না, এটি কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের ভারতের বায়ুসেনার উদ্ধারের ছবি নয়
বুম দেখে ভাইরাল ছবিটি ২০১৩ সালে ফিলিপিন্সে এক শক্তিশালী ঝড় আছড়ে পড়ার পর মার্কিন বিমান বাহিনীর উদ্ধারকাজের দৃশ্য।
তালিবানরা (Taliban) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল (Kabul) দখল করে নিলে ভারতীয় বায়ুসেনা (Indian Air Force) ৮০০ জনকে উদ্ধার করেছে দাবি করে একটি বিমানে এক দল মানুষের ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
খবরে প্রকাশ, ভারী মালবাহী বিমান আইএফসি-১৭ ব্যবহার করে ভারতীয়দের দ্বিতীয় দলটিকে কাবুল থেকে তুলে আনে ভারত। তার আগে, ১৬ অগস্ট, প্রায় ২৮ ঘন্টা ধরে আলোচনা চলে।বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক টুইটে লেখেন, ""বর্তমান পরিস্থিতির কারণে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে কাবুলে আমাদের রাষ্ট্রদূত ও তাঁর ভারতীয় কর্মীরা সত্বর ভারতে ফিরে আসবেন। হিন্দুস্থান টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয় আফগানিস্তানে ভারতের রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র ট্যান্ডন প্রথম উড়ানে ছিলেন। সেই বিমানে ছিলেন আরও ১২০ কুটনীতিক, সরকারি আধিকারিক ও অসামরিক মানুষজন।
যদিও মার্কিন ও ভারতীয় বায়ুসেনা বেসামরিক মানুষজনকে বিমানের সাহায্যে সেখান থেকে তুলে আনে। যে ছবিটি অনলাইনে শেয়ার করা হচ্ছে, সেটি কিন্তু পুরনো ও আফগানিস্তানের নয়।
আফগানিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামি মিলিশিয়া তালিবান, ১৫ অগস্ট, মার্কিন সেনার পূর্ণ অপসারণের দু'সপ্তাহ আগেই, দেশটি পুনর্দখল করে। খবর অনুযায়ী, তালিবান কাবুলে রাষ্ট্রপতি ভবন কব্জা করার আগেই, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "যাঁরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদের জানানো হচ্ছে যে, ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে ছবিটিতে। সি-১৭ গ্লোবমাস্টার কাবুল থেকে ৮০০ ব্যক্তিকে তুলে আনে... সম্ভবত, এটা একটা নতুন রেকর্ড।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনটি: जिन्हें नहीं समझ आ रहा वो जान लें यह भारतीय वायुसेना के C-17 ग्लोब मास्टर जहाज के अंदर का दृश्य है। C-17 ग्लोब मास्टर जिसमें 800 लोगों को एक साथ काबुल से एयरलिफ्ट किया गया है.... सम्भवतः एक नया रिकॉर्ड होगा। मोदी है तो मुमकिन है)
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একই দাবিসমেত ছবিটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
আর্কাইভের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: লন্ডনের পথনাটিকার ভিডিওকে তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানের দৃশ্য বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম দেখে নভেম্বর ২০১৩তে, এক বিধ্বংসী ঝড়ের পর, মার্কিন বায়ুসেনাকে উদ্ধার কাজ করতে দেখা যাচ্ছে ছবিটিতে। এয়ার ফোর্স ম্যাগাজিন পত্রিকার এপ্রিল ২০১৪ সংস্করণে ওই ছবিটি ছাপা হয়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়. "ম্যানিলায় উদ্ধার কাজ চলার সময়, ট্যাকলোবান-এ প্রায় ৬৭০ জন শরণার্থী একটি সি-১৭ বিমানে উঠে পড়ে। 'অপারেশন দায়ামান'-এর জন্য হাওয়াইয়ের জেবি পার্ল হারবার-হিকাম থেকে বিমানটি ও তার কর্মীদের আনা হয়।"
তাছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে, আমরা ওই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনার ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। সেটির ক্যাপশনের এক অংশে বলা হয়, "১৭ নভেম্বর, ২০১৩'য়, সুপার টাইফুন হাইয়ান ফিলিপিন্সে আঘাত করে। তারপর দুর্গতদের ম্যানিলায় স্থানান্তরিত করার আগে, ৬৭০ জনেরও বেশি ট্যাকলোবান বাসিন্দা সি-১৭ গ্লোবমাস্টার-৩ বিমানটিতে উঠে পড়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়, মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া ও উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য 'অপারেশন দায়ামান' শুরু হয়। তার জন্য, সি-১৭ বিমানটিকে হাওয়াইয়ের যৌথ বিমান ঘাঁটি পার্ল হারবার-হিকামের ৫৩৫ নং 'এয়ারলিফ্ট স্কোয়াড্রন' থেকে ফিলিপিন্সের ক্লার্ক বিমান ঘাঁটিতে আনা হয়। যাত্রীদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া ছাড়াও, বৈমানিকরা ১০০,০০০ পাউন্ড সামগ্রীও পৌঁছে দিতে সফল হন।"
ওই ঘটনার আরও ছবি এখানে দেখা যাবে। ১৬ অগস্ট ২০২১-এ 'ডেইলি মেইল'-এ প্রকাশিত একটি ছবি দেখতে পাই আমরা। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "২০১৩ তে, টাইফুন বিধ্বস্ত ফিলিপিন্সে দুর্গতদের উদ্ধার করতে মার্কিন বিমান বাহিনী, একটি সি-১৭ বিমানে ৬৭০ জনকে নিয়ে যায়। রবিবার, কাবুলে ৮০০ জনকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় এক নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।"
খবরে প্রকাশ, নভেম্বর ২০১৩'য় এক শক্তিশালী টাইফুন ফিলিপিন্সে আঘাত হানে। তার ফলে, প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যান ও ৬,০০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে যুদ্ধবিরতি ঘিরে নাগরিকদের আনন্দ জোড়া হল তালিবানি দখলের সাথে