বাইকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত কোভিড রোগী নিয়ে যাওয়ার ছবিটি বাংলাদেশের
বুম দেখে ছবিটি বাংলাদেশের বরিশালের যখন এক ব্যক্তি অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত তাঁর মাকে বাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এক ব্যক্তির অক্সিজেন সিলিন্ডার (oxygen cylinder) সমেত এক বয়স্ক মহিলাকে বাইকের (bike) পিছনে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ছবি মিথ্যে দাবি সহ ছড়াচ্ছে যে ভারতে কোভিড-১৯-এর (Covid-19) দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হওয়ার পর এই ছবিটি ভারতের নিদারুন পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।
বুম যাচাই করে দেখেছে ছবিটি বাংলাদেশের বরিশালের। এক ভদ্রলোক তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ মাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে কোভিড-১৯'এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতসহ অন্যান্য রাজ্য প্রবল ভাবে আক্রান্ত। প্রতি দিন অভূতপূর্ব হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তার ফলে সরকার ৯টি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে বাকি শিল্প ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সরবরাহ আপাতত নিষিদ্ধ করেছে।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, 'আত্মনির্ভর ভারত' বা স্বনির্ভর ভারত।
ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হয়। সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয় 'আমরা যেখানে রয়েছি'।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: গণমাধ্যমের ভুল দাবি পরিয়ায়ী নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে প্রশংসা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত হয়েছে যে ছবিটি ভারতের নয়— বাংলাদেশের। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একটি বোর্ডে 'বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ' কথাটি বাংলায় লেখা রয়েছে। বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের একটি কেন্দ্রীয় শহর।
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাদামী রঙের দেওয়াল গুগুল ম্যাপে দেখা যাবে এখনে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে, এই একই ছবি ১৮ এপ্রিল ২০২১ বাংলাদেশ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয় যে, তৌহিদ টুটুল নামে এক সিটি পুলিশ ট্রাফিক সার্জেন্ট ছবিটি শনিবার ফেসবুকে শেয়ার করেন। আমরা একই ছবি টুটুলের ফেসবুক টাইমলাইনে দেখতে পাই।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রথম আলো-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সারাংশ, "বাইকে চড়ে যিনি যাচ্ছিলেন, তাঁকে জিয়াউল হাসান বলে সনাক্ত করা হয়েছে। তিনি এক জন ব্যাঙ্ক কর্মী। তিনি ঝালকাঠির নালছিটি পৌরসভার অন্তর্গত সূর্যপাশা অঞ্চলে থাকেন। তাঁর মা ৫০ বছরের রেহানা পারভিন দশ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। রেহানা নলছিটি বন্দর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা করে জানা যায় যে, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। তাঁর অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল এবং তাঁর মাকে বাড়িতেই চিকিৎসা করানোর জন্য জিয়াউল প্রথমে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে আনেন। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং তাঁকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। জিয়াউল তাঁর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্য কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তখন তিনি একটি গামছায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে বাইকের পিছনে বসিয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করতে নিয়ে যান। তাঁর বাড়ি থেকে ওই হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিমি।"
তৌহিদ টুটুল হিরণ পয়েন্ট অঞ্চলে ডিউটি করছিলেন সেসময় ওই এলাকা দিয়ে জিয়াউল তাঁর মাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের যাওয়ার পথ করে দেন। তিনি এবং অন্যান্য পথচারীরা সেই সময় ছবিটি তোলেন। পরে ছবিটি ভাইরাল হয়।
একই খবর বাংলা গণমাধ্যম সমকালে প্রকাশিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ৭, ১৮,৯৫০ জন। ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে কোভিড-১৯'র দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলানোর জন্য বাংলাদেশে কঠোর লকডাউন করা হয় এবং পরে তা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুজরাতে কোভিড সংক্রমণে মৃতদের সৎকার বলে ভাইরাল করোনা অতিমারির আগের ছবি