ইটালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ইসলাম নিয়ে পুরনো মন্তব্য সাম্প্রতিক হিসেবে ছড়াল সংবাদমাধ্যমে
বুম দেখে মেলোনির "ইউরোপীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলাম ধর্ম বেমানান" মন্তব্যের ভিডিওটি ২০১৮ সালের
পাঁচ বছর পুরনো একটি ভিডিওতে ইটালির প্রধানমন্ত্রী (Italian PM) জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni) বলেছিলেন ইসলাম (Islam) ইউরোপীয় সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে, এই মন্তব্যের ভিডিওটি সাম্প্রতিক হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে (Indian Media) এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রোমে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যেটা তার ডানপন্থী দল ফ্র্যাটেলি ডি ইটালিয়া (এফডিআই) দ্বারা আয়োজিত হয়। এই অনুষ্ঠানে জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্যের সাথে পাঁচ বছর আগের ইসলাম সমন্ধিত তার মন্তব্যকে জুড়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত করা হয়। উল্লেখযোগ্য, যখন তিনি এই মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন তিনি ইটালির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।
ডানপন্থী দল ফ্র্যাটেলি ডি ইটালিয়া দ্বারা আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের পর ইটালীয় সংবাদমাধ্যমে জর্জিয়া মেলোনির কোনও ইসলাম সংক্রান্ত মন্তব্য বুম দেখতে পায়নি। ২৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ইটালির সংসদে মেলোনি ইজরায়েলের উপর হামাসের হামলার নিন্দা করেছিলেন এবং ইসলামের আতঙ্কের বিষয় বক্তৃতায় উল্লেখও করেন। তিনি বলেন আরব এবং মুসলিম দেশগুলোর সাথে ইতিমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আলোচনা প্রয়োজন।
যে ভাইরাল ভিডিওটি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশ পায়, সেখানে মেলোনিকে বলতে শোনা যায়,"আমার মনে হয় ইসলামের সংস্কৃতি অথবা তার কিছু ব্যাখ্যার সাথে আমাদের সংস্কৃতির সামঞ্জস্যর সমস্যা আছে। এই বিষয়টি আমার নজরে সবসময় রয়েছে যে ইটালিতে বেশিরভাগ ইসলামের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি সৌদি আরব দ্বারা পরিচালিত। সৌদি আরব এমন একটি দেশ যারা নিজেদের ক্ষেত্রে শরিয়া আইনের প্রয়োগ করে।"
তিনি আরও বলেন,"তবে, এর অর্থ ইসলাম ধর্মকে সাধারণীকৃত করা নয় বরং ইউরোপীয় ইসলামিকরণের প্রক্রিয়াকে স্বীকার করা যা আমাদের সভ্যতার সংস্কৃতির থেকে আলাদা।"
ডিসেম্বর ১৭ তারিখে হিন্দুস্তান টাইমস এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত করে এবং দাবি করে তার এই মন্তব্যগুলি তার দলের আয়োজিত অনুষ্ঠানের পরের।
"এই মন্তব্যগুলি সামনে আসে যখন শনিবার ইটালি এবং যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবেলায় সম্মত হন এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতির শপথ নেন," নিউজ ১৮ সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়।
বাংলা সংবাদমাধ্যমেও এই খবর প্রকাশ পায়। আজতক বাংলা এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে শিরোনামে লেখে,"Georgia Meloni: ইউরোপে ইসলামের কোনও জায়গা নেই', বিতর্কে জর্জিয়া মেলোনি"
এই প্রতিবেদনের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
এশিয়ানেট বাংলাতেও এই সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সংবাদ প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমেরও একটি প্রতিবেদন দেখা যায় যেখানে তারা মেলোনির বক্তব্যকে সাম্প্রতিক বলে প্রকাশিত করে। এই প্রতিবেদনের লিংক এখানে দেখা যাবে।
এই প্রতিবেদনের একটি আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকেও সম্প্রতি এবিষয় কিছু পোস্টকার্ড বুম লক্ষ্য করে যার লিংক এখানে দেখা যাবে।
দ্য ওয়াল সংবাদমাধ্যমের তরফে ডেলিহান্টের ওয়েবসাইটেও এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখা যায়।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমেই মেলোনির তরফে এই ধরণের কোনও মন্তব্যের খোঁজ করার চেষ্টা করে যা তিনি তার দলের অনুষ্ঠানের আগে অথবা পরে হয়তো করেছেন। কিন্তু, এই সংক্রান্ত কোনও প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাইনি যেখানে তিনি ইসলাম নিয়ে এমন মন্তব্য করেন।
পলিটিকো সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মেলোনির সাথে ব্রিটেনের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মিলের কথা বলেন এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথাও বলেন।
গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্য নিয়ে আমরা ইটালীয় ভাষায় একটি কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং ইটালীয় সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে তিনি ভাইরাল খবরটিতে উল্লেখ করা মন্তব্যটি করেছিলেন, কিন্তু সেটা ছিল ২০১৮ সালে। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে ইটালীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার মন্তব্যের উল্লেখ শিরোনামে করা হয়।
ইটালির আরেকটি সংবাদমাধ্যম আলা নিউজও তার বক্তৃতার ভিডিওটি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত করে ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ তারিখে।
এই ভিডিওর ২ মিনিট ১১ সেকেন্ডে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলির ব্যবহার করা অংশের উল্লেখ দেখা যায় তার বক্তৃতায়।
বুম যোগাযোগ করে প্যাজেলা পলিটিকার ফ্যাক্ট চেকার ফেদেরিকো গোঞ্জাতোর সাথে যিনি বলেন মেলোনি এর আগে ইসলাম ধর্মের বিষয় বেশ কিছু সমালোচনামূলক কথা বলেছেন কিন্তু এখন তার মাত্রা একটু কমেছে মন্ত্রিপরিষদের সভাপতি হওয়ার পর থেকে।