বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে পুরনো প্রতিবাদ মিছিলের ভিডিও ছড়াল
বুম দেখে ভিডিওটি ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের বিএনপির ডাকা একটি অবরোধের সময় তোলা হয়
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দেখা যায় যেখানে এক দল দুষ্কৃতীকে দেখা যায় ভাঙচুর চালাতে এবং প্রতিবাদ মিছিলে হাতে মশাল (Torch Procession) নিয়ে হাঁটতে। দাবি করা হয় এই দৃশ্য বাংলাদেশের ঢাকা (Bangladesh's Dhaka) শহরের এবং মানুষকে অনুরোধ করা হয় ঘর থেকে না বেরোতে কারণ সেখানকার অবস্থা এখন শোচনীয়।
বুম যাচাই করে দেখে পোস্ট করা ভিডিও সাম্প্রতিক নয় এবং এটি আসলে বাংলাদেশের সিলেট শহরের, ঢাকার নয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চম বারের জন্য নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় নির্বাচনের পরে। কিন্তু তার মধ্যেই হট্টগোল এবং হিংসাত্বক প্রতিবাদের দৃশ্য দেখা যায় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে। এবারের বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বলেও জানা যায়। বুম বাংলাদেশ এখনও অব্দি কেন্দ্রীয় নির্বাচন সক্রান্ত ৬টির বেশি তথ্য যাচাই করেছে যার মধ্যে দেখা যায় কয়েকটি ডীপফেক ভিডিও, ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মিথ্যা প্রচার, একটি পার্টির নির্বাচন বর্জন করার ভুয়ো দাবি, ইত্যাদি।
এর মধ্যেই উঠে এলো এই ভিডিও যেখানে দাবি করা হয় এটি ঢাকার দৃশ্য। একজন ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসেবে লেখেন,"ঢাকাবাসী কেউ ঘর থেকে বের হবেন না ঢাকার অবস্থা খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি খারাপ।"
এই ভিডিওর আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওর অংশগুলি রিভার্স সার্চ করায় প্রথমেই ২৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের একটি এক্সের (প্রাক্তন টুইটার) পোস্ট খুঁজে পায় যেখানে এই ভিডিওর দৃশ্যগুলি উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয় এটি বাংলাদেশের সিলেট শহরের দৃশ্য যেখানে একটি অবরোধকে সমর্থন জানিয়ে একটি মশাল মিছিল করা হয় এবং বহু গাড়ির উপর ভাঙচুর চালানো হয়।
এই টুইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই সূত্র ধরে একটি কিওয়ার্ড সার্চ করায় আমরা বাংলাদেশের দ্য ডেলি স্টার সংবাদমাধ্যমের ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে গোটা ঘটনাটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও, আমরা লক্ষ্য করি ভাইরাল ভিডিওতে যে অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়, সেই একই অ্যাম্বুলেন্স উপস্থিত রয়েছে প্রতিবেদনের ছবিগুলিতে।
এই প্রতিবেদন দেখা যাবে এখানে।
এরপর আমরা অ্যাম্বুলেন্সে উপস্থিত নম্বরে যোগাযোগ করায় কথা বলি মহম্মদ সাহিল আহমেদের সাথে যিনি সেদিন ওই অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। সাহিল আহমেদ বুমকে বলেন,"হ্যাঁ, সেদিন আমি নিজেই এই গাড়িটি চালাচ্ছিলাম। গাড়ির উপর ভাঙচুর চালানো হয় এবং গাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়, ভিতরে এবং নিচে। আমি যেহেতু দমকল দপ্তর তরফে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম, আগুনটা নেভাতে সফল হই।
"এটি জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এবং তখন গাড়ির ভেতরে তাহমিনা নামক একজন মহিলা ডাক্তার ছিলেন যখন দুষ্কৃতীরা গাড়িতে আক্রমণ চালায়," সাহিল আরও বলেন।আমরা লক্ষ্য করি অ্যাম্বুলেন্স চালকের এই তথ্যের বেশ কিছু অংশ দ্য ডেলি স্টারের প্রতিবেদনেও দেখা যায়।
এছাড়াও ডেলি সিলেট মিরর সংবাদমাধ্যমের ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের প্রতিবেদনও আমরা খুঁজে পাই যেখানে এই ঘটনার উল্লেখ দেখা যায় এবং ভিডিওর সহ একই অ্যাম্বুলেন্সটিও দেখা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয় এটি প্রতিবেদন প্রকাশের দিনেরই ঘটনা।
প্রতিবেদনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা ভাইরাল ভিডিওর অংশ প্রথম আলো সংবাদমাধ্যমের ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও খুঁজে পাই যার থেকে বোঝা যায় এটি ভাইরাল ভিডিওরই একটি দীর্ঘ সংস্করণ।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।