরি ওসুমির নামে ছড়ানো ক্যান্সার সংক্রান্ত ভুয়ো খবরের তথ্য-যাচাই করেছিল।