বাড়ি ভাড়ার ওপরেও কি ১৮ শতাংশ জিএসটি কর? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে যেসব ভাড়াটে জিএসটির অধীনে নথিভুক্ত তাদের ক্ষেত্রেই এই কর প্রযোজ্য।
সোশাল মিডিয়ায় একটা দাবি ভাইরাল হয় সরকার নাকি আবাসিক ভাড়াটেদের ওপর জিএসটি (GST) লাগু করেছে। এই দাবিটা ভুয়ো, কেননা জিএসটি কেবল তাদেরই দিতে হবে, যারা জিএসটি-র অধীনে নিজেদের সংস্থার নাম নথিভুক্ত করেছে। বড়-বড় শিল্পসংস্থা, ব্যবসায়ী কিংবা ধনী যে সব ব্যক্তি জিএসটির অধীনে নিজেদের নথিভুক্ত করেছে, তাদের ভাড়া করা আবাসিক সম্পদের উপর এই কর ধার্য হবে। যে সব বেতনভোগী জিএসটি-নথিভুক্ত নন, তাঁদের এই কর দিতে হবে না।
পরোক্ষ করের কেন্দ্রীয় পর্ষদ অনুযায়ী যে-সব ব্যবসায়িক উদ্যোগের পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণ বছরে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি, তাদেরই জিএসটি-র অধীনে নথিভুক্ত করতে হবে। যাদের টার্নওভার এর চেয়ে কম, তারাও ইচ্ছে করলে নিজেদের জিএসটির অধীনে স্বেচ্ছায় নথিভুক্ত করতে পারেন।
গত ২৯ জুন জিএসটি পর্ষদের ৪৭তম বৈঠকে বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার ওপর কর বসানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৮ জুলাই থেকে লাগু সেই সিদ্ধান্তের মধ্যেই এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
নতুন করে করের আওতায় আনা এই ধরনের সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে আগে থেকে প্যাকেট করা খাদ্য-সামগ্রী, হাসপাতালের শয্যা ইত্যাদি।
ভুয়ো দাবিটি নীচে দেখে নিতে পারেন। এটি টুইট করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলে এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অন্যরা সেই টুইটটি ছড়িয়ে দিতে থাকেন। গোখলের টুইটে ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, সব ধরনের ভাড়াটেদেরই এবার থেকে জিএসটি দিতে হবে, যেটা বিভ্রান্তিকর।
অন্যরাও এটা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
আরও পড়ুন: ভারতে সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবিতে অম্বেডকরের নামে ছড়ানো উদ্ধৃতিটি ভুয়ো
তথ্য যাচাই
জিএসটি পর্ষদের ৪৭তম বৈঠকে সেই সব পণ্য ও পরিষেবার ওপর থেকে কর-ছাড় রদ করে দেওয়া হয়, যেগুলো জিএসটির অধীনে নথিভুক্ত—যেমন নথিভুক্তদের ভাড়া দেওয়া আবাসিক সম্পত্তিl ১৮ জুলাই থেকেই এই বন্দোবস্ত চালুও হয়ে যায়।
বেতনভোগীরা যেহেতু এই নথিভুক্তদের মধ্যে পড়েন না, তাই তাঁদের জন্য এই নতুন ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়, যা নাকি এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে যে-ভাড়াটে জিএসটি-র অধীনে নথিভুক্ত, তাকেই কেবল কর দিতে হবে, সম্পত্তির মালিককে নয়।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং আর্থিক বিষয়ে একাধিক বইয়ের লেখক বিশাল ঠাকুর এই প্রসঙ্গে বুমকে জানান, "জিএসটি সাধারণত কোনও পণ্য বা পরিষেবার সরবরাহকারীদের দিতে হয়, উপভোক্তাদের নয়। কিন্তু জিএসটি-নথিভুক্তদের আবাসিক সম্পত্তির ওপর ধার্য করা না দেওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে, যেখানে সম্পত্তির মালিক কোনও কর দেবে না এবং ব্যবসায়ীরা কেবল ভাড়া দিয়েই রেহাই পেয়ে যাবে"!
যাঁরা নিজেদের বাড়িতে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন, জিএসটি নথিভুক্ত হলে তাঁদেরও জিএসটি দিতে হবে, যদিও তাঁরা সেই করকে তাঁদের ব্যবসার 'ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট' হিসাবে দেখাতে পারবেন। যাঁরা নথিভুক্ত নন, তাঁদের এই কর দিতে হবে না।
এই বিষয়ে যে বিভ্রান্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হচ্ছে তার বিষয়ে সরকারের প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর তথ্য-যাচাই হ্যান্ডেল থেকেও পর্দাফাঁস করা হয়েছে।
জিএসটি-র সর্বশেষ সংস্করণ নিয়ে রকমারি বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, যার অনেকগুলিই ভুয়ো বলে শনাক্ত করেছে বুম।
কোনও-কোনও সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে এবার থেকে শ্মশানে এবং কবরস্থানেও জিএসটি দিতে হবে।
এটা সম্পূর্ণ অসত্য, যেমন অসত্য এই দাবি যে, এবার থেকে গণ-শৌচাগারে গেলেও জিএসটি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: নীতি আয়োগ ২০২১ রিপোর্টে "বাণিজ্য পরিবেশ" ক্ষেত্রে প্রথম নয় পশ্চিমবঙ্গ