পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত মহিলার ভিডিও বাংলাদেশের ঘটনা দাবি করে ভাইরাল
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বুমকে নিশ্চিত করে জানায় ঘটনাটি জয়নগরের বকুলতলা এলাকার এবং আক্রান্ত মহিলা ও অভিযুক্ত উভয়ই মুসলিম।



সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) গুরুতর ভাবে জখম এক রক্তাক্ত মহিলার ভয়াবহ একটি ভিডিও শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে সেটিতে বাংলাদেশে (Bangladesh) নির্যাতিত এক মহিলাকে (woman) দেখা যাচ্ছে। কিছু ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেছেন মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন।
বুম দেখে ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার বকুলতলা থানার জয়নগর এলাকার যেখানে ২১ জানুয়ারি রাতে লতিফা খাতুন নামের এক মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। লতিফা পরে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।
বকুলতলা পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার এসআই প্রদীপ কুমার রায় বুমকে নিশ্চিত করে বলেন ঘটনাটি বকুলতলার, বাংলাদেশের নয়। এছাড়াও, তিনি সমস্ত সাম্প্রদায়িক দাবি খণ্ডন করে জানান নিহত মহিলা এবং অভিযুক্ত দুজনেই মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
ভাইরাল ভিডিওতে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা আহত মহিলাকে অতি কষ্টে আশেপাশের ভিড় থেকে আশা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। তিনি কোথা থেকে এসেছেন প্রশ্নের উত্তরে মহিলা নিজেকে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বলে জানান। তবে, মুখের অংশে জখম থাকার ফলে মহিলার বাকি কথা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না।
বুম ভিডিওটির স্পর্শকাতর বিষয়বস্তুর জন্য প্রতিবেদনে পোস্টটি অন্তর্ভুক্ত করেনি।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেন, "ইন্না-লিল্লাহ কুমিল্লায় রাস্তায় মেরে ঠোট জিহবা কাটা বিবস্ত্র–এক নারী! মা!বোন! নিকৃষ্টতর মানুষের কাজ এইগুলা। প্রতিদিন রাত হলে প্রতিটি মানুষের উপরে নেমে আসে এক একটা আজাব।"

একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য এক ব্যক্তি লেখেন, "আইয়্যেমে জাহেলিয়া যুগকে হার মানিয়েছে,দিনের শুরুটাই হয় এখন লা*শ দিয়ে আর শেষটা হয় ধ*র্ষ*ণ দিয়ে।"
তথ্য যাচাই: পশ্চিমবঙ্গের ভিডিও, বাংলাদেশের নয়
ভাইরাল ভিডিওতে আক্রান্ত মহিলাকে বলতে শোনা যায় তিনি মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। এই সুত্রধরে, গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা বর্তমান পত্রিকার জানুয়ারি ২৩, ২০২৫ তারিখের একটি প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদন অনুসারে, এক স্থানীয় ই-রিকশা চালক আক্রান্ত মহিলাকে বকুলতলার আনন্দপুর রথতলা এলাকায় একটি ইটের রাস্তায় পরে থাকতে দেখে জানুয়ারির ২১ তারিখ রাতে। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা যখন তাকে উদ্ধার করে সেই সময় মহিলা জীবিত থাকলেও হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি প্রাণ হারান।
এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ভিশন ১৮ বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি যখন মহিলাকে দেখেন তখন আক্রান্ত মহিলা জীবিত ছিলেন।
সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এবং জি নিউজও এই ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিস্তারিত ঘটনা ও পুলিশের বয়ান
আমরা আরও একবার কিওয়ার্ড সার্চ করে জানুয়ারি ২৮, ২০২৫ তারিখের কিছু সংবাদ প্রতিবেদন পাই যেখানে নিহত মহিলাকে মুর্শিদাবাদের লতিফা খাতুন এবং অভিযুক্তকে গিয়াসউদ্দিন গাজী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে পুলিশ গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে, গিয়াসউদ্দিন স্বীকার করেছে সে খুন করার অভিপ্রায় নিয়ে লতিফাকে মুর্শিদাবাদ থেকে নিজের বাড়ি বকুলতলার মনিরতটে ডেকে পাঠায়।
পরে, কুলতলি থানা এলাকা থেকে পুলিশ গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতার করে এবং ২৮ জানুয়ারি বারুইপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে, জানায় সংবাদ প্রতিদিন।
এরপর, আমরা বকুলতলা থানার ওসি সিনিয়র ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। রায় বুমকে নিশ্চিত করেছেন ভাইরাল ভিডিওতে খুনের শিকার লতিফা খাতুনকে তার অন্তিম মুহূর্তে দেখা যায়। রায় বুমকে বলেন, "বকুলতলায় ঘটনাটি ঘটেছে। ভুক্তভোগী লতিফা খাতুনকে পারিবারিক সমস্যার কারণে মারধর করা হয়। অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন গাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই।"
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: শ্রীজিৎ দাস