না, গোহত্যার প্রতিবাদ করা ব্যক্তি কাশ্মীরি পণ্ডিত নন
ভিডিওতে যাঁকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, বুম তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
![না, গোহত্যার প্রতিবাদ করা ব্যক্তি কাশ্মীরি পণ্ডিত নন না, গোহত্যার প্রতিবাদ করা ব্যক্তি কাশ্মীরি পণ্ডিত নন](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/09/22/958141-958041-01-1.webp)
একটি ভিডিওতে, খোলা জায়গায় গোহত্যার বিরোধিতা করে একদল লোকের সঙ্গে বচসা করতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তিকে। ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ওই ব্যক্তি হলেন একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত (Kashmiri Pandit), যিনি মুসলমানদের (Muslims) গরু কুরবানি করা থেকে বিরত করেন।
ভিডিওতে যাঁকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, বুম তাঁকে খুঁজে বার করতে সক্ষম হয়। দেখা যায়, তিনি হলেন শ্রীনগরে বসবাসকারী একজন কাশ্মীরি মুসলমান। তাছাড়া, এ বছর জুলাই মাসে, ইদ- অল-আধা'র সময় ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়। ভিডিওতে যে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে, তাতে সাম্প্রদায়িকতার লেশ মাত্র নেই।
দক্ষিণপন্থী ফেসবুক পেজ ও টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভিডিওটি ব্যাপক হারে শেয়ার করা হচ্ছে। এবং দাবি করা হচ্ছে যে, ভিডিওটিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত।
ভিডিওটিতে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "মৌলবী সাহেব, আমি দেখবো আপনি এই বার কী করে এখানে ২০-২২টা গরু বলি দেন। এটা কি কসাইখানা? এর জন্য কি আপনার লাইসেন্স আছে? মৌলবী সাহেব, আমি আপনাকে বলছি, আমার একটা সমস্যা আছে। আমি আপনাকে এখানে ২০-২২টা গরু কাটতে দেব না। রক্ত ছড়িয়ে আপনারা চলে যাওয়ার পর, জায়গাটা দুর্গন্ধে ভরে যায়।"
ভিডিওটির শেষের দিকে, ওই ব্যক্তি ক্যামেরাটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন। ফলে তাঁর মুখটা দেখা যায়।
একটি ফেসবুক পোস্টে দেওয়া ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "শেষ পর্যন্ত, একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত, শান্তিপ্রিয়দের সামনে রুথে দাঁড়ান ও গরু বলি দেওয়া আটকান। আসুন আমরা তাঁর সমর্থনে দাঁড়াই।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: आखिर अकेला कश्मीरी पंडित शांतिदूतों के सामने छाती तान कर कहने लगा अब यहां गाय काटने नहीं दूंगा आइए हम सब भी मिलकर उनका साथ दें)
ভিডিওটি এখানে দেখুন।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনের রানিকে আরএসএস সদস্যরা কুর্নিশ করছে? ভুয়ো বদলানো ছবি ভাইরাল
একই দাবি সমেত, ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক পেজ ও টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভাইরাল হয়েছে।
একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত কি মুসলমানদের গরু বলি দেওয়া থেকে বিরত করেন?
একাধিক ফেসবুক পেজে ওই ভিডিওটি সম্পর্কে 'রিপ্লাই'গুলি আমরা খুঁটিয়ে দেখি। তার মধ্যে একটি পাঠিয়ে ছিলেন আরিফ জান নামের এক ব্যক্তি। তিনি আবেদন করেন যে, বিষয়টিকে যেন রাজনৈতিক আকার না দেওয়া হয়। আমরা জান'র ফেসবুক পেজ দেখি। ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর করা কয়েকটি পোস্টের মধ্যে ওই ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশটও ছিল।
পোস্টটির সঙ্গে দেওয়া এক লম্বা ক্যাপশনে বলা হয়, "ঘন্টাঘর কাশ্মীর ও আরও কিছু সমাজ মাধ্যম সাইট এই ভিডিওটিকে ভাইরাল করেছে এবং বিষয়টিকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমি ওই জায়গায়টিতে বলি দেওয়ার বিরোধিতা করছিলাম। ইদের দিন পশু বলি দেওয়ার বিরোধিতা করিনি। দারুল-উলুম যে জায়গাটি নির্বাচন করে, সেটা আমার রান্নাঘরের দেওয়ালের কাছে। রক্তের গন্ধের ব্যাপারটা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ, ২০ থেকে ৩০ টা প্রাণী বলি দেওয়ার কথা ছিল। যে কেউ বুঝবেন যে, গরমের সময় ওই গন্ধকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। মসজিদ কমিটি সমস্যাটির মীমাংসা করে দেয়। এখন আর কোনও সমস্যা নেই। আমি যদি কোনও রকম উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকি, তাহলে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।"
পোস্টটি নীচে দেখুন।
ওই পোস্টে যে স্ক্রিনশটটি শেয়ার করা হয়, সেটি ওই ভিডিও থেকেই নেওয়া। জম্মু ও কাশ্মীরের গন্দরবল'র বাসিন্দা জান'র সঙ্গে বুম হোয়াটসঅ্যাপ ও ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। জান বুমকে জানান যে, উনি একজন মুসলমান, এবং ভিডিওটি এ বছর জুলাই মাসে রেকর্ড করা হয়।
"এবছর ইদ-অল-আধা'র সময় তোলা হয় ভিডিওটি। বিষয়টা মূলতঃ ছিল হাইজিন সংক্রান্ত। আমার বাড়ি আর দারুল উলুমের মধ্যে একই দেওয়াল রয়েছে। লকডাউনের কারণে এখানে সবই বন্ধ। তাঁরা বিগত দু'বছর ধরে ওইখানেই পশু বলি দিচ্ছিলেন। আর আমি তাঁদের বারণ করছিলাম। পশু বলি দেওয়া নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু পড়ে থাকা রক্ত আর দেহাংশ দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে," বুমকে বলেন জান।
জান বলেন, এ বছরও যখন বলি দেওয়ার জন্য লোকে এখানে আসে, তখন উনি বাধা দেন ও ভিডিওটি রেকর্ড করেন। "ওই দিনই মসজিদ কমিটি সমস্যাটির মীমাংসা করে দেয়। এবং বলির স্থানটি আমার বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে মসজিদের কম্পাউন্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়," বলেন জান।
উনি বলেন পশু বলি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। তাঁর বক্তব্য ছিল, বলির জায়গাটি নিয়ে। কারণ হাইজিন সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি আফগান শিল্পী শামসিয়া হাসানির আঁকা নয়